ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

প্যারিসে ক্রেসিকোভার স্বপ্নপূরণ

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৬ জুন ২০২১

প্যারিসে ক্রেসিকোভার স্বপ্নপূরণ

অবশেষে স্বপ্নপূরণ। মহিলা এককে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন বারবোরা ক্রেসিকোভা। শনিবার ফাইনালে রাশিয়ার অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভাকে পরাজিত করেন তিনি। কঠিন লড়াইয়ের পর চেক প্রজাতন্ত্রের এই তারকা ৬-১, ২-৬ ও ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন পাভলিউচেঙ্কোভাকে। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট লড়াইয়ের পর শিরোপা জয়ের উচ্ছ¡াসে ভাসেন ক্রেসিকোভা। ১৯৮১ সালের পর ২৫ বছরের বারবোরা ক্রেসিকোভারই হলেন প্রথম চেক প্রজাতন্ত্রের কোন মহিলা খেলোয়াড় যিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন ট্রফি হাতে তুললেন। এর আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন হানা মান্ডলিকোভা। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালের লড়াইয়ে প্রথম থেকেই নিজের দাপট অব্যাহত রেখেছিলেন বারবোরা। প্রথম সেট অনায়াসেই ৬-১ গেমে জিতে যান তিনি। এরপর দ্বিতীয় সেটেই দারুণভাবে কামব্যাক করেন রাশিয়ার তারকা। ২-৬ গেমে জিতে দ্বিতীয় সেট নিজের করে নেন এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা। পরে অবশ্য তৃতীয় সেটে দুর্দান্ত কামব্যাক করেন ক্রেসিকোভা। তৃতীয় সেটের দুরন্ত লড়াইয়ে ম্যাচের ফলাফল নিজের দিকে টেনে নেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন চোট পান পাভলিউচেঙ্কোভা। সেজন্য সাময়িক চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। বোঝা যায় কুঁচকিতে চোট পেয়েছেন এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। চোট নিয়েই তৃতীয় সেটে লড়াই করেন রাশান তারকা। কিন্তু পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্রেসিকোভাই হাসেন ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের হাসি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের সোনালি পাতায় জায়গা করে নেন তিনি। ইগা সুইয়াটেক এবং জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোর পর তৃতীয় অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে ওপেন যুগে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের কীর্তি গড়েন তিনি। ২০১৫ সালের পর গ্র্যান্ড¯øামে এটা চতুর্থ নজির। ক্রেসিকোভা শিরোপা জেতায় টানা ষষ্টবারের মতো নতুন রানী পেল ফ্রেঞ্চ ওপেন। সূচনা করেছিলেন গারবিন মুগুরুজা। ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৭ সালে প্যারিস ওপেনের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপার দেখা পান জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো। পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হন সিমোনা হ্যালেপ। ২০১৯ সালে সালে প্যারিস ওপেনের ট্রফিতে চুমো আকেন এ্যাশলে বার্টি। সর্বশেষ গত মৌসুমে ইগা সুইয়াটেক। এবার এই তালিকায় যোগ হলেন ক্রেসিকোভা। রবিবার ডাবলসেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন ক্রেসিকোভা। এবার তিনি জুটি বেঁধেছিলেন ক্যাটেরিনা সিনিয়াকোভার সঙ্গে। ফাইনালে তারা ৬-৪ এবং ৬-২ গেমে উড়িয়ে দেন পোল্যান্ডের ইগা সুইয়াটেক এবং বেথানি মাট্টেক-স্যান্ডসকে। সেইসঙ্গে ইতিহাসের সপ্তম খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেনের একক ও দ্বৈতের শিরোপা জয়ের নজির গড়েন ক্রেসিকোভা। তার আগে সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছিলেন ম্যারি পিয়ার্স, ২০০০ সালে। গত ২১ বছরের মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই রেকর্ড গড়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ক্রেসিকোভা। নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৩৩ নম্বরের এই তারকা বলেন, ‘আমি সুপার খুশি। গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করাট আমার জন্য খুব কঠিন লাগছে। কেননা, যা ঘটেছে তা আমার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। আমি যে গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছি সেটা আসলেই বিশ্বাস করতে পারছি না।’ ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয়ের সৌজন্যে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়েও অগ্রগতি হয়েছে ক্রেসিকোভার। ১৮ ধাপ এগিয়ে এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১৫ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। তবে শীর্ষ দশের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। এ্যাশলে বার্টি যথারীতি সবার উপরে অবস্থান করছেন। এককের পর দ্বৈতেও চ্যাম্পিয়ন; র‌্যাঙ্কিংয়ে তারও ফল পেয়েছেন চেক তারকা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মতো ডাবলসের শীর্ষস্থান দখল করেন তিনি। এরপর নাওমি ওসাকা, সিমোনা হ্যালেপ, এ্যারিনা সাবালেঙ্কা এবং সোফিয়া কেনিন যথাক্রমে দুই থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের সুযোগ ছিল পাভলিউচেঙ্কোভারও। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবে যায় তার। হারলেও র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছেন তিনি। রাশিয়ান তারকা ১৩ ধাপ এগিয়ে এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৯ নম্বরে উঠে এসেছেন। মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড¯øাম টুর্নামেন্টে ক্রিস্টিয়ান ম্যাকহেলকে হারিয়ে মিশন শুরু করেছিলেন পাভলিউচেঙ্কোভা। পরবর্তীতে এজলা তোমলজানোভিচ, এ্যারিনা সাবালেঙ্কা, ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, এলিনা রিবাকিনা এবং শেষ চারে তামারা জিদানসকে পরাজিত করে স্বপ্নের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া জিদানসেকের র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ ধাপ। এখন তার অবস্থান ৪৭। পাভলিউচেঙ্কোভা ৫২তম প্রচেষ্টায় ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিলেন। ফাইনালে হারের পর তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, আমার সেরাটা এখনও দেয়ার বাকি রয়েছে। আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আশা করি পরের বার ফাইনাল জয়ের সুযোগ পাবো। এই মুহূর্তে এটাই আমার মূল লক্ষ্য।’মহিলা এককে ক্রেসিকোভার পর পুরুষ এককে ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হন নোভাক জোকোভিচ। সিসিপাসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। সেইসঙ্গে ৫২ বছরের পুরনো ইতিহাসকে রোঁলা গাঁরোর মঞ্চে ফিরিয়ে আনেন জোকোভিচ। এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতার ফলে, সব গ্র্যান্ড¯øামই অন্তত দুই বার করে জিতে ফেললেন জোকার। এতদিন এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন শুধুমাত্র রয় এমারসন আর রড লেভার। সেই রেকর্ডই রবিবার রাতে স্পর্শ করলেন জোকোভিচ। এদিন গ্রীসের তরুণ তুর্কি স্টেফানোস সিসিপাসের সঙ্গে জোকোভিচের ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনালের লড়াইটা আদৌ জমবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল টেনিসপ্রেমীদের মধ্যে। কিন্তু জোকোভিচ বনাম স্টেফানোস সিসিপাসের দুরন্ত লড়াই দেখে মন ভরে যায় প্রত্যেকের। অসাধারণ লড়লেন সিসিপাস। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। অভিজ্ঞতার কাছেই মূলত হার মানলেন গ্রীক তারকা। দুই সেটে পিছিয়ে থাকার পরেও অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করে ৬-৭ ((৬/৮)), ২-৬, ৬-৩, ৬-২, ৬-৪ গেমে জোকোভিচ পরাজিত করেন সিসিপাসকে।
×