ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস দিতে অনাগ্রহী পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৮ মার্চ ২০২১

সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস দিতে অনাগ্রহী পেট্রোবাংলা

রশিদ মামুন ॥ বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পুরনো প্রযুক্তির সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ দিতে অনাগ্রহী পেট্রোবাংলা। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, একই জ্বালানি খরচে সিম্পল সাইকেলের তুলনায় কম্বাইন্ড সাইকেলে দেড় গুণ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সিম্পল সাইকেলে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। পিডিবি বলছে, সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রকে রি-পাওয়ারিং করে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চালাতে যে গ্যাসের প্রয়োজন হতো তা দিয়েই ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া ঘোড়াশালে ২১০ মেগাওয়াটের তিন এবং চার নম্বর ইউনিট রি-পাওয়ারিং করে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে রূপান্তর করছে পিডিবি। অর্থাৎ এখানেও ২১০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র পরিচালনায় যে গ্যাস প্রয়োজন হতো তা দিয়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় এখনও দেশে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে রয়ে গেছে। যেগুলোতে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। সঙ্গত কারণে সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের জন্য পিডিবিকে একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে। ওই বৈঠকে পেট্রোবাংলার তরফ থেকে জানানো হয়, এখন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা নির্ণয়ের কাজ চলছে। কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা নির্ণয়ের কাজ শেষ হলে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায় তারা। সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদনের পুরাতন প্রযুক্তি। এ ধরনের কেন্দ্র গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের পর প্রকৃতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ ছেড়ে দেয়। যা সাধারণত আগে অপচয় হতো। এখন কম্বাইন্ড সাইকেল প্রযুক্তি আসায় সিম্পল সাইকেলের ছেড়ে দেয়া সেই তাপ দিয়েই আরেকটি কেন্দ্র বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে। সিম্পল সাইকেল প্রযুক্তির এই রূপান্তরকেই কম্বাইন্ড সাইকেল বলা হয়। পিডিবি সূত্র বলছে, সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রগুলোতে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয় অনেকটা নতুন কেন্দ্র নির্মাণের কাছাকাছি খরচ পড়ে এই প্রক্রিয়াতে। আবার অনেক পুরাতন সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করা সম্ভব হয় না। তাহলে আর সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রটিও চলে না। সঙ্গত কারণে প্রযুক্তিগত দিকটি সবার আগে বিবেচনা করতে হয়। দেশে অনেক আগে থেকে যে কেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোই সিম্পল সাইকেল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন করে যেসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর সব কটিই কম্বাইন্ড সাইকেল। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট আকারের রেন্টাল এবং আইপিপি কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে যেগুলো ইঞ্জিন বেইজড বিদ্যুত কেন্দ্র। পেট্রোবাংলা বলছে, এখন বিদেশ থেকে প্রতি ঘনফিট এলএনজি ২৭ টাকায় কিনে এনে পিডিবির কাছে চার টাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে পেট্রোবাংলা প্রতি ঘনফিটে ২৩ টাকা লোকসান করছে। কিন্তু এই গ্যাসেরই অপচয় করছে পিডিবি। ফলে গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, সিম্পল সাইকেলে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন হয় কম্বাইন্ড সাইকেলে তা দিয়ে কমপক্ষে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিও পাওয়া যায়। ফলে আমরা একই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করে দেড়গুণ কিংবা তার বেশি বিদ্যুত পেতে পারি। বিদ্যুত উৎপাদন বেশি হলে আমাদের গ্যাস কম সরবরাহ করলেও হবে। এতে পেট্রোবাংলার ওপর গ্যাস সরবরাহের চাপ কমবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে দেশেরই লাভ হবে।
×