ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সন্দেহে ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত সাইফ এখন কারাগারে

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২১ জানুয়ারি ২০২১

জঙ্গী সন্দেহে ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত সাইফ এখন কারাগারে

শংকর কুমার দে ॥ ফ্রান্স থেকে ফেরত পাঠানো সাইফ রহমানের মাকেও খুঁজছে পুলিশ। জঙ্গী সন্দেহে সাইফকে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ফ্রান্স পুলিশ। আন্তর্জাতিক জঙ্গী নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশী ওই যুবক ফ্রান্সের পুলিশের হাতে আটক ছিল দুই মাস। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসার পর ওই যুবককে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। এর পর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানোর পর রিমান্ড মঞ্জুর না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। তাকে ফেরত পাঠানোর কয়েকদিন পর বাংলাদেশে ফিরে আসে ওই যুবকের মা জেরিন রহমান। মা জেরিন রহমানকেও এখন খুঁজছে পুলিশ। বাংলাদেশের পুলিশের কাছে সাইফ রহমানের জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নথিপত্র পাঠিয়েছে ফ্রান্স পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেই বাংলাদেশী যুবক সাইফকে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ফ্রান্স পুলিশ। সাইফ প্যারিসে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্স পুলিশ তার ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস পরীক্ষা করে একাধিক জিহাদী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ পায়। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় দুই মাস ফ্রান্সের প্যারিসের ডিপোর্টেশন সেন্টারে রেখে তদন্ত করেন ফ্রান্সের গোয়েন্দারা। তদন্তে সাইফের বিরুদ্ধে অনলাইনে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জিহাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে খোঁজ পান তারা। বিভিন্ন জঙ্গী নেতার সঙ্গে তার কথোপকথনের বেশকিছু নথিও উদ্ধার করা হয়। এর পরই প্যারিসের ডিপোর্টেশন সেন্টার থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে। সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি সাইফ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর পরই তাকে আটক করে সিটিটিসির একটি টিম। এর পর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চায় সিটিটিসির তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করার কারণে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি মেলেনি। তবে সাইফের বিরুদ্ধে ফ্রান্স থেকে যেসব নথিপত্র এসেছে তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে। জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হবে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও আদালতের কাছে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করবে সিটিটিসি। সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, ফ্রান্স থেকে পাঠানো নথি ঘেঁটে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, বাবা-মার একমাত্র সন্তান সাইফ রহমান। তাদের গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহারের নবাবগঞ্জে। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান। রাজধানীর ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠান- ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল থেকে ২০১৪ সালে ‘ও’ লেভেল ও অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল সম্পন্ন করেন। পরে ২০১৬ সালে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য ফ্রান্সের প্যারিসে যