ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাত কলেজের পরীক্ষা

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সাত কলেজের পরীক্ষা

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী বিশেষ করে পরীক্ষার্থীদের আবারও নামতে হয়েছে রাজধানীর রাজপথে। উল্লেখ্য, করোনাজনিত পরিস্থিতিতে টানা ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গত জানুয়ারিতে অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ ও তৃতীয়বর্ষের পরীক্ষা চলছিল। কিন্তু হঠাৎ পরীক্ষা গ্রহণ স্থগিত করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকার নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে নেমে এসে সড়ক অবরোধ করে পরীক্ষার্থীরা। ফলে অসহনীয় যানজটসহ ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ। স্নাতক (সম্মান) চতুর্থবর্ষের মাত্র একটি পরীক্ষা বাকি ছিল। তীব্র সেশনজটসহ এমনিতেই জর্জরিত ও বিক্ষুব্ধ অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী। তাদের অন্যতম সমস্যা নিয়মিত সেশনজটসহ যথাসময়ে পরীক্ষা না নেয়া এবং বিলম্বে ফল প্রকাশ করা। যার জন্য প্রধানত দায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থগিতের একদিন পরই পরীক্ষা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। তবে একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কেননা, তাদের বিভিন্ন বর্ষের কয়েকটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এক্ষেত্রেও জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাঞ্ছনীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের নামকরা সরকারী সাতটি কলেজ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গলার কাঁটা’ অথবা বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে তা না পারছে গিলতে, পা পারছে উগড়ে দিতে। প্রথমত শিক্ষার মানোন্নয়ন, দ্বিতীয়ত সেশনজট কমানোর জন্য ঢাবির অধিভুক্ত করা হয় সাতটি কলেজকে। এর পেছনে জেদ ও ক্ষমতা দেখানোর অভিলাষ থাকলেও এতদিন পর্যন্ত উন্নতি তো দূরে থাক, প্রায় কিছুই করতে পারেনি ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য সেই সদিচ্ছা ও প্রস্তুতিও ছিল না তাদের। ফলে সময় সময় সাতটি কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-আন্দোলন ও সড়ক অবরোধ চলছেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, তড়িঘড়ি করে ৭টি সরকারী কলেজ অধিভুক্ত করা ভুল ছিল। এতদিনে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর। দফায় দফায় যথাসময় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও ফল প্রকাশ, সনদ প্রদান, সর্বোপরি সেশনজট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল-সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, ভিসির কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচী দিয়ে শিক্ষাজীবন ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রুখে দাঁড়িয়েছে অধিগ্রহণের প্রতিবাদে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। এ নিয়ে পুলিশী নির্যাতন, টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপে সাধারণ শিক্ষার্থীর অন্ধত্ববরণসহ ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রহৃত হওয়ার অভিযোগও আছে। মামলাসহ নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে পরাজয় তথা ব্যর্থ হয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করেছে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ৭টি কলেজের দুর্ভাগা শিক্ষার্থীদের প্রতি। প্রকৃতপক্ষে এটি ঢাবি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত ব্যর্থতার নজির হয়ে আছে। ঢাবিরও ভাবা উচিত ছিল অধিগ্রহণ শুধু করলেই হবে না, অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ, প্রশাসন পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য স্বতন্ত্র জনবল ও ব্যবস্থাপনাও আবশ্যক। এর অনুপস্থিতিতিতে ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান, বিপর্যস্ত শিক্ষাজীবনসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যত। শিক্ষার ক্ষেত্রে এরকম নৈরাজ্যকর পরিবেশ-পরিস্থিতি কোন অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ অন্বেষণ করতে হবে ঢাবি কর্তৃপক্ষকেই। বের করতে হবে শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধানের পথ। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দেশব্যাপী কলেজগুলোর বিরাজমান নানা সমস্যার জরুরী সমাধানও প্রত্যাশিত।
×