ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৩ এপ্রিল ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও, লকডাউন পছন্দ করছে না খেটে খাওয়া মানুষ। ঢাকার সচেতন মানুষদের মধ্যে যারা এর পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন একসময় তারাও এখন আগের মতো উচ্চকণ্ঠ নন। মূলত জীবন এবং জীবিকা মুখোমুখি হয়ে যাওয়ায় নতুন এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে অনেকেই এখন অপারগ হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আলাদা করে বলতে হয় রিক্সা চালকদের কথা। গত এক সপ্তাহের লকডাউনে মহাসঙ্কটে পড়েছেন তারা। পেটে ভাত নেই। বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে নামার চেষ্টা করছেন অনেকে। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে গা ভিজে একাকার। তবুও প্যাডেল থেকে পা সরাতে পারছেন না। অন্য অনেক যানবাহন না থাকায় দূর-দূরান্তের গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু হায়! এই মানুষগুলোর ওপরই হামলে পড়ছে পুলিশ! ‘লকডাউনে বের হইলি ক্যান?’ ‘ভিআইপি রোডে উঠলি কারে জিগায়া?’ আরও কত জেরা। একমাত্র সম্বল রিক্সা কখনও উল্টো করে ফেলে রাখা হচ্ছে। কখনও হাওয়া ছেড়ে দেয়া হচ্ছে চাকার। এ অবস্থায়ও মুখে হাসি ধরে না রাখতে পারলে একটু মান অভিমান করলে রিক্সা চালকদের ওপর চড়াও হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। রাজধানীতে গত কয়েকদিনে এমন কয়েকটি নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে। চলছে সমালোচনাও। এরই মাঝে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় একটি ঘটনা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হলো। তখন ভরদুপুর। তপ্ত রোদে গা যেন ঝলসে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় হঠাৎ একটি রিক্সা দেখে জৈনক যাত্রী দৌড়ে গিয়ে সেটির দখল নিলেন। রিক্সাওয়ালাও যাত্রী পেয়ে খুশি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আসতেই সামনে এসে দাঁড়ালেন ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা। ফাঁকা রাস্তা। হঠাৎ একটা দুটো রিক্সা চলে যাচ্ছিল। কিন্তু কেন যাবে? পুলিশ কর্মকর্তা জেরা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে রিক্সাওয়ালাকেই নির্দেশ দিলেন তার রিক্সার চাকার হাওয়া ছাড়তে। অনুনয় বিনয়ে কাজ হলো না। চাকার হাওয়া নিজ হাতে ছাড়লেন চালক। কথা ছিল, এর পর রিক্সাটি ঠেলে অন্তত নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু অন্য এক চালক পুলিশের কথায় জবাব দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন, তার সব রিক্সা তাই উল্টে রাখা শুরু হলো। ফেঁসে গেলেন ওই রিক্সা চালকও। তার পিঠ বেয়ে ঘাম ঝরছে। দেখে মনে হয় পুকুর থেকে ডুব দিয়ে এসেছেন। ঘামে শার্ট লেপ্টে গেছে। তবুও এতটুকু মায়া হলো না পুলিশের। পুলিশের কঠোর অবস্থানের ফলে খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো মহাবিপদে পড়েছে। দাবি উঠেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি অহরহ চলছে। রিক্সা, সিএনজি, অটোরিক্সাকেও ছাড় দেয়া হোক। অসহায় হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোরও পরামর্শ দিচ্ছেন মানবিক মানুষেরা। বার্তাটি পুলিশ বা প্রশাসন গ্রহণ করেছেন কি? গুণমান বেড়েছে ঢাকার বায়ুর ॥ লকডাউনে দূষণ কমেছে ঢাকায়। বাতাসে ধুলাবালি কম। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিস, কলকারখানা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বাতাসের মান অনেকটাই উন্নত। যানবাহনের ধোঁয়া, বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কর্মকা-, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি এবং কলকারখানা বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। এই উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকায় বায়ুরমান ভাল হয়েছে বলে জানা গেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স সূচকে ৫০-এর নিচে স্কোর থাকলে বাতাসের মান ভাল বলে ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বলা হয় গ্রহণযোগ্য। আর একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের জন্য সংবেদনশীল, স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। একিউআই মান ২০১ থেকে ৩০০ হলে জরুরী অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকার বায়ুমান ১৫০-এর নিচে। এ বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বায়ুমান তুলনা করলে এ অবস্থা অনেকটাই ভাল। কোয়ালিটি ইনডেক্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ঢাকায় সবচেয়ে খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর বায়ু ছিল। এই তিন মাসে ঢাকায় বায়ুর গুণমান ১২ দিনের জন্য বিপজ্জনক, ৫৮ দিনের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ১৯ দিনের জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বছর একিউআইয়ের দৈনিক গড় স্কোর ছিল জানুয়ারিতে ২৬১, ফেব্রুয়ারিতে ২৩১ এবং মার্চ মাসে ২১১। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলছেন, লকডাউনে বায়ুমানের উন্নতিতে এটা পরিষ্কার যে এতদিন বায়ুদূষণের উৎসগুলোর কথা বলা হচ্ছিল, এখন বাস্তবে প্রমাণিত হলো। বায়ুমান উন্নয়নে কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে সেটাও চিহ্নিত হলো। সরকার যে নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা ফেলে না রেখে এগিয়ে নিতে হবে। জনসাধারণসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার নির্মোহ বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য বাসস্থান ॥ একটি বেশ ভাল খবর। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য মানসম্পন্ন ও আধুনিক আবাসনস্থল নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজধানীর গাবতলীতে নির্মাণাধীন এই আবাসনস্থলে থাকবে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ৭৮৪টি পরিবার। গত বুধবার ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্মাণাধীন ‘গাবতলী পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস’ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জানান, ২২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাসে ১৫ তলাবিশিষ্ট চারটি ভবন ছাড়াও চার তলাবিশিষ্ট একটি স্কুল ভবনও নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে টয়লেট, রান্নাঘর ও বারান্দাসহ থাকার কক্ষ সংবলিত ৭৮৪টি ফ্লাটের প্রতিটিতে একটি করে পরিবারের আবাসনের সুব্যবস্থা থাকবে। মেয়র বলেন, পূর্বে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসনের জন্য কোন সুব্যবস্থা ছিল না, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তারা বসবাস করতেন। পর্যায়ক্রমে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পরিবারের জন্যই মানসম্পন্ন আবাসনের সুব্যবস্থা করা হবে জানান তিনি। চমৎকার এ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন মেয়র।
×