ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব শান্তির চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১৭ এপ্রিল ২০২১

বিশ্ব শান্তির চ্যালেঞ্জ

বাঙালী ও বাংলা ভাষার পরিচিতি বেড়েছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আঞ্চলিক বৈষম্য পেছনে ফেলে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তারা আজ ওই সব দেশের মানুষের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ এক গর্বিত অংশীদার। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অর্জন জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানটি ধরে রাখা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মজ্জা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা দুটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করে ইরাকে (ইউনিমগ) এবং নামিবিয়ায় (আনটাগ)। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইউনিকম যান্ত্রিক পদাতিক বাহিনীর অংশ হিসেবে কুয়েতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্টিনজেন্ট পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশ ইউএনপিকেওর (ইউনাইটেড ন্যাশনস পিসকিপিং অপারেশনস) অংশ হিসেবে প্রায় ২৫টি দেশে ৩০টিরও বেশি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। যেসব দেশের মিশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিওন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরিকোস্ট ও ইথিওপিয়া। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক জনবল অংশগ্রহণ করেছে। তখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ হাজার ৮৫৫ জন (সামরিক ও আইন প্রয়োগকারী) জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের আওতায় বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। সোমবার অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা এখন চ্যালেঞ্জিং। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের এই সময়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নতুন সঙ্কট নিরসনে শান্তিরক্ষীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ওপর অবশ্যই জোর দিতে হবে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন হুমকির উপাদান সৃষ্টি হয়েছে। তাই নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের এই সময়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের নতুন সঙ্কট নিরসনে বিশেষ করে করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলায় শান্তিরক্ষীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরও বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। এযাবত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণের মধ্যে ১৫৮ জন প্রাণোৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সঙ্কট মোকাবেলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে অত্যন্ত নিখুুঁত এবং সফলভাবে এই অনুশীলনটি আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার শান্তিদর্শন প্রতিষ্ঠায় এই বহুজাতিক অনুশীলনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ব শান্তি সুসংহত করার প্রয়াসে দেশ-বিদেশের শান্তিরক্ষীদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)’ প্রতিষ্ঠা অন্যতম। ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতির প্রত্যাশা বিশ্ব শান্তি নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
×