ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লেডি লাজারাস

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১৩ মে ২০২২

লেডি লাজারাস

আবার করলাম সেই একই কাজ প্রতি দশ বছরে একবার করে মরে গিয়ে বেঁচে ওঠার কাজটা সামাল দিতে শিখেছি ভাল করে এ এক অলৌকিক ঘটনা, বড়ই জীবন্ত। আমার ত্বক নাৎসীদের টেবিলল্যাম্পের ঢাকনার মতো উজ্জ্বল, আমার ডান পা কাগজ চাপা দেয়া পাথরের মতো ভারী, আমার মুখাবয়ব ভাবলেশহীন ইহুদীদের সূক্ষ্ম বুনন লিনেন কাপড়ের মতো। ন্যাপকিনের মতো ত্বক ছিলে ফেলো তুমি যে আমার শত্রু। আমি কি ভীতসন্ত্রস্ত করেছি? এই যে আমার বিকট নাক, চোখের গর্ত ও আর পূর্ণ দাঁতের সারি? নিশ্বাসে যে টক গন্ধ পাও তা উধাও হবে একদিনে। কবরের গুহা যে খেয়ে ফেলেছে শরীরের মাংস খুব শীঘ্র ফিরিয়ে দেবে সব, আর আমি হবো হাস্যোজ্জল রমণী আমার বয়স মাত্র তিরিশ, আর বিড়ালের মত আমাকে মরতে হবে নয়বার। এই নিয়ে হলো তৃতীয়বার কী এক উটকো কাজ ধ্বংস করে একেকটা দশক। দেখো অযুত বাতি জ্বলে চিনাবাদাম চিবুতে চিবুতে ভিড় আর ধাক্কাধাক্কি করে দেখতে আসছে খুলে যাচ্ছে কাপড় নর্তকীর শরীর থেকে সমবেত নরনারী দেখে যাও এই আমার হাত, হাঁটু আমি অস্থি-চর্মসার ছাড়া আর কিছু নই তবু আমি সেই একই চিরচেনা রমণী প্রথম ঘটেছিলো যখন এরকম ঘটনা তখন আমার বয়স ছিলো দশ। সেটা ছিলো দূর্ঘটনা। দ্বিতীয়বার আমি সত্যি মরতে চেয়েছিলাম চিরস্থায়ী যেন আর কোন ফিরে আসা না থাকে। আমি আবদ্ধ হয়ে দোল খাই সাগরের ঝিনুকের মতো তারা শুধু ডাকে আমি যেন ফিরে আসি জীবনে আর শরীর থেকে পোকাগুলো টেনে তোলে আঠালো মুক্তার মতো। মরে যাওয়া একটা শিল্প অন্যান্য শিল্পকলার মতো আর এই কাজ আমি করতে জানি আশাতীত পারঙ্গমতার সঙ্গে। আমি এমন ভাবে এ কাজটা করি যেন অনুভব করতে পারি কতোটা যন্ত্রণা নরকে এমন ভাবে করি যেন অনুভব করি বাস্তবতা। আমি জানি তোমরা বলতে পারো এটাতো আমার কপালে লেখা। এমন একটা প্রকোষ্ঠে মরণ কাজ ঘটানো জন্য যথেষ্ট সহজ এখানে সহজে কাজটা করা যায়, এখানে অবস্থান, তারপর নাটকের মঞ্চে পুনরুত্থান, ফিরে আসা প্রকাশ্য দিবালোকে। একই মুখাবয়ব নিয়ে ঠিক একই জায়গায়, একই পোশাকে। আনন্দে উদ্বেলিত মানুষের উল্লাস: এতো বড়ো অলৌকিক ঘটনা। এটাই আমাকে উদ্বেলিত করে এখানে মূল্য দিতে হবে আমার ক্ষতগুলো চাক্ষুষ দেখার জন্য মূল্য দিতে হবে হৃদয়ের শব্দ শোনার জন্য এই ভাবেই তো বেশ চলবে। আর এখানেও মূল্য দিতে হবে, বড় বেশি মূল্য একটা শব্দ বা স্পর্শের জন্য অথবা তুচ্ছ একবিন্দু রক্তের জন্য। অথবা আমার একটুকরা চুলের জন্য বা কাপড়ের জন্য। সুতরাং, চিকিৎসক মহাশয় সুতরাং, শত্রু মহাশয়। আমি তোমার শিল্প আমি তোমার মূল্যবান কিছু। যেন এক পুতলী নিখাদ সোনার। যে একটা চিৎকারে গলে যায়। আমি পাশ ফিরি এবং পুড়ি। ভেবো না আমি তোমার উদ্বেগ বুঝি না। সব পুড়ে ভস্ম তুমি তাতে গুঁতো দিলে, নাড়া দিলে। মাংস, হাড়- গোঁড়, কোন কিছুর আর নেই অবশেষ একটা আস্ত সাবান, একটা বিয়ের আংটি, স্বর্ণ দিয়ে মোড়া। হে ক্ষমতাধর পুরুষ-প্রভু, হে ইবলিশ সাবধান! একদম সাবধান! ভস্মের ভেতর থেকে জেগে উঠবো লাল চুল মাথায় আর পুরুষ মানুষগুলো খাবো বাতাসের মতো।
×