ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বোরো আবাদে নতুন প্রযুক্তি কম সময়ে ফসল বেশী

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ১১ জানুয়ারি ২০২২

বোরো আবাদে নতুন প্রযুক্তি কম সময়ে ফসল বেশী

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ সেচ নির্ভর বোরো ধান আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমলয়ে চাষাবাদে সফলতা পেয়েছে কৃষক। সেই সফলতার পথ ধরে এবারও নীলফামারীর কৃষকরা সমলয় পদ্ধতিতে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছে। গত বছর এ জেলায় সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সফলতা এনে দেয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করে। তাই গতবারের ন্যায় এবারো জেলা সদরের তরুনীবাড়ি ব্লকে ১০০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য সাড়ে ৪ হাজার ট্রে-তে বোরো বীজতলা তৈরী করেছে কৃষকরা। আজ মঙ্গলবার নীলফামারী কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছরে নীলফামারী এলাকায় বোরো ধান সমলয়ে যন্ত্র দিয়ে চাষাবাদে ৩৩ শতকের বিঘাপ্রতি গড়ে শুকনো ২৮ মন করে ধানের ফলন হয়েছে,যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কমপক্ষে ৬০০ মন বেশি ছিল। সুত্র মতে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকারের কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে সময়োপযোগী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সমলয়ে চাষাবাদ বা এর মাধ্যমে পাশাপাশি জমিতে তরুনীবাড়ি ব্লকে কৃষক/কৃষাণীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের জমিতে একই জাতের ফসল চাষাবাদ করছে এবং প্রতিটি কাজ করছে যন্ত্রনির্ভর। গত বছর বোরো মৌসুমে তরনীবাড়ি ব¬কে ৭৭ জন কৃষক/কৃষাণী নিয়ে ৫০ একর জমিতে বোরোধান সমলয় চাষাবাদ করেন।এতে বীজ বপন হয় ট্রে তে,মাত্র ২২-২৪ দিনের চারাগুলো রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে রোপন করা হয়।রোপনের সময় কৌতুহল থাকলেও পরবর্তীতে ১৪৯ দিন পরে যখন কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধানকাটা শুরু হয় তখন কৃষকের বাধভাঙ্গা উচ্ছাস ছিল। কৃষক মোস্তফিজুর রহমান বলেন আমি ৪ বিঘা জমিতে বোরো সমলয় চাষাবাদ করে ১১৯ মন ধান পেয়েছিলাম। যা সনাতন (পুরাতন) পদ্ধতিতে (৮৫মন) আবাদের চেয়ে ৩৪ মন ধান বেশী ঘরে তুলতে পেরেছি। কৃষক শামসুল হক বলেন,আমার জীবনে ধানের এমন ফলন পাইনি এর আগে ,৩ বিঘাতে ৮৮ মন ধান পেয়েছিলাম।কৃষক আল আমিন বলেন ট্রেতে বোরোর বীজতলা কেমন হবে না হবে এমন ভাবছিলাম কিন্তু ফলন দেখি খুব খুশি হয়েছি। ৩ বিঘাতে আমি ধান পাই ৯১ মন। কৃষক আমিনুর রহমান বলেন গত বছর সরকারের কৃষি প্রনোদনার মাধ্যমে আমাদের সমালয়ে বোরো ধান আবাদ করে বেশী উৎপাদন করা শিখিয়ে দিয়েছে। এবার আমরা নিজেরাই সমালয়েপদ্ধতিতে বোরো আবাদ করছি। গতবার এই কৃষক সার ২ বিঘায় ৬৭ মন ধান ঘরে তুলেন। গত বছর বোরো সমলয়ের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে পরীক্ষামুলক ভাবে ৬ বিঘা জমিতে আউশধানের বীজ ট্রে তে এবং ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে রোপ করা হয়। এমন কি আমন মৌসুমেও সেই ধারা অব্যাহত রেখে ২০ বিঘা জমিতে ট্রে তে বীজ বপন কার্যক্রমে সফল পেয়েছেন বলে জানালেনকৃষক মোস্তাফিজুর। তিনি আরও বলেন আমরা নতুন এই প্রযুক্তি শিখে বেশী বেশী ধান উৎপাদনের যে লাভ তা আমরা বুঝতে পারছি। তাই এবারও বোরো আবাদে বীজতলা ট্রে তে বীজ বপন করেছি। এবার সরকারী কোন প্রনোদনা নেই তবে কৃষি কর্মকর্তাদের নিকট থেকে পরামর্শ পেয়ে যাচ্ছি বলে কৃষকরা জানান। এ ব্যাপারে কথা হয় রংপুর বিভাগের সেরা কৃষি কর্মী নীলফামারী সদরের তরনীবাড়ি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম রায় এর সঙ্গে। তিনি জানান, সমলয় চাষ পদ্ধতির উপযোগিতা স¤পর্কে সনাতন(পুরাতন) পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে বীজ বপণ করা শেখানো হয়। প্লাস্টিকের ফ্রেমের বা ট্রে-এর মধ্যে ৩:২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এখন বীজতলার বয়স চলছে ১৬ দিন। যা গতবারের ন্যায় রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করবে কৃষক। তিনি জানান, এই ব্লকে গত বছর পরীক্ষামুলকভাবে ২২জন নারী কৃষক সহ ৭৭ জন কৃষক সরকারের প্রনোদনায় ৪ হাজার ৫০০ ট্রে-তে বীজতলা তৈরি করেছিল। যা এবারও তারা নজেরাই করতে পেরেছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের এ কার্যক্রমে সহজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের অধিক ফলন ঘরে তুলছে। তরনীবাড়ি ব্লকের কৃষক মোস্তফা, নুর আমিন,বিধান চন্দ্র রায়, জাহাঙ্গীর আলম,সামছুল ইসলাম,নুরনাহার সহ অন্যান্য কৃষকরা জানায়, পানি সেচের অভাবে সব জমিতে বোরো আবাদ করা যায় না। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সমলয়ে চাষাবাদ নামে যে নতুন পদ্ধতি আমাদের বাস্তবে দেখিয়ে দিয়ে অধিক ধানপাইয়ে দিয়েছে। তাই এবারও অঅমরা এই পদ্ধতিতে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছি। সরকারের এই নতুন পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা ভালো চারা ও অধিক ফলন পেতে শুরু করেছি। তাই এলাকার সকল কৃষক বোরো ধান আবাদে বেশী মনোযোগী হয়েছে। এই পদ্ধতিতে স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও দেশের খাদ্য যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে কৃষকরা মন্তব্য করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপপরিচালক উপ পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব। উপপরিচালক বলেন, সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নেয় গত বছর। যার সফলতা কৃষকরা ভোগ করছে। এবারও এলাকার কৃষকরা সমলয়ে পদ্ধতিতে বোরো আবাদে মাঠে নেমেছে। গতবারের সফলতা পুঁজি করে কৃষক আবাদ ও উৎপাদনে সাফল্য ধরে রাখছে। যা অন্যান্য কৃষকদের সমালয় পদ্ধতি বোরো আবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে।
×