ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৯ এপ্রিল ২০২২

ঢাকার দিনরাত

শুক্রবার রাত থেকে উত্তরার একটি বহুতল বিশাল হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছি। এখানে ভর্তি হয়েছে আমার দেড় বছরের নাতনি, স্যালাইন চলছে। ডিহাইড্রেশন অথবা ইউরিন ইনফেকশন সন্দেহে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে আসা এবং জরুরী ভিত্তিতে তাকে ভর্তি করানো। দুদিনে অনেকগুলো টেস্ট করানোর পরও রোগ নির্ণয়ই করতে সমর্থ হলেন না এখানকার চিকিৎসকরা। খুবই হতাশ লাগছে। তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক হলো ভিটামিন ডি-সহ আরও তিনটি টেস্টের ফল আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। প্যাথলজিক্যাল টেস্ট নিয়ে কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছি না। কেননা আমরা কিছুকাল আগের পরীক্ষার ফল থেকে জানি এতটা ভাল অবস্থা নয় শিশুর। এখন কি আবার আইসিসিডিডিআর-বি-তে যাব রক্ত পরীক্ষার জন্য? কোথাও কোন নিশ্চয়তা দেখছি না। এই কথাগুলো লিখে লেখা বন্ধ করে চোখ দিলাম শিশুদের ডায়রিয়ায় ভোগান্তির সর্বশেষ তথ্যের ওপর। খুবই উদ্বেগজনক মনে হলো এই তথ্যগুলো- ঢাকার মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ভর্তি হয় ১৮ হাজার ৪০৫ জন। এক দিনে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৮৩ জন রোগী ভর্তি হয় গত ৪ এপ্রিল। তবে সবাই শিশু নয়, অল্প কিছু প্রাপ্তবয়স্কও আছেন এই রোগীদের ভেতর। দুবছর পর চেনা অবয়বে বর্ষবরণ এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের বড় ঝুঁকি না থাকায় দুবছর ঘরের চৌহদ্দিতে বর্ষবরণ উৎসব করার পর এবারই প্রথম ব্যাপকভাবে মানুষ বর্ষবরণের জন্য ঘরের বাইরে নেমে আসতে পেরেছে। নতুন বছর মানেই নতুন দিনের স্বপ্ন ও আশার বুনন। বাংলা নতুন বছর শুরুর ক্ষণটি বাঙালীর সর্বজনীন উৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণ। ঢাকায় পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় আয়োজন রমনার বটমূলে ছায়ানটের পরিবেশনা। পবিত্র রমজান মাসে এসেছে পহেলা বৈশাখ, তাতে ধার্মিকের ধর্মপালনে কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। উৎসবের শোভাযাত্রাকে যারা হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়ে উৎসব পালনে আগ্রহী মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়, আঘাত হানার হুমকি দেয়, তারা এবার পর্যুদস্ত হয়েছে। বলা চলে গর্তে লুকিয়েছে। পুরনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবার প্রত্যাশায় নববর্ষ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রা সুসার্থক হয়েছে। লোক সংস্কৃতির নানা উপাদান শোভা পেয়েছে শোভাযাত্রায়। মলিনতা মুছে নব আনন্দে জেগে ওঠার প্রত্যয় সাড়ম্বরে প্রোজ্বল হয়ে উঠেছে। নানা স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন, সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় চারশ শোভাযাত্রার আয়োজন এ-সত্যই বলে দেয় বাঙালী নতুন দিনকে কিভাবে বরণ করে নেয়, উৎসবে মেতে ওঠে এবং মর্মে স্বদেশচেতনা ধারণ করে। গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর নেই, করোনায় প্রয়াত হয়েছেন, কিন্তু তার হাতে গড়া ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী যথানিয়মে বর্ষবরণের উপভোগ্য আয়োজন করেছে। ঢাকায় চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে দুটো কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০ নবেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে। তবে বিগত এক দশক ধরে বেশ অনেক কটি জেলা এবং উপজেলা সদরে পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ আয়োজিত হওয়ায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাংলাদেশের নবতর সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যেমন এবছর এর মধ্যে আলাদাভাবে খবর করে নিয়েছে নড়াইলের প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে গোটা গ্রাম, এরপর আশপাশে আরও ১০টি গ্রামে বাইসাইকেল চালিয়ে ব্যতিক্রমী এক শোভাযাত্রা বের করে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী, যার বেশিরভাগই মেয়ে। যা হোক, ঢাকায় প্রধান মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বলাবাহুল্য কিছুটা দৃষ্টিকটুও লেগেছে নিরাপত্তার আঙ্গিক ও বাহুল্যে। শোভাযাত্রার অগ্রভাগে অতিরিক্ত সশস্ত্র প্রহরা সংস্কৃতিবান রুচিশীলদের মধ্যে সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। চারুকলার শিল্পী চারু পিন্টুর অভিমত ‘শোভাযাত্রার সিকিউরিটি অবশ্যই দরকার আছে, তবে এভাবে নয়। অন্তত শোভা যাত্রার ব্যানারের সামনে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করা সিকিউরিটির শোভা দিয়ে বাঙালী কি করবে? শোভাযাত্রার সম্মুখভাগ অবশ্যই উন্মুক্ত থাকতে হবে। ব্যানার দেখতে হবে। এভাবে সিকিউরিটি মানে প্রশাসনের দুর্বলতা প্রকাশ করা বলেই আমার মনে হলো। উৎসব যদি উৎসবের মতো না হয় তবে আনন্দ কোথায়? ভয় নিয়ে কি আনন্দ হয়? আপনি তখনই প্রশাসনিক দিক দিয়ে স্মার্ট হবেন যখন অস্ত্র বা পারদর্শিতার প্রদর্শন না করে নির্বিঘেœ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারবেন।’ সাম্প্রতিক ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিপজেটের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের শহর। মনোবিদদের কাছে সিরিয়াল নেয়া দেখলেই বোঝা যায়। আজ থেকে ছয় বছর আগেও যা চিন্তা করা যেত না। স্প্রিংজার নেচার প্রকাশনার বায়োমেড সেন্ট্রাল (বিএমসি) সিরিজের জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন এ্যান্ড নিউট্রিশনের গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে, দেশের শহর এলাকার ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মাঝারি থেকে চরমমাত্রার মানসিক চাপে ভুগছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্যকে এখনও আমাদের দেশে অনেকটাই অবহেলা করা হয়। অথচ একজন ব্যক্তির মানসিক সমস্যা গোটা সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকায় এই তো সেদিন গেল বাসাবাড়ির গ্যাসের সমস্যা। এখন দেখছি গরমে শুরুতেই বিদ্যুতের সরবরাহেও ঘাটতি পড়তে শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের যে এলাকায় এক মাসে একবারও বিদ্যুত যেত না এখন প্রতিদিনই কমপক্ষে একবার করে বিদ্যুত থাকছে না অনেকটা সময়ের জন্য। ঢাকায় সুচারুরূপে বিদ্যুত সরবরাহ বিরাট একটি কাজ। বিপুলসংখ্যক কল-কারখানা, বাণিজ্যিক কার্যালয় এবং আবাসিক ভবনে শতভাগ বিদ্যুতসরবরাহ কম কথা নয়। পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে, এটি অস্বীকার করলে ভুল হবে। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে প্রচ- গরমের ভেতর বিদ্যুতের সাময়িক অনুপস্থিতিও যে বিড়ম্বনাময়, সেটিও বলতে হবে। অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। পত্রিকায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সাক্ষাতকার পড়ছিলাম। তাকে প্রশ্ন করা হয়- বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বহু উদ্যোগ নেয়া হলো, আদালত বহুবার নির্দেশনা দিলেন, কিন্তু নদীর দখল ও দূষণ বন্ধ হলো না কেন? উত্তরে তিনি সোজাসুজি জানালেন- বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবৈধ দখল করা জমি বহুলাংশে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নদীতে দূষণ বন্ধ করা যায়নি। