জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশজুড়ে চলমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। সোমবার তিনি প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের দফতরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমনাও পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানা গেছে। খবর ডেইলি মিররের। শ্রীলঙ্কার দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার মাহিন্দা রাজাপাকসের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। বৈঠকে দেশের বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করতে নিজের বড় ভাইকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি। এই অনুরোধ আমলে নিয়েই সোমবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন মাহিন্দা। মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের ফলে সর্বদলীয় সরকার গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে, তা আরও গতি পেল।
এদিকে সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট তাকে সর্বদলীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। করোনা মহামারী, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিপুল বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারী অব্যবস্থাপনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা।
পাশাপাশি, বিদেশী মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ার কারণে ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সঙ্কট। মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সব সদস্যকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। নিজেদের পদ ধরে থাকেন কেবল প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। কিন্তু তাতে কমছিল না বিক্ষোভ। এদিকে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা শ্রীলঙ্কার সরকারকে শর্ত দিয়েছিল, দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন টেম্পল ট্রির ফটকের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এ সময় মাহিন্দার বেশ কয়েকজন সমর্থক তাদের ওপর হামলা চালান। এতে আহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
বাসভবনে আগুন, সংঘর্ষে হত ২ ॥ শান্তিপূর্ণ পর্যায় থেকে ক্রমশ সহিংস রূপ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকার পতন আন্দোলন। সোমবার দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবনসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে কলম্বোতে এমপিসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।
দেশটির দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিররের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার পরে শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরুনেঙ্গালায় মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকরীরা। একই দিন দেশটির সাবেক মন্ত্রী জর্জস্টোন ফেরনান্দো, এমপি সনাথ নিশান্থা, এমপি রমেশ পাথিরানা, এমপি মাহিপালা হেরাথ, এমপি থিসা কুতিয়ারাচ্চি, এমপি নিমল লাঞ্জা ও কলম্বোর সংলগ্ন উপশহর মোরাতুয়ার মেয়র সমন লাল ফেরনান্দোর বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এছাড়া রাজাপাকসে ভাইদের রাজনৈতিক দল পোদুজানা পেরুমুনার প্রধান কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ইন্টার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফেডারেশনও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে দৈনিক মিরর।
