ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশবাসীর কল্যাণে

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

দেশবাসীর কল্যাণে

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় জাতির জনকের অকাল প্রয়াণ অনেকটা রিক্ত-নিঃস্ব হওয়ার দুঃসময়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হওয়া ছাড়াও সর্বস্তরের বিভিন্ন কাঠমোও পড়ে এক অবর্ণনীয় দুর্দশায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনামলে প্রশাসনিক কাঠমোকে শক্তিশালী পর্যায়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন হওয়ার একটি দেশ তখন নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্নে যুগোপযোগী কর্মপ্রবাহ সূচনা করলে তা বাস্তবের দরজায় পৌঁছতে পারেনি। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের হত্যাযজ্ঞ কাক্সিক্ষত স্বপ্নে যে তীব্র আঁচড় বসায় সেটাও জাতির জন্য অমানিশার অন্ধকার। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি অবস্থান মজবুত করে নেয়। পাকিস্তানের সামরিক শাসনামলে সিভিল প্রশাসনে প্রায় ৫০০ জন সিএসপি অফিসার ছিলেন। যাদের মধ্যে বাঙালী কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র ২০০ জন। তাদের নিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো তার যাত্রা শুরু করে। ’৭৫ পরবর্তী ঘটনায় সবকিছু তছনছ হয়ে গেলে জনগণের কাক্সিক্ষত প্রশাসনও রক্ষা পায়নি। পরবর্তী ২১ বছরের ইতিহাসে বাঙালীর ঐতিহ্যিক ভাবসম্পদে যে অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ নামে তাতে সারা বাংলাদেশ হারানোর বেদনায় মুহ্যমান। স্বাধীন দেশে সূচনা হয় ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস’ (বিসিএস) ক্যাডার। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে প্রথম বিসিএস উত্তীর্ণ কর্মকর্তারা প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সে সময় ভাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া খুব একটা সহজ ছিল না। এর পরের ঘটনা রক্ত নিঃসৃত রিক্ততার ইতিবৃত্ত। ফলে ২০০ বিসিএস কর্মকর্তা সবাই কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না। বিরোধী শক্তি ও ক্রমাগত তার কার্যক্ষমতাকে বিপরীত স্রোতে এগিয়ে দেয়। তারই নির্মম ফল ২১ বছরের চরম দুঃশাসন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র ৫ বছরে সব আবর্জনা সাফ করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নতুন করে নজর দিতে হয়েছে দুর্নীতি ও অবসাদগ্রস্ত জীর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো ভিন্ন ধাঁচে জনগণের উপযোগী করার প্রত্যাশায়। সেখান থেকেই বাংলাদেশ সিভিল প্রশাসনের নবযাত্রা বলা যেতে পারে। প্রশাসনের যাত্রাপথে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নীতিনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলাও এক অনন্য কার্যক্রম। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য অধিকার আইন পাস করেন। দেশের জনগোষ্ঠীকে অধিক ক্ষমতাশালী ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই আইন যুগান্তকারী প্রভাব আনে। পরবর্তীতে প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে জাতীয় শুদ্ধাচার নীতি প্রণয়ন, দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, মাঠ প্রশাসনকে আরও জোরালো করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তাছাড়া ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তার জবাবদিহিতার ব্যাপারেও কঠোর সিদ্ধান্ত আসে। তৃণমূল পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি এসেছে। বেড়েছে নারী প্রশাসকের সংখ্যাও। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা জনস্বার্থে কাজ করে চলেছেন। বর্তমান সরকারের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেয়ার অঙ্গীকারও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সততা, শুদ্ধতা আর ন্যায়নিষ্ঠতার প্রতীক হোক আমাদের আধুনিক, যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তির শক্তিসম্পন্ন প্রশাসন।
×