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো- বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গী খাল ও বালু প্রকৃতপক্ষে ‘ইকোলজিক্যালি ডেড’। এ ভয়াবহ মাত্রার দূষণের মূল কারণ, দূষণকারীদের আইনের আওতায় আনা যায়নি অথবা আইনের আওতায় আনা হয়নি। এই চার নদীর দূষণের প্রধান কারণ, বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের স্টর্ম ড্রেনের মাধ্যমে নগরীর খালগুলো দিয়ে সরাসরি নদীতে নির্গত হওয়া। প্রায় দুই কোটি নাগরিকের এই ঢাকা এখন একটি পয়োবর্জ্য বিপর্যস্ত নগরী। এই বিপর্যয়ের মূল কারণ, নগরীতে পর্যাপ্ত সুয়ারেজ লাইন নির্মাণে ঢাকা ওয়াসার অমার্জনীয় ব্যর্থতা। ঢাকা মহানগরী এবং এর আশপাশের শিল্পকারখানাগুলো থেকে অব্যাহতভাবে নদীগুলোতে নানাবিধ কৌশলে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা হয়। জৈব-অজৈব বর্জ্যরে কারণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এমনকি শীতলক্ষ্যা, বংশী, লবণদহ, খীরো নদীও আজ দূষণের কারণে ‘ইকোলজিক্যালি ডেড’-এ পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞের এ অভিমত কি আমরা উপেক্ষা করে যেতে পারব? সুখবর ॥ সাতটি পার্ক উন্মুক্ত ঢাকায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা, মানসিক বিকাশ এবং সব শ্রেণীর মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য উন্মুক্ত স্থান ও পার্কের সঙ্কটের কথা ঢাকাবাসীরা বারবার বলে থাকেন। এমন বাস্তবতায় ঢাকায় সাতটি পার্কের আধুনিকায়ন বড় সুখবর। তিন বছর ধরে আধুনিকায়নের কাজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সাতটি পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শনিবার মোহাম্মদপুরের শ্যামলী পার্কে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এসব পার্ক উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই সাতটি পার্ক হলো শ্যামলী পার্ক, ইকবাল রোড পার্ক, হুমায়ুন রোড পার্ক, বনানী ব্লক-সি পার্ক, বারিধারা পার্ক, বনানী ব্লক-এফ পার্ক, রায়ের বাজার বৈশাখী খেলার মাঠ। স্থানীয় বাসিন্দাদের পার্ক ও মাঠগুলোকে দেখে রাখার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘মাঠগুলোকে আপনারা সন্তানের মতো ভালবাসবেন, এটা আমার অনুরোধ।’ জানা যাচ্ছে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ- সব বয়সের মানুষ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষসহ সবার সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এই পার্ক ও মাঠগুলোর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। মাঠে শিশুদের ও বড়দের আলাদা খেলার জায়গা রয়েছে। নারীদের বসার সুব্যবস্থা, বসে খেলা উপভোগ করার জন্য গ্যালারিও রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এলাকবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের চাহিদার ভিত্তিতেই এসব পার্ক ও মাঠের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি কতটা সঠিক এবং স্থানীয় অধিবাসীরা এসব পার্ক নিযে কি ভাবছেন, এসব কথা নিশ্চয়ই আগামীতে গণমাধ্যমে তুলে আনবেন সাংবাদিকরা। আপাতত আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেই পারি। তবে উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে এসব পার্ক ও মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি করার মেয়রের ইতিবাচক নির্দেশনাটি অবশ্যই মনা চাই। মহানগরীতে যাত্রা বিচিত্র দর্শক ঢাকাতেই যাত্রা দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন অনেকেই, তাদের জন্য এ লেখা। চারুকলার