ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ হবে আরও এক গুচ্ছ

এবারের পুলিশ সপ্তাহে পুরনো দাবিগুলোই উত্থাপনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

এবারের পুলিশ সপ্তাহে পুরনো দাবিগুলোই উত্থাপনের উদ্যোগ

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পুলিশ সপ্তাহে সেই পুরনো দাবিই আবার নতুন করে উত্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। দুই বছর আগে ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে ২০ দফা দাবি জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ২টি দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে। অপর ১৮ দাবির মধ্যে কয়েকটি দাবি আংশিক বাস্তবায়িত হলেও বেশিরভাগ দাবিই বাস্তবায়িত হয়নি। এখন আবার সেই পুরনো দাবিগুলোই নতুন করে আরও এক গুচ্ছ দাবির সঙ্গে মিলিয়ে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। করোনার পরিস্থিতির কারণে গত বছর পুলিশ সপ্তাহ হয়নি। এবারের ২০২২ সালের পুলিশ সপ্তাহ রবিবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সপ্তাহ চলবে পাঁচদিন। পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের দাবি জানানো হয় প্রতি বছরই। প্রতি বছরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এসব পুলিশে দাবি জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে অন্তত ২০ দাবি জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ২টি দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। আর কোন কোন দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে আংশিক। আবার কোন কোন দাবি একেবারেই আলোর মুখ দেখেনি। যেসব দাবি আলোর মুখ দেখেনি, সেই সব দাবিই আবার নতুন করে উত্থাপন করা তো হবেই, নতুন এক গুচ্ছ দাবিও জানানো হতে পারে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহের ২০ দাবির মধ্যে যে ২টি দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে পুলিশ পরিবারের দুই সদস্যের আজীবন রেশন প্রদান। অপর দাবিটি হচ্ছে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের এককালীন থোক বরাদ্দের প্রস্তাবটি। আংশিকভাবে যে দাবি পূরণ করা হয়েছে তার মধ্যে আছে সারাদেশে ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা। এটা ছিল গত পুলিশ সপ্তাহের অন্যতম দাবি। এ দাবিটি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হলেও তা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি উঠানো হতে পারে। পদোন্নতি জটিলতা দূর করার দাবিটি পুলিশের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এটা আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০টি ডিআইজির পদ, ৯৫টি অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২০টি এসপি পদ বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপির পদ ৪০টি করার দাবি থাকলেও এ মুহূর্তে আছে ২২টি। গত পুলিশ সপ্তাহের আগে অতিরিক্ত আইজিপি পদ ছিল ১৮টি। অর্থাৎ গত দুই বছরে চারটি অতিরিক্ত আইজিপির পদ বাড়ানো হয়েছে। যেসব দাবি বাস্তবায়িত হয়নি তার মধ্যে আছে আইজিপির পদমর্যাদা তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধানের সমান করা, পুলিশ প্রধান নতুন পদ (চীফ অব পুলিশ বা অন্য নাম) এবং আইজিপি হিসেবে পাঁচজনকে নিয়োগ। নারী পুলিশের জন্য পৃথক ট্রেনিং সেন্টার, স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স স্থাপন, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা, বিভিন্ন দূতাবাসে পুলিশ সদস্যদের পদায়ন এবং আলাদা মেডিক্যাল কোর গঠনের দাবি জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছিল দুই বছর আগের পুলিশ সপ্তাহে। কিন্তু এই প্রস্তাবগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। জাতিসংঘের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহন প্রাধিকার প্রদান, মামলাজট নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশে যে কমিটি করা হয়েছে তা বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন, জাতির পিতার সমাধি সৌধের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ফোর্স গঠনের প্রস্তাবও বাস্তবায়তি না হওয়ার তালিকায়। বাস্তবায়িত হয়নি এমন তালিকায় আছে, ফৌজদারি মামলায় যথাযথ সমন্বয়ের জন্য পুলিশের হাতে প্রসিকিউশন ফিরিয়ে দেয়ার দাবিটিও। মেট্রোপলিটন থানাগুলোয় পরিদর্শকদের পরিবর্তে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নন-ক্যাডার (পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, এএসআই) কর্মকর্তাদের প্রবল আপত্তির মুখে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অনাগ্রহের কারণেই বাস্তবায়িত হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমিশনার, মহাপরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি। দুদকে একটি মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ আছে, যেটি ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে পূরণ করার কথা। কিন্তু সেই পদে পুলিশের কোন ডিআইজি যেতে রাজি হননি। এ কারণে দীর্ঘদিনেও দুদকের উচ্চপর্যায়ে কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া যায়নি। তবে দুদকে উপ-পরিচালক এবং সহকারী পরিচালক পদে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও কেউ কেউ সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এর আগের পুলিশ সপ্তাহে উপস্থাপন করা প্রস্তাবনা বা দাবিগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, আবার কিছু আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। আর যেসব দাবির বাস্তবায়ন হয়নি তার মধ্যে কিছু কিছু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে। অতিরিক্ত আইজি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জন্য বছরে একবার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সারাদেশের পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ইউনিট পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা হয়েছে। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় একটি হতদরিদ্র পরিবারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব গৃহ নির্মাণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীন ৫১৯টি গৃহ নির্মাণ ও হস্তান্তরের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পুলিশ সদস্যদের জন্য আধুনিক অপারেশনাল গিয়ার ট্যাকটিক্যাল বেল্ট চালু করা হয়েছে।
×