ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাণ্ডে

প্রকাশিত: ২২:১৬, ১০ জুন ২০২১

কক্সবাজারে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাণ্ডে

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার \ আশ্চর্য হলেও সত্য। মারা যাওয়ার দুই বছরেরও বেশি সময় আগে প্রখ্যাত এক আইনজীবীকে মৃত দেখিয়ে সরকারী দফতরে কাগজপত্র দাখিল করেছেন মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও এক জামায়াত নেতা। জানা গেছে, কক্সবাজার বারের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহ ও হোটেল মালিক আবুল কাশেম সিকদারকে দুই বছর আগে কাগজপত্রে মৃত দেখিয়েছেন শহরের বালিকা মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও কক্সবাজারের জামায়াত নেতা জাফর উল্লাহ নূরী। তন্মধ্যে এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহ মারা গেছেন মাত্র চারদিন আগে। আবুল কাশেম সিকদার এখনও বেঁচে আছেন। এই অগ্রহণযোগ্য কাণ্ডে হতবাক বনে গেছে গোটা জেলার মানুষ। ওই জামায়াত নেতা কিছুদিন আগে নিজেকে (জামায়াত) আড়াল করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলারও সবকিছু ফাইনাল করেছিলেন। এ খবর সাংবাদিকরা জানতে পেরে সংবাদ প্রকাশ করেছে পত্রিকায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক শহরের বালিকা মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ ও জামায়াত নেতা জাফর উল্লাহ নূরীকে ওই ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন। প্রবীণ আইনজীবী, জেলা বারের সাবেক সভাপতি, কক্সবাজার প্রেসক্লাব, কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছালামত উল্লাহ মৃত্যুবরণ করেছেন বলে দুই বছরের বেশি সময় আগে মাদ্রাসার কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ এবং রেজুলেশনে উল্লেখ করে গোপনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছেন এই সাবেক অধ্যক্ষ। অথচ গত ৬ জুন রাত সাড়ে ৮টায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরদিন ৭ জুন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সিনিয়র এই আইনজীবীর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। অথচ ২ বছরের বেশি সময় আগে ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার কাগজে কলমে এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহর মৃত্যু হয়েছে বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মরহুম এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহর নিজ হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠন সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র থেকে এই চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সদ্য প্রয়াত আইনজীবী ছালামত উল্লাহ কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সে হিসাবে তিনি অতীতে কয়েকবার উক্ত বালিকা মাদ্রাসা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন। রেজুলেশনেও উনার এবং তৎকালীন কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসকসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বাক্ষর আছে। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে কয়েকবার কমিটিতে ছিলেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- গত ১০ জুন ২০১৮ সালে ইসলামী আরবী বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের পদ শূন্য দেখানো হয়েছে। সেখানে আবার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে মৃত্যুজনিত। সে হিসাবে এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহকে প্রায় দুই বছর আগেই রহস্যজনক কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে দেখানো হয়েছে। জটিলতার এখানে শেষ নয়, কমিটির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে যে কেউ বেঁচে থাকলে সেই পদে অবশ্যই তার নাম আসবে। কিন্তু এখানেও চাতুরির কৌশল নিয়েছেন জামায়াত নেতা সাবেক সুপার জাফর উল্লাহ নূরী। জানা গেছে, কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার আরেকজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কক্সবাজারের হোটেল মালিক আবুল কাশেম সিকদার। যিনি বর্তমানে জীবিত আছেন। কিন্তু সেই কমিটি গঠনের সময়ে তাকেও মৃত দেখানো হয়েছে। যদিও তাকে অন্য স্থানে সদস্য করা হয়েছে, তবে রাখা উচিত ছিল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এ ব্যাপারে কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহমুদুল করিম ফারুকী বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, এসব বিষয় আগের অধ্যক্ষের সময়ে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহ এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যথেষ্ট কাগজপত্র আছে। এখন তাকে কেন মৃত দেখানো হয়েছে তা আমি জানি না। এ ব্যাপারে অপর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহ শুধু প্রতিষ্ঠাতা নন- অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । তার হাতধরে এই মাদ্রাসা আজকে এই জায়গায় এসেছে। ২ বছর আগে কমিটি গঠনের সময় তাকে মৃত দেখানোটা বড় বেয়াদবি। আমি সেই বিষয়ে জানার পর তার প্রতিবাদ করেছি। আমার মতে, এটা মস্তবড় অন্যায় হয়েছে। আর যারা করেছেÑ তারা বড় অনিয়ম দুর্নীতি করার জন্য এটা করেছে। এ ব্যপারে তৎকালীন অধ্যক্ষ (বর্তমান অবসরে) মৌলানা জাফর উল্লাহ নূরী বলেন, এ্যাডভোকেট ছালামত উল্লাহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এটা সত্য।
×