ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফনিন্দ্র সরকার

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন ও বহুজাতিক সামরিক অনুশীলন

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০২১

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন ও বহুজাতিক সামরিক অনুশীলন

২৮ জুলাই ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে মানবসভ্যতা বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়। শান্তি বিঘিœত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিপুঞ্জ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ১০ জানুয়ারি ১৯২০ সালে। জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাবক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবনায় জাতিপুঞ্জ গঠিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক এ সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি। ১৯৩৯ সালে জাতিপুঞ্জ বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই একই বছর ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এ যুদ্ধে লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিশ্ব হয়ে ওঠে অশান্ত। অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় বিশ্বে পরিণত করতে নতুন করে জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক এক সংগঠনের জন্ম হয় ১৯৪১ সালের ১২ জুন। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এ সংগঠনের যাত্রা শুরু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটার মাত্র কয়েকদিন আগে যথাক্রমে ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে মরণাস্ত্র বোমা (এটম বোমা) নিক্ষিপ্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে বিশ্বে। উল্লেখ্য, জার্মানি ব্রিটেনকে আক্রমণ করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের ৯টি প্রবাসী সরকার পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে লন্ডনের জেমস্ প্রাসাদে লন্ডন ঘোষণার মধ্য দিয়েই ‘জাতিসংঘ’ নামক আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার শুভ সূচনা হয়। জাতিসংঘ বর্তমানে বৃহৎ পরিসরে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ১২ জুন ১৯৪১ সালে লন্ডন ঘোষণার পর ১৪ আগস্ট ১৯৪১ সালে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলটন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ নৌতরী (প্রিন্সেস অব ওয়েলস্)-এ মিলিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যে ঘোষণা দেয়া হয় সেটি আটলান্টিক সনদ হিসেবে সাক্ষ্য বহন করছে। এরপর মস্কো সম্মেলন, তেহরান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ওয়াশিংটনের ডাম্বারটন ওক্স ভবনে ২১ আগস্ট ১৯৪৪ সালে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণীত হয়। এতে স্থায়ী পরিষদ গঠন ও স্থায়ী সদস্য নির্বাচন সেই সংগঠনের নামকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন সম্মেলনে মিলিত হয়। এই সম্মেলনে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকে। পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে ইউক্রেনের ইয়ান্টায় অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত হয়। এতে ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ভেটো পাওয়ারের স্বীকৃতি লাভ করে। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), ফ্রান্স ও চীন। ১৯৪৫ সালে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সানফ্রান্সিসকোতে সম্মেলন হয়। বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। ১১১ ধারা সংবলিত জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর পোল্যান্ড জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষর করে। ৫১টি দেশ নিয়ে জাতিসংঘের যাত্রা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিসর বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ১৯৩টি দেশ জাতিসংঘের সদস্য হলেও ভেটো পাওয়ারের দেশ ৫টিই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য। ২৯তম অধিবেশনে ১৯৭৪ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাঙালী জাতিকে বিশ্ব দরবারে বীরের জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি সেদিন শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করে অনন্ত মহিমায় মহিমান্বিত করেন মানবসভ্যতাকে। ১৯৭৩ সালে ২৩ মে বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত হন। উল্লেখ্য, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি ও পিয়েরে কুরি দম্পতি বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে যে অবদান রেখেছেন তা স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫০ সালে এ পদক প্রবর্তন করে। ফ্যাসিবাদবিরোধী, সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম ও মানবতার কল্যাণে শান্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ত্যাগের মহিমা স্থাপনকারীদের ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করা হয়। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু নিপীড়িত জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখেছেন তার স্বীকৃতি হিসেবেই তিনি ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির পিতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ১১ এপ্রিল ঢাকা সেনানিবাসস্থ মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য না হলেও গণমাধ্যমের কল্যাণে এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে যতটা সক্ষম হয়েছি তার প্রেক্ষিতেই কিছু অভিব্যক্তি প্রকাশের প্রয়াস পাচ্ছি। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘আর্মি চিফস কনক্লেভ’, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে সেনাপ্রধান সমঝোতা। জাতিসংঘ শান্তির অগ্রসেনা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। এতে মূল ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। ঢাকা সেনানিবাসের মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘ফিউচার ট্রেন্ড অব গ্লোবাল কনফ্লিক্ট : রুল অব ইউ এন পিসকিপারস।’ অর্থাৎ ভবিষ্যত বিশ্বব্যাপী সংঘাতের প্রবণতা : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর ভূমিকা... জেনারেল আজিজ আহমেদ উল্লেখ করেছেন, অরাষ্ট্রীয় শক্তির উত্থান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রাজনৈতিক সঙ্কট এবং পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থার কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশন ক্রমশই চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কমিউনিটি বেজড ইনফরমেশন শেয়ারিং, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার জাতিসংঘ সনদের পরিমার্জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো আরও শক্তিশালীকরণের ওপরে জোর দেয়া উচিত। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যাত্রাকালীন সময়ে যে ১১১টি ধারা সম্বলিত সনদ স্বাক্ষরিত হয় এর উল্লেখযোগ্য কোন পরিমার্জন সম্ভব হয়নি। অথচ জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের বয়স ৭৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। যে জন্য পৃথিবী আজও বড় অশান্ত, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। পৃথিবীর মানুষ যেন সুকুমার বৃত্তির কথা ভুলে সাধারণ প্রাণীর মতো নি¤œতর বৃত্তিকে চারিতার্থ করার অশুভ বাসনা পোষণ করছে। এ বাসনা পূর্তির জন্য সে দৈহিক এবং বৌদ্ধিক শক্তি বিস্তার করে চলেছে। তাতে আপাত সাফল্যে সে গর্বিত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ ক্ষুদ্র আত্ম প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ। এ কাজ প্রতিহত হলেই দ্বন্দ্ব এবং শান্তি ভঙ্গ। আবার ভোগ্যবস্তু আবিষ্কার ও উপভোগে অনেক আনন্দ থাকলেও অন্তে অবসাদ ও দুঃখ। এর প্রমাণ মানুষের অভিজ্ঞতায়। যার আছে সে আরও চায়, না পেলে অতৃপ্ত, যার নেই সে চায় সেও অতৃপ্ত। স্বার্থবুদ্ধিতে দ্বন্দ্বস্বার্থ ত্যাগেই শান্তি... রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি জীবনে দুটোতেই এ কথা প্রযোজ্য।’ কর্মবহুল জীবনে মানুষ শান্তি চায়। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আন্দোলিত জলে সূর্যের প্রতিবিম্ব অস্পষ্ট। অসচ্ছ কাচে সূর্যের প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয় না। মানুষ শুদ্ধ ও শান্ত স্বভাবের অধিকারী না হলে শান্তির প্রভাব উপলব্ধি হয় না। স্বার্থবুদ্ধিপুষ্ট ও অব্যবস্থাচিত্ত মানুষের হাতে অস্ত্র অপর মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। কিন্তু স্থিত-প্রজ্ঞ মানুষ সেই একই অস্ত্র মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি অস্ত্র সমৃদ্ধিশালী যে রাষ্ট্রের নীতি স্থিত-প্রজ্ঞ নয় সে রাষ্ট্রের অস্ত্র, গোলাবারুদ মানব সংহারে ব্যবহার হবে তা স্বাভাবিক। অরাষ্ট্রীয় শক্তির উত্থান ঘটে কোন না কোন রাষ্ট্রীয় শক্তির ইন্ধনেই, এ সত্যকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ১১ এপ্রিলের সেমিনারে ভারতের সেনাপ্রধান এমএস নারভানে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষীদের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তা মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর জোর দেন। জাতিসংঘের মতবাদের নমনীয়তা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যথার্থ লজিস্টিকস সহায়তা নিশ্চিতকরণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে বাজেট বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব¡ারোপ করে বক্তব্য রাখেন তিনি। সেমিনারে প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরূপ প্রয়োগ এবং চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শান্তিরক্ষার প্রকৃতি ভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। নজিরবিহীন এই মহামারীকালে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি শান্তিরক্ষা বাহিনী। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থবহ পারস্পরিক সহযোগিতা, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরী অবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি অতীব প্রয়োজনের কথা তার বক্তব্যে উঠে আসে। জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে এই সংগঠন কী যথার্থ বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছে এ প্রশ্নটি আজ সামনে আসছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক অনুষ্ঠানের সমাপনী দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসে সমাপনী অনুষ্ঠন অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ভারতের সেনাপ্রধান, ভুটানের সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ ও শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান। পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত ও সিঙ্গাপুরের সেনা প্রতিনিধিগণ। ঘাটাইলের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী খুবই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে, কোন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অপরিহার্য। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে গেছে, যা উদ্বেগজনক। এ পর্যন্ত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের মধ্যে ১৫৮ জন প্রাণোৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সঙ্কটগুলো মোকাবেলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করা সময়ের দাবি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বর্র্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শক্তির আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে নতুন নতুন হুমকির উপাদান সৃষ্টি হয়েছে।’ এসব হুমকি মোকাবেলা করে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্থিত-প্রজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গিতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অত্যন্ত নিখুঁত এবং সফলভাবে বহুজাতিক সামরিক অনুশীলন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি বিদেশী আগত অতিথিদেরও অভিনন্দন জানান। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে কোন জাতীয় দুর্যোগে দেশ ও জাতির সেবায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। বিদেশী শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রেখেছে বিশ্বে। লেখক : আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক [email protected]
×