প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ কাকলী বেশ রসিয়ে তার বর্ণনা দিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন- ‘চারুকলায় কেন যাত্রা দেখবেন? কারণ দেখতেই হবে। ওখানে মঞ্চে যত না অভিনয় হয় তারচেয়ে বেশি হয় অডিয়েন্সে। দর্শক অধিকাংশই বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী। এ যেন আনন্দ হাসির সমাবেশ। পেট ব্যথা হয়ে যায় দর্শক কমেন্টে। পরিচিত সহপাঠী ভাইবোন, বন্ধুদের হা হা হি হি সহ্য করে অবিরাম সংলাপ আউড়ে যাচ্ছে অভিনেতারা বিশেষ মনবলে। যেমন অভিনয় প্রশংসায় মঞ্চ উল্লসিত হয়ে চিৎকার করে আবার আগাম সংলাপ নিক্ষেপ করে। সংলাপ ভুল হবার চেয়ে হাসি থামিয়ে অভিনয় অবিরত রাখাই এক রকম সাহসিকতা। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর চারুশিল্পীদের যাত্রা। দর্শক অভিনেতাদের একেকজনের প্রেমালাপ সংলাপে উত্তেজিত, বিরহে দৃশ্যে বেদনাহত হয়ে আহা! উহু! আবার মারামারির সময় নাচানাচি, চিৎকার চেঁচামেচি আর সংলাপে সংলাপে প্যাঁচানো মন্তব্য। আজ ছিল যাত্রা শাহজাহানের তাজমহলের গল্প। শাহাজান যখন তার পুত্র আড়ঙ্গজেবকে ক্ষমা করছিলেন না, দর্শক সারি থেকে বলে উঠল, জাঁহাপনা ও ছাত্রলীগ করে ওকে ক্ষমা করে দিন। হাসতে হাসতে পেটে খিল। এমন চলেই পুরো সময়। এবার নায়িকার ম্যাপল ক্লিপ কাজ করছিল না। কোন সাউন্ড দর্শক পাচ্ছে না। নায়িকার মা বলছে, এখানে থাকা নিরাপদ নয়। কেউ আসছে মনে হয়! দর্শক সারি থেকে বলে একজন- হ্যাঁ ওকে নিয়ে যান ওর সাউন্ড নেই। হা হা হা! মঞ্চে বলছে, তোমার এত স্পর্ধা! কে দিয়েছে? দর্শক : আমি, আমি দিয়েছি। শাহাজান আওরঙ্গজেবকে অভিশাপ দিয়ে সংলাপ দিচ্ছে, পৃথিবীর সকল মাকে বলছি কেউ যেন হৃদয় দিয়ে তার সন্তান বড় না করে। সন্তান যে হৃদয় ক্ষত করে দেয় আহহহহ! দর্শক সারি থেকে : আপনারে এত বিয়া করতে কে কইছে? সব বিয়ার দোষ! হা হা হা... আরও দর্শক কমেন্ট/এবার চিৎকার...ওর নাম নব নব। ওর নাম কমল। ও বাদশাহ আলমগীর না না না! হা হা হা!! যুদ্ধের দৃশ্যের আগে মারামারি প্রস্তুতির সংলাপ : এত বড় স্পর্ধা! এই মাটিতে যুদ্ধ... দর্শক : ওরে বোকা এইটা চারুকলা! চারুকলা! যুদ্ধ চলে না এখানে। মারামারির সময় সব পানিশূন্য বোতল ছুড়ে মেরে বলে-মার! মার! আবার চিৎকার করে অভিনেতাদের বলে ভাইয়া বোতল দেন, আবার দিব! তারপর দৃশ্যে হাতে মদের পেয়ালা দেখলেই চিৎকার তোর গ্লাসে কিছু নেই। আয় কেরু ঢেলে দেই। হা হা হা! ছোট নায়িকা নায়কের বিদায়ী দৃশ্যে বেদনাতুর হয়ে সংলাপ দিচ্ছে মুখ উঁচু করে হঠাৎ পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে ওরে একটা জলচকি দে! শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর শেষ নেই। এমন দুষ্টুমি চলতে থাকে পুরা সময় জুড়ে। সবচেয়ে মজা যে যে মঞ্চে মরে যায় সে দ্রুত দর্শক সারিতে এসে বদমাশি করতে থাকে সবার সঙ্গে যেন এটা মঞ্চের অভিনয়ের চেয়েও মজা বেশি। আমাদের বুকের ভেতর চারুশিল্পীর যে আনন্দঘন শ্বাস তা নিঃশেষ হবার নয়। এভাবেই আমরা হাসি, ভালবাসি, বেঁচে থাকি কোন কিছুর বিনিময়ে নয়, মিছে আশায়। লেখাতে আসলে মজা বুঝানো সম্ভব নয়। এগুলো মুড়িমাখার মতো তাৎক্ষণিক মজাদার আনন্দ। আমাদের ঐতিহ্যময় যাত্রা শিল্প একমাত্র চারুকলায় এখনও বিশুদ্ধ কাহিনী, ধারাবাহিক অভিনয় ও সাবলীল-শালীনচর্চায় অনবদ্য। অনেক বছর ধরে ছাত্রছাত্রীরা যাত্রা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। গ্রাম-গঞ্জে বরং যাত্রাদল বদলে গিয়ে আধুনিক হিন্দী নাচের আগ্রাসন হয়েছে। লোকজ সংস্কৃতি, এই দেশের আলো-বাতাস, ঋতুচক্র আমাদের যেভাবে বড় করেছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের রক্ষা করাই দায়িত্ব ও কর্তব্য।’ ১৭ এপ্রিল ২০২২ [email protected]
×