ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আজিমপুর মাতৃসদনে অনিয়মের চার্জশীট চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ২২:১৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

আজিমপুর মাতৃসদনে অনিয়মের চার্জশীট চূড়ান্ত

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রেজিস্ট্রেশন না করার অজুহাতে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর ছিন্নমূল নারী পারভীনকে জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়। ফুটপাথে যন্ত্রণায় ছটফট করে ওই নারী রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার সন্তানটি আর বাঁচানো যায়নি। এরকমই একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। সেদিন ছিন্নমূল ওই নারী গর্ভবতী অবস্থায় চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল আজিমপুরের মাতৃসদনে ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। সে সময় বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলে। অথচ আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নামের বিশেষায়িত এ হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার কথা ছিল কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে সে সময় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আওতায় হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে জাপানের অর্থায়নে হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুবিধা নিয়ে ২০০০ সালে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। অথচ এই হাসপাতালটিতে এমন একটি নির্দয় ঘটনা ঘটে। সে সময় ঘটনাটি মানুষের হৃদয় দাগ কাটে। এরপরই বেরিয়ে আসে এই হাসপাতালে অপকর্ম ও অনিয়মের নানা কাহিনী। শুধু ওষুধ নয়, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজি আইটেম ক্রয়ের নামে চলে সেখানে হরিলুট। বাজার দরের চেয়ে দ্বিগুণ ও তিনগুণ দামে কেনাকাটা করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্তে এই হাসপাতালে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ওষুধ-সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দফতরের আট জনকে আসামি চারটি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালক ডাঃ ইসরাত জাহানকে। মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে দুদক। মঙ্গলবার একটি মামলার চার্জশীট অনুমোদন দিয়েছে দুদক। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক জনকণ্ঠকে জানান, মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (NCHTI)-এর কেনা-কাটায় অনিয়মের প্রেক্ষিতে ৭ জন ডাক্তার, ৩ জন ঠিকাদারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট অনুমোদন করেছে দুদক। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিগণ একে অপরের সহায়তায় অসৎ উদ্দেশ্যে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায় অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের প্রতারণা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মেডিসিন এ্যান্ড ইকুইপমেন্ট টেন্ডারের এর মাধ্যমে ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ লঙ্ঘন করে এমআরপি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের নির্ধারিত মূল্য তালিকা মোতাবেক মেডিসিন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত মেডিকেল এ্যান্ড সার্কিটের মূল্য তালিকা মোতাবেক সার্জিক্যাল আইটেম ক্রয় করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে বর্তমান বাজারদর আমলে না নিয়ে গঠিত বাজার কমিটির প্রথম মনগড়া ও ভিত্তিহীন দরকে বিবেচনায় নিয়ে এমআরপি ওয়েবসাইট এর উত্তরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে মালামাল ক্রয় করে মোট এক কোটি ২৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৪১ টাকা আত্মসাত করত দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের সুপারিশ করা হলো। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ওষুধ-সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের বাকি তিন মামলায় নতুন করে দুই ভিআইপি আসামিকে সংযুক্ত করে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দিতে যাচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোঃ আবু বকর সিদ্দিক। শীঘ্রই নতুন দুই আসামিসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে তিন মামলায় চার্জশীট কমিশন থেকে অনুমোদন হতে যাচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপ-পরিচালক মোঃ আবুবকর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে জানান, আজিমপুর মাতৃসদন ওষুধ-সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের চারটি মামলায় মঙ্গলবার একটির চার্জশীট অনুমোদন দিয়েছে দুদক। যার মামলার নম্বর ১৬। এতে ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর চার্জশীট শীঘ্রই জমা দেয়া হবে।
×