ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্লাসগোই হোক টার্নিং পয়েন্ট

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৩ অক্টোবর ২০২১

গ্লাসগোই হোক টার্নিং পয়েন্ট

(গতকালের পর) এবারের গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের যৌথ আয়োজক ইতালি এবং ইংল্যান্ড। ফলে এই দুটি দেশই গত এক বছর ধরে এই সম্মেলনকে সফল করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময়, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে আসছে। এসব কারণেই গ্লাসগো সম্মেলন নিয়ে আশা তৈরি হয়েছে। মূলত আশা তৈরি হয়েছে বাইডেনের লিডার্স সামিটের মধ্য দিয়েই। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অচলাবস্থার মুখে ঠিক যে ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল ঠিক সেটাই উঠে এসেছে বাইডেনের ব্যতিক্রমী লিডার্স সামিট থেকে। গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই ‘লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’-এ ৪০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কথায় জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ঠেকাতে তাদের চূড়ান্ত আন্তরিকতার বিষয়টিই উঠে এসেছে। এটিই এখন সময়ের দাবি ছিল। নিজে বাঁচতে চাইলে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে চাইলে এই দাবি পূরণের কোন বিকল্প ছিল না। বিশ্ব এখন যে অবস্থানে চলে যাচ্ছে তা থেকে ফেরাতে বড় কোন রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। এ সঙ্কট মোকাবেলায় ব্রাজিল, জাপান ও কানাডার মতো শীর্ষ নিঃসরণকারী দেশগুলো তাদের অবস্থান থেকে অভ্যন্তরীণ গ্রীন হাউজ গ্যাস কমানোর সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লিডার্স সামিটের আয়োজক অন্যতম শীর্ষ কার্বন নির্গমনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিটাও ছিল জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় সর্বোচ্চ। শুধু শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী চীন ও তৃতীয় নিঃসরণকারী ভারত ঝেড়ে কাশেনি। এই দুটি দেশ ঝেড়ে কাশলে সামিটের প্রাপ্তির শোলকলা পূর্ণ হতো। এখন ওই প্রতিশ্রুতির কতটা তারা পূর্ণ করেছেন তা জানা যাবে গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে। বিশ্বের ২০০টি দেশকেই বলা হয়েছে, পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তাদের কর্মপরিকল্পনা কি, তা গ্লাসগোর সম্মেলনে জানাতে। ইতোমধ্যে অনেক দেশই গ্লাসগো সম্মেলনের আগে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে বড় দেশগুলো কি করে তা এখনও জানার অপেক্ষা। জানা যাবে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আদৌ এই পৃথিবী রয়েছে কিনা। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ১. ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা। কারণ ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হলে এটি করা জরুরী। ২. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে থাকবে সেগুলোর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩. এসব কাজ করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। সে জন্য প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল করার জন্য উন্নত দেশগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। এবং ৪. জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তবে সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতিকারক কার্বন নির্গমণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ। এর বাইরেও দুই সপ্তাহ ধরে চলা সম্মেলনের সময় নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকারের ঘোষণাও শোনা যাবে। তবে মূল দৃষ্টি থাকবে চীন-ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কি প্রতিশ্রুতি দেয়। কারণ এই দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির ওপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যত। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ গ্লাসগোতে হাজির হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার মধ্যে থাকবেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, মীমাংসাকারী এবং সাংবাদিক। হাজার হাজার এ্যাকটিভিস্ট এবং বহু ব্যবসায়ীও হাজির হবেন। রেবেলিয়ান এক্সটিংশনের মতো কট্টর পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করার দাবি করছে। গ্লাসগো সস্মেলনের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রায় ৯৯ দেশের লাখ লাখ মানুষ একযোগে পালন করেছে ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ শিরোনামের একটি কর্মসূচী। যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ধর্মঘটে উত্তাল হয়েছিল সারাবিশ্ব এ সময় পরিবেশ বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ অধিকারকর্মীরা। এসব কর্মসূচী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ তৈরি করবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের। দীর্ঘদিন ধরে ফসিল ফুয়েল বা কয়লা বা তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে যে পরিমাণ ক্ষতিকারক গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়েছে তার প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। আর এর পরিণতিতে আবহাওয়া দিনকে দিন চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা বাড়ছে, জঙ্গলে আগুন ধরছে, বন্যা এবং সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব হচ্ছে কারণ বিশ্বের জলবায়ু বদলে যাচ্ছে এবং এই পরিবর্তনের গতি ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, সম্মেলনের শেষে একটি সর্বসম্মত ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা আসতে পারে এই সম্মেলনে থেকে। যাতে সুনির্দিষ্ট সব অঙ্গীকার থাকবে। সব দেশকে সেই ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে হবে। আর গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা কতটা কাজ করবে। বিশ্ববাসী সেদিকেই তাকিয়ে আছে। আশায় নিয়ে বসে আছে, গ্লাসগোই হবে পৃথিবীকে বাঁচানোর টার্নিং পয়েছে। এখান থেকেই পৃথিবী আবার ঘুরে দাঁড়াবে নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিতে। (সমাপ্ত) লেখক : সাংবাদিক
×