ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারে হবে প্রথমটি

করোনা চিকিৎসায় ফিল্ড হাসপাতাল

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৬ আগস্ট ২০২১

করোনা চিকিৎসায় ফিল্ড হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারে হচ্ছে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। ১০০০ শয্যার হাসপাতালের সব পরিকল্পনা শেষ। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে কাজ। শুধু বিএসএমএমইউ নয়। রাজধানীর কয়েকটি স্পটে আরও অন্তত ৫টি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কাজও শুরু হবে খুব শীঘ্রই। এতে করে দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল সঙ্কট পুরোপুরি কাটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১০০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতালে ৪০০ আইসিইউ ও ৪০০ এইচডিইউ বেড থাকবে। বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা, পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এবার সরকারের নির্দেশ মতো শুরু করতে যাচ্ছে ফিল্ড হাসপাতালের কাজ। আমরা আশা করছি আগামী ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারকে ১ হাজার শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হবে। এখানে থাকবে ৪০০টি আইসিইউ ও ৪০০টি এইচডিইউ বেড। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের টাকা ছাড় করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে হাসপাতালটি চালু করতে হলে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা চলছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। এতে করে মহামারীকালীন রোগীদের চিকিৎসা সঙ্কট কাটবে বলে আমি মনে করি। এর আগে ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা কনভেনশন সেন্টারে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে উদাহরণ তৈরি করেছে। এই ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি হয়ে গেলে আমাদের করোনা রোগীদের বেড-আইসিইউ সঙ্কট পুরোপুরি কেটে যাবে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে গেলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরও ফিল্ড হাসপাতাল করার ঘোষণা দেয়। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডাঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেসব হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেই হাসপাতালগুলোতে কীভাবে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো যায়, জনবল কীভাবে পুনঃবণ্টন করা যায়, আমরা সেদিকে মনোযোগ দিয়েছি। এর বাইরে ফিল্ড হাসপাতাল করা যায় কি না, সে বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। প্রয়োজন হলে ফিল্ড হাসপাতাল করব। এছাড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার বিপজ্জনক রূপ নেয়ার প্রেক্ষিতে রাজধানীতে পাঁচটি ফিল্ড হাসপাতাল করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা নিশ্চিতে আমরা সরকারীর পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে অনেক শয্যা বৃদ্ধি করেছি। ঢাকার বেসরকারী ১০টি হাসপাতালে ১ হাজার ৫০১ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার ডিএসসিসি মার্কেটে সবচেয়ে বড় করোনা হাসপতাল তৈরি করা হয়েছে। এখানে আইসিইউ ১২০০ শয্যা রাখা হয়েছে। ফিল্ড হাসপাতাল আমরা বড় আকারে শুরু করব। শুরু হলেই আপনার দেখতে পারবেন। আশা করি স্বল্প সময়ে মধ্যে এই হাসপাতালগুলো চালু হবে। তবে কোথায় কোথায় ফিল্ড হাসপাতাল করা হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম ও পুলিশ কনভেনশন সেন্টার, গুলশানের শূটিং ক্লাব ভবন, টিকাটুলিতে এফবিসিসিআইর ১৩ তলা ভবন, আর্মি স্টেডিয়াম, তিতুমীর কলেজ ও ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণকে প্রাথমিকভাবে ফিল্ড হাসপাতাল করার স্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রস্তাবিত এসব স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা যাবে কি না তা যাচাইয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থায় ফিল্ড হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, গত দেড় বছরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধাপে ধাপে বাড়ছে। এখন এমন একটা অবস্থা হয়েছে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি করার জায়গা নেই। এমন অবস্থায় ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি হলে রোগীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হবে। কারো মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে বাড়িতে যদি আইসোলেশনে থাকতে না চায় তাহলে এসব হাসপাতালে আইসোলেশনেও রাখা যাবে। ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা গেলে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা কাটানো সম্ভব হবে। তাই আমার মনে হয় এ রকম উর্ধমুখী সংক্রমণের সময় ফিল্ড হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে শুধু অবকাঠামো তৈরি করলেই হবে না দক্ষ ডাক্তার, নার্সসহ পর্যাপ্ত জনবল প্রয়োজন হবে মন্তব্য করে করে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সনাল জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষ জনবল রাতারাতি তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই শুধু ফিল্ড হাসপাতাল করলেই হবে না প্রয়োজন হবে জনবলও। গত বছর আমরা দেখেছি বসুন্ধরা কনভেশনের করোনা হাসপাতালটির কার্যক্রম বেশিদূর এগুতে পারেনি। তাই আমি মনে যেকোন কার্যক্রম শুরু আগে যথেষ্ট গবেষণা করা জরুরী।
×