ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় প্রাচ্যনাটের পুলসিরাত নাটক মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৯ মে ২০২২

শিল্পকলায় প্রাচ্যনাটের পুলসিরাত নাটক মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক ॥ রমজান মাসের কারণে কিছু নীরবতা নেমে এসেছিল রাজধানীর নাট্যমঞ্চে। ঈদ শেষে কেটে গেছে সেই অলসতা। পুনরায় সরব হয়েছে নাট্যাঙ্গন। সেই সরবতাকে সঙ্গী করে রবিবার মঞ্চস্থ হলো নাট্যদল প্রাচ্যনাটের নাটক পুলসিরাত। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। ফিলিস্তিনী লেখক ঘাসান কানাফানি রচিত মেন ইন দ্য সান উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটকটির অনুবাদ করেছেন মাসুমুল আলম। মনিরুল ইসলাম রুবেলের নাট্যরূপে নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। ভাগ্য বিড়ম্বিত তিন ব্যক্তির গল্প উঠে এসেছে নাটকে। আবু কায়েস, আসাদ ও মারওয়ান-নিজেদের ভাগ্যান্বেষণের জন্য ফিলিস্তিন থেকে স্বপ্নের কুয়েতে পাড়ি জমাতে চায়। বয়সে এবং প্রজন্মে আলাদা হলেও এক জায়গায় মিল রয়েছে এই তিনজনের। তারা সবাই বিড়ম্বিত উদ্বাস্তু। তাই আবু কায়েস তার দুই সন্তান ও এক স্ত্রী রেখে বন্ধুর পরামর্শে সচ্ছল জীবনের আকাক্সক্ষা নিয়ে কুয়েত পাড়ি দিতে চায়। তার স্বপ্ন, তার সন্তানেরা স্কুলে পড়াশোনা করতে পারবে। বয়সের কারণেই হোক বা চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যেই হোক- স্বভাবে বেশ নরম ও কিছুটা ভীতু স্বভাবের আবু কায়েস। আর তার ঠিক বিপরীত চরিত্রের আসাদ। বয়সে সে তরুণ। কিছুটা রাগী এবং স্বভাবে বেশ কৌশলী। সে এর আগেও সীমান্ত পার হয়ে অবৈধপথে কুয়েত যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। নিশ্চিত ও উন্নত ভবিষ্যতের চাচাত বোনকে বিয়ে করার স্বপ্ন এবং চাচার কাছে অপমানিত হওয়া তাকে যুগপৎ তাড়িত করে। অন্যদিকে ১৬ বছরের মারওয়ান স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে নিজের পরিবারের দায়িত্বের চাপে পাড়ি দিতে চায় স্বপ্নের কুয়েতে। নিজের বড় ভাই কুয়েত থাকে। সেখানে সে কাজ করে দেশে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাত। কিন্তু বিয়ে করে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তার বাবা সন্তানদের ভরণ-পোষণে অপারগ হয়ে নিজের সচ্ছল জীবনের স্বপ্নপূরণে এক পঙ্গু মহিলাকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। মারওয়ান তাই পরিবারকে বাঁচাতে অর্থ উপার্জনের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিতে চায় কুয়েতে। ঘটনাক্রমে তিনজনই আবুল খাইজুরানের শরণাপন্ন হয়। আবুল খাইজুরান একজন পানিবাহী ট্যাঙ্ক লরির ড্রাইভার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছে। আবার ফিলিস্তিন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। সেখানে একবার আকস্মিক হামলায় সে বোমা বিস্ফোরণের শিকার হয়। এই আবুল খাইজুরান কায়েস, আসাদ আর মারওয়ানকে স্বপ্নের কুয়েত পর্যন্ত নিয়ে যেতে এগিয়ে আসে। বিনিময়ে সে তিনজনের কাছ থেকে দশ দিনার করে নেবে। তার পানিবাহী লরিতে করে সীমান্ত পাড়ি দেবে তিনজনকে নিয়ে। খাইজুরানের জন্য সেটা কোন কষ্টকর কিছু না। আগস্ট মাসের প্রচন্ড গরমে, রোদে পুড়ে মরুভূমির পথে এগিয়ে চলে লরিটি। তিনটি হতভাগ্য বিড়ম্বিত জীবন ছুটে চলে স্বপ্নময় এক নতুন সচ্ছল জীবনের প্রত্যাশায়। পাড়ি দিতে ছুটে চলে এক পুলসিরাত! নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, শাহরিয়ার ফেরদৌস, সাইফুল জার্নাল, মিতুল রহমান, জগন্ময় পাল, মনিরুল ইসলাম, চেতনা রহমান, তানজিকুন, শামীম শ্রাবণ, তৃপ্তি প্রমুখ।
×