ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্রি হচ্ছে নানা ডিগ্রী

রাজধানীতে ভুয়া বিদেশী ভার্সিটির শাখা

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১১ মার্চ ২০২১

রাজধানীতে ভুয়া বিদেশী ভার্সিটির শাখা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অস্তিত্বহীন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এবার রাজধানীতে ভুয়া স্টাডি সেন্টার পরিচালনার খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনে। অস্তিত্বহীন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ‘আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ’ এর নামে ভুয়া স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছে লিঙ্কনস হায়ার এডুকেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে বিক্রি হচ্ছে পিএইচডি ডিগ্রী। ভুয়া ও অবৈধ এ প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থী ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও। ঘটনা জানার পর স্টাডি সেন্টার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মঞ্জুরি কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের শতর্ক করে দিয়ে বলেছে, অস্তিত্বহীন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ‘আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউএসএ’-এর নামে রাজধানী ঢাকায় ভুয়া স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছে লিঙ্কনস হায়ার এডুকেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান। অস্তিত্বহীন বিশ্বদ্যিালয়টির নামে একটি ওয়েববসাইট (যঃঃঢ়ং:// িি.িধরঁবফঁ.ড়ৎম) খোলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে যা ইউজিসির নজরে এসেছে। ইউজিসি যাচাই করে দেখেছে যে, ইউএসএ’র ক্যালিফোর্নিয়ায় আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হচ্ছে বাস্তবে তার কোন অস্তিত্বই নেই। ইউজিসি আরও বলেছে, ভুয়া স্টাডি সেন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি দেখভাল করছে লিঙ্কনস হায়ার এডুকেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর শাহজালাল টাওয়ারে এজন্য একটি অফিস খোলা হয়েছে (যঃঃঢ়://িি.িধরঁবফঁ.ড়ৎম/রহফবী.ঢ়যঢ়?ঢ়ধমব=রহঃবৎহধঃরড়হধষথপড়ষষধনড়ৎধঃরড়হ)। ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমপিএইচ, এমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সম্প্রতি ইস্যুকৃত বিজ্ঞপ্তিটি ইউজিসির নজরে এসেছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পেশাল স্কলারশিপ এবং ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য পাঁচ হাজার এক শ’ এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য দশ হাজার ছয় শ’ ডলার নিচ্ছে। আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ’র ওয়েবসাইটটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় এটি ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা থেকে খোলা হয়েছে। আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত একটি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। ইউজিসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রসেফর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার ইত্যাদিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রফেসর চন্দ বলেন, অনুমতি ছাড়া বৈধ কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করা অবৈধ। এক্ষেত্রে অস্তিত্বহীন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনা করা আইনের চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে তিনি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তথাকথিত এই বিশ্ববিদ্যালয়/ স্টাডি সেন্টার থেকে প্রাপ্ত পিএইচডিসহ যেকোন ডিগ্রী ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। ইউজিসির এ সদস্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে অস্তিত্বহীন বিদেশী এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভুয়া স্টাডি সেন্টার বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর শাহজালাল টাওয়ারে অবস্থিত ভুয়া এ প্রতিষ্ঠানের পেছনে আছে ড. সেলিম ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি। যার সঙ্গে কাজ করছেন সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত কয়েকজন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যেই পিএইচডি ডিগ্রী কিনে নামের আগে ‘ডক্টর’ ব্যবহার করছেন অনেক সরকারী উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা। আছেন সমাজের অনেক তথাকথিত গণ্যমান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিও। যারা এখান থেকেই ডক্টরেট ডিগ্রী কিনে নামের আগে ‘ডক্টর’ ব্যবহার করছেন। তবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দফতরের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার এখান থেকে নেয়া ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রী ধরা পরার পর তা বাতিল করা হয়েছে। আবার কিছু মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তার ডিগ্রী বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হলেও তারা সেই নির্দেশ মানছেন না। প্রতিষ্ঠানটির অফিসের একটি সেলফোন নম্বরে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন তাদের থেকে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের অনেক বড় কর্মকর্তা পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছেন। তবে ওই কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানকে বৈধ বলে দাবি করেছেন।
×