ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইস্টচার্চে টাইগারদের সিরিজ জয়ের সুযোগ

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৮ জানুয়ারি ২০২২

ক্রাইস্টচার্চে টাইগারদের সিরিজ জয়ের সুযোগ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অন্যরকম এক ফুরফুরে মানসিক অবস্থা নিয়ে এখন ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ দল। এর আগের ৫ সফরে নিউজিল্যান্ডে কখনও কোন ফরমেটের সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচে এমন সুবিধাজনক অবস্থান ছিল না। কারণ এবার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারের শঙ্কায় ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় এই টেস্টে হার এড়াতে পারলে মুমিনুল হকরা নতুন এক ইতিহাসের জন্ম দেবেন। পদেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরবময় কীর্তি হবে টাইগারদের। রবিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় মাঠে গড়াবে এই টেস্ট। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে বাংলাদেশের কাছে ৮ উইকেটে হারের মাধ্যমে নিজেদের মাঠে ৫ বছর ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে নিউজিল্যান্ডের। এখন সেই হার ভুলে ক্রাইস্টচার্চে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন কিউইদের। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট হবে এটি অভিজ্ঞ রস টেইলরের। তার জন্য কিউইরা এই টেস্টে মনেপ্রাণে জয় পেতে চাইবে। হারলেই প্রথমবার বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হবে তাদের। প্রথম টেস্টে কিউই পেসারদের দারুণভাবে সামলেছেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে ৪৫৮ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ার কারণেই চাপে পড়েছে কিউইরা। আর সেই সুযোগটা নিয়ে প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিং করা বাংলাদেশী পেসাররা দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। এবাদত হোসেন চৌধুরী ও তাসকিন আহমেদ দারুণ বোলিংয়ে কোণঠাসা করেছেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংকে। প্রথম ইনিংসে বাঁহাতি শরিফুল ইসলাম ৩ উইকেট শিকার করেন। সেই ইনিংসে মাত্র ১ উইকেট পাওয়া এবাদত একাই ধসিয়ে দিয়েছেন কিউই ব্যাটিং লাইনের মেরুদ-। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে তুলে নিয়েছেন ৪৬ রানে ৬ উইকেট। আর প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য তাসকিনব নেন ৩ উইকেট। অর্থাৎ এই টেস্টে বাংলাদেশী পেসারদের পারফর্মেন্স ছিল স্বপ্নের মতো। কারণ তারা নিয়েছেন স্বাগতিক প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের ১৩ উইকেট। আর এতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ৩ ফরমেট মিলিয়ে এবার নিয়ে ষষ্ঠ সফরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩৩ ম্যাচ খেলে প্রথম জয়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম জয়, ১৬তম টেস্টে এসে কিউইদের প্রথম হারানো, ১১ বছর পর এশিয়ান কোন দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয় করে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে দলগতভাবেই জ্বলে উঠেছিলেন মুমিনুলরা। কারণ ব্যাটাররা দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন বলেই পরবর্তীতে বোলাররা আত্মবিশ্বাসী বোলিং করেছেন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত অর্ধশতক হাঁকান। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে আউট হন মুমিনুল ও লিটন। আর অর্ধশতকের কাছে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ (৪৭)। সবমিলিয়ে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে আগাগোড়া ব্যাটিং পারফর্মেন্স ছিল দুর্দান্ত। তবে ক্রাইস্টচার্চে খেলতে পারবেন না হাতে আঘাত পাওয়ার পর আঙ্গুলে ৩ সেলাই পড়া জয়। তার বিকল্প হিসেবে সুযোগটা টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা নাইম শেখের পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বাড়তি ব্যাটার হিসেবে দলে আছেন শুধু আর উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। নাইম না খেললে সাদমান ইসলামের সঙ্গে ওপেনিংয়ে থাকতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তাই করেছেন তারা। সেক্ষেত্রে হয়তো সোহান সুযোগ পেতে পারেন। একাদশে আর কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। আর কিউইরা হয়তো একাদশে দুয়েকটি পরিবর্তন আনতে পারে। তবে ক্রাইস্টচার্চেও হবে পেসারদের লড়াই। ঘাসে ঢাকা উইকেটে তাই আরেকবার পেসারদের ওপর নির্ভর করবে উভয় দল। তবে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে তুলনামূলক অনেক বেশি বাউন্স থাকবে। সেটি এড়িয়ে বাংলাদেশী ব্যাটারদের আরেকবার ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। ন্যূনতম ড্র করতে হলে খেলতে হবে ৫ দিন। আর হার-জিত হয়ে গেলে সেই পার্থক্যটা পেস বোলিং ঠেকানোর ওপর নির্ভর করবে। যারা ভাল ব্যাটিং করবে সেই দলই জিতবে। তবে বাংলাশে দলের লক্ষ্য এখানে ড্র করার। মাটি কামড়ে গত টেস্টে যেমন প্রথম ইনিংসে ১৭৬.২ ওভার ব্যাট করেছে, তেমনি এখানেও ব্যাটারদের সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হতে হবে। হ্যাগলি ওভালে গড়ানো আগের ৮ টেস্টে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে শুধু ২০১৬ সালে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড করে ড্র। বাকি ৬ টেস্ট খেলে এশিয়ার ৪ দল শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ হেরেছে। ২০১৯ সালেও এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল, কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনায় ম্যাচটি আর হয়নি। তাই ৫ বছর আগে এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতাই পুঁজি বাংলাদেশের। তবে অনুপ্রেরণা অবশ্যই এবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের জয়টা। কারণ ২০১৭ সালে খেলা ম্যাচটায় এখানে প্রথম ইনিংসে ২৮৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। হারতে হয় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অথচ আগের টেস্টেই ওয়েলিংটনে কিউইদের ওপর ৪ দিন পর্যন্ত দাপট দেখানো বাংলাদেশ পঞ্চম দিন শেষ বিকেলে পরাজয় বরণ করে। এবার অতীতের চেয়ে ভাল কিছু করার প্রত্যয় জানানো মুমিনুলরা সেটা বাস্তব করেছেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। কিন্তু এতেই চ্যালেঞ্জটা বেড়েছে, প্রত্যাশাও বেড়েছে মুমিনুলদের ওপর। সেই প্রত্যাশা পূরণ করে আরেকটি ইতিহাস গড়ার এসিড টেস্ট রবিবার শুরু টাইগারদের।
×