নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১১ জুন ॥ সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে করোনা সংক্রামণ হার প্রায় ৪০ শতাংশ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালে নেই কোন আইসিইউ। সীমান্তগুলোও প্রায় উন্মুক্ত।
বুড়িমারী সীমান্তের ওপারে চেংড়াবান্ধা শ্মশানে শুক্রবার দিনভর লাশ পোড়ানোর দৃশ্য দেখা গেছে। এই শ্মশানে সৎকার হয় বাংলাদেশী ধরলা নদীর পানি দিয়ে। লালমনিরহাটে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই সীমান্ত গ্রামগুলোতে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর খবরও শোনা যাচ্ছে। করোনা পরীক্ষায় সচেতনতার অভাবে সংক্রামণ ও মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান উঠে আসছে না। হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাত্মক শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এলেও কোন আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি সরকারী হাসপাতালে। জেলা সদর হাসপাতালে নেই কোন আইসিইউ ও অক্সিজেন ভেন্টিলেশন দেয়ার ব্যবস্থা নেই। নিজ বাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষকের মৃত্যুতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে সীমান্ত সংলগ্ন বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিপরীতে থাকা চেংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের পাশে ভারতীয় গ্রামে ধরলা নদীর পাড় সংলগ্ন শ্মশানে শুক্রবার সকাল হতে কয়েকটি লাশ পিইপি পরা লোকজনকে পুড়িয়ে ফেলতে দেখা গেছে। ওই শ্মশানের সৎকারের পানি নিতে হয় বাংলাদেশের ভেতরে এসে সীমান্ত নদী ধরলা হতে। এতে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে করোনায় সংক্রমণের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা, কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও এপার-ওপার অবাধ যাতাযাত ‘শূন্যে’ আনতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির মাধ্যমে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত করেনায় সংক্রমণের হার প্রায় ৪০ শতাংশ (অসুস্থ হয়ে চিকিৎসায় আসা সন্দেহজনক রোগীদের সংগ্রহকৃত নমুনার ভিত্তিতে)। এসব রোগীর দেহে প্রায় সকলের ভারতে পাওয়া ধরন থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে।
করোনায় নিহতদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, নিহত দুই স্কুল শিক্ষকের বাড়ি জেলা শহরের সাপ্টানা বাজার মহল্লায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়। এরা হলেন লালমনিরহাট শহরে চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অমিতা দেবো (৪৬) ও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক মন্ডল লুলু (৫৫)। বাড়িতে রেখে তাদের প্রচলিত সকল চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রেখে অথবা অক্সিজেন ভেন্টিলেশনে রেখে শেষবারের মতো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেত। কেননা তারা শ্বাসকষ্টজনিত অক্সিজেন সঙ্কটে মারা গেছে। তাদের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা গেলে বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু জেলা শহরে করোনার কোন আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় গ্রামগুলোতে করোনায় মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে থাকা ভারতীয় সীমান্ত গ্রামের নাগরিকদের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় জরুরী প্রয়োজনে মাত্র এক ঘণ্টা করে তিন ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ার করিডরের গেটগুলো খোলা রাখছে। সেটা সকাল ৯টা, দুপুর ১২টা ও বিকেল ৫টা। তারপর কাঁটাতারের গেটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। সীমান্তে দিনরাত পালা করে বিএসএফকে পাহারা দিতে দেখা যায় কিন্তু বিজিবিকে সেরকম পাহারা দিতে দেখা যায় না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: