ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার সংগ্রামে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার সংগ্রামে বাংলাদেশ

১৯৭২ সালের মে মাসের কোন একদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষা, অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক উপানুষ্ঠানিক আলোচনায় উপস্থিত থাকার এক বিরল সুযোগ হয়েছিল আমার। প্রস্তাবিত সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদের বিধান ও বিষয় নিয়ে হচ্ছিল আলোচনা। সর্বজনীন, অবৈতনিক এবং একই মানের প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন ও প্রসারণের ওপর সেই আলোচনায় শিক্ষা, অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীত্রয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা ক্রমে বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় তথ্য ও অর্থের আহরণ করে পরবর্তী ৫ বছরে দেশের সে সময়ে বিদ্যমান সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং তারপরে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা উত্তম ও কর্মানুগ হবে। তাদের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ডান হাতের পাইপটি বাম হাতের তালুতে আলতোভাবে ঠুকিয়ে বলেছিলেন, এদেশের মানুষদের সমানভাবে বেড়ে তুলতে আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিলাম, আর এই সংগ্রামে জিতে এখন যদি প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলন ও প্রশারে আমরা দেরি করি তাহলে সেই সংগ্রামের আদর্শের প্রতিকূলে আমাদের অবস্থান হবে। আর বলেছিলেন, সর্বজনীন অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাকে হতে হবে একই মানের- যাতে ভবিষ্যতের সকল নাগরিক নিজের মেধা ও পরিশ্রমের ভিত্তিতে বেড়ে ওঠার সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় এবং ধনীরা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে তোলার জন্য ভিন্নতর কিংবা উন্নততর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারেন। তিনি আরও বলেছিলেন, সমতাভিত্তিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমাজ গঠনের মৌলিক ভিত্তি হবে সকলের জন্য একই মানের প্রাথমিক শিক্ষা। তার কথায়, রাষ্ট্রের ব্যয় ও বিনিয়োগে সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক ও সর্বজনীন এবং একই মানের শিক্ষা প্রবর্তিত ও পরিচালিত হলে সমাজতন্ত্র বা সমসমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে আমাদের সংগ্রামের প্রথম সিঁড়ি আমরা পার হতে পারব। সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তাই সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ গ্রন্থিত হলো অবৈতনিক, সর্বজনীন ও একইমানের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। একই সূত্র অনুযায়ী দেশব্যাপী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা সৃষ্টি ও রক্ষা করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গৃহীত ১৯৭২ সালের সংবিধানে সমাজতন্ত্র ও শোষণ মুক্তি (অনুচ্ছেদ-১০), কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি (অনুচ্ছেদ-১৪), সকল নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক মৌলিক প্রয়োজন মেটানোকে রাষ্ট্রের পরিকল্পনার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ (অনুচ্ছেদ-১৫), গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূরীকরণ (অনুচ্ছেদ-১৬), সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ (অনুচ্ছেদ-১৯), আইনের দৃষ্টিতে সকলের সমতার স্বীকৃতি (অনুচ্ছেদ-২৭), ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গ ও জন্মস্থানের বিভিন্নতার কারণে কোন প্রকার বৈষম্য পরিহারকরণ (অনুচ্ছেদ-২৮), সরকারী নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণের বিধান (অনুচ্ছেদ-২৯), সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকার (অনুচ্ছেদ-৩১)-এর সূত্র ও বিধানাবলী গ্রহণ করা হয়। এভাবে একটি সাম্যভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ গঠনের দর্শন আমাদের সকলের জন্য সংবিধানে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের বাজেট তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও অর্থ সচিব মতিউল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে বঙ্গবন্ধু সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এদেশে শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার সবাইকে স্মরণ করে দিয়ে বলেছিলেন যে, এর জন্য প্রয়োজন হবে দ্রুততম ও বিস্তৃততম প্রবৃদ্ধির, বলেছিলেন বৃত্তের বৃদ্ধি না হলে দারিদ্র্য বিমোচিত হবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, কেবলমাত্র অর্জিত সম্পদ বিতরণ করা যায়, দারিদ্র্য বিতরণ করে সমাজে সমতা স্থাপন কিংবা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বাংলাদেশ ২০২১ সালের ২৫ নবেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশে এখন মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ আজ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনকারী দেশ। পর পর ৩ বছর বার্ষিক ৭ শতাংশেরও বেশি হারে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। করোনা মহামারীর কারণে ২০১৯-’২০ সালে প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপিত ৮.২ শতাংশের নিচে ৫.২ শতাংশে নেমে এলেও এই বছরের প্রাথমিক প্রাকভাষে তা ৯ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে, সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া ৫-১২ বয়োবর্গের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। শিল্প সম্প্রসারণ ও নগরায়নের ফলে কৃষি জমি কমে এলেও বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ, পোশাক রফতানি ও ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আজ বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অধিকারী। বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে। তেমনি পৃথিবীতে বাংলাদেশ এখন ছাগ মাংস উৎপাদনে ৫ম, ধান উৎপাদনে ৪র্থ, আম উৎপাদনে ৭ম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে তৃতীয় ও পাট রফতানিতে প্রথম। সমকালে ১২০টি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুত দেশের ৯৫% আবৃত করেছে। কৃষি শিল্প ও সেবাসহ সব খাতে উৎপাদন বাড়ার ফলে সার্বিক দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি বেড়েছে, বেকারত্ব তাৎপর্যমূলকভাবে কমেছে এবং দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪২% থেকে ২০২০ সালের শেষ প্রান্তে ২০% এর নিচে এবং অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭%-এর নিচে নেমে এসেছে (দ্রষ্টব্য : জাতীয় সংসদে ১০ম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ)। এই পটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষ্যে তাই জনগণের সমর্থনের জোরে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে, জাতীয় সংসদ এক প্রস্তাব বাক্যে সরকারকে এই পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দিয়েছে (দ্রষ্টব্য দৈনিক জনকণ্ঠ, নবেম্বর ২৫, ২০২১)। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার এই পথে নির্মোহ বিশ্লেষণের নিরীখে কতিপয় ক্ষেত্র বা বিষয়ের ওপর অধিকতর গুরুত্ব ও মনোযোগ দেয়া সমীচীন হয়ে দেখা দিয়েছে। এক, দেশে সাম্প্রদায়িক তৎপরতা অধিকতর কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সকল প্রান্তের জনগণের মাঝে এবং সমতার প্রতিকূলে মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক যাতে সাম্প্রদায়িকতা কোন ক্রমেই মাথা তুলতে, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সরকার বা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ না করতে এবং আইনের সমশাসন সকল নারী-পুরুষ ধর্মাবলম্বী ও তৃতীয় লিঙ্গ মানুষের জন্য নির্বিঘেœ, নির্দ্বিধায় এবং সর্ব সময়ে দ্রুততম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য জাতির ও সরকারের সকল পর্যায়ে আমাদের অধিকতর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য রবিউল মুকতাদীর সংসদের গত ১০ম অধিবেশনে আমাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আমরা সব সংসদ সদস্য তাকে সমর্থন জানিয়েছি। দুই, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এই বছরের বরাদ্দ ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা প্রতি বছর ২৫% হারে বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় দেশের অতিদরিদ্র জনগণের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। অতি দরিদ্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অসুস্থ ও দৃষ্টি, শ্রবণ ও অন্যান্য দৈহিক প্রতিবন্দীদের অনুকূলে রাষ্ট্রের তরফ হতে দেয় সেবা ও চিকিৎসা অধিকতর প্রসারিত ও নিশ্চিতকরণের পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করতে হবে। কোন কারণে বা অবস্থায় এসব সহায় সঙ্কুল জনগোষ্ঠীর প্রাপ্য সেবা ও চিকিৎসা বারিত হওয়ার প্রতিকূলে স্থানীয় ও জাতীয় সরকার পর্যায়ে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তিন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষের সঞ্চিত আমানতের বিপরীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তাকে যথা প্রয়োজন ঋণ সহায়তা দিতে হবে। সমকালে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানতের পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৯৮ বিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে বেসরকারী ব্যাংকের আমানত ১৬%। সমকালীন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিতরিত ঋণের বৃহদাংশ বৃহৎ ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের অনুকূলে অপেক্ষাকৃত সুলভে সহায়কী ও প্রণোদনাসহ দেয়া হয়। বৃহৎ ঋণাংশ প্রাপক মধ্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের তুলনায় নিয়ম মতো এমনকি সহজে এসব ঋণ ফেরত দেন না। সার্বিকভাবে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এই অসম ও অনুৎপাদনশীল প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্য থেকে সরিয়ে এনে ব্যাংক ব্যবস্থাকে তাদের পরিচালনা ও কর্মের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মধ্যমানের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অনুকূলে সমাজের সঞ্চিত সম্পদের অধিকতর অংশ প্রবাহিত করলে সার্বিক উৎপাদন বাড়বে, অধিকতর সংখ্যক উদ্যোক্তা ও উৎপাদক সৃষ্টি হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ভিত্তিতে আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। উন্নয়ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী অনুরূপ উদ্দেশ্যে অধিকতর সঞ্চালিত করা বিধেয় হবে। কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে একই যুক্তিতে অপেক্ষাকৃত বিত্তশালীদের অনুকূলে ঋণ ও সহায়তার তৎপরতা থেকে ঘুরিয়ে এনে ক্ষুদ্র ও মধ্য উৎপাদনকারী ও উদ্যোগীদের অনুকূলে প্রবাহিত করতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নতুন উদ্যমকে সমর্থন ও সহায়তা করার লক্ষ্যে ঝুঁকি মূলধন সঞ্চালনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। তেমনি গৃহনির্মাণ ঋণদান প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা প্রসারিত করে এবং নিম্ন ও মধ্যম আয় শ্রেণীর গৃহ সংস্থানে প্রযোজিত করা ইপ্সিত হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ ও দান করে ইতোমধ্যে যে ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে তা আরও বেশি, আরও বিস্তৃত করতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যাবলী ও তৎপরতা সূত্রগতভাবে গ্রহণে সকল তফসিলী ব্যাংককে তাদের গ্রামাঞ্চলের কার্যক্রমে নৈতিক ও আর্থিক উৎসাহ দেয়া দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক অসমতার প্রতিকূলে প্রয়োগ করা উত্তম হবে। সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসমতা না বাড়ানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে (দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষণ ইনস্টিটিউটের ২০২১ এর সম্মেলনে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের ভাষণ, ডেইলি স্টার ডিসেম্বর ৩, ২০২১ইং)। চার, বৃহত্তর কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদনে সমকালীন অভূতপূর্ব উন্নয়ন কৃষকের বিনিয়োগের ফিরতি এবং কৃষি মজুরি বাড়িয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করণের লক্ষ্যে কৃষির প্রত্যক্ষ উৎপাদকের অনুকূলে অধিকতর সমর্থন ও সহায়তা দিতে হবে, কৃষি যন্ত্রায়ন বাড়াতে হবে এবং কৃষি গবেষণায় তেমনি অধিকতর গুরুত্ব প্রসারতি করেতে হবে। সম্প্রতি একবার বপনের বিপরীতে পাঁচবার উফশী ধান উৎপাদনের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তা যুক্তি সঙ্গত কৃষি কর্মকা-ে গ্রহণ ও বিস্তৃত করতে হবে। শিক্ষা খাতে বর্ধিত বিনিয়োগ ও মনোযোগ ইতোমধ্যে আশানুরূপ ফিরতি দিয়েছে। কারিগরি ও প্রকৌশলীয় শিক্ষা, ব্যবসায় প্রশাসন এবং চিকিৎসা ও নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ, তথ্য বিজ্ঞানের বিস্তার, তৈরি পোশাক উৎপাদনে আন্তর্জাতিক ডিজাইন ও ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃজন ও উদ্যম নির্বাচিতভাবে বাড়ানোর জন্য অধিকতর মনোযোগ দিলে উদ্যম ও সম্পদ সৃষ্টির পরিধি বাড়বে, বেকারত্ব দূরে সরে যাবে, দারিদ্র্য সঙ্কুুচিত হবে এবং ফলত সমতার পথে আরও অগ্রসর হওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন বাংলাদেশ অর্জন করে চলেছে, তাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও অনুশাসন অনুযায়ী উৎপাদন বৃদ্ধির ও সম্পদ সৃজনের মাধ্যমে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন করে সমতাভিত্তিক আলোকোজ্জ্বল ও সম্মুখমুখী সমাজ সৃজন ও রক্ষণে এই দেশ উন্নয়নশীল সকল দেশের জন্য অনুসরণীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা অর্জন ও সম্প্রসারণের উদাহরণ সৃষ্টি করবে। লেখক : এমপি ও সাবেক মন্ত্রী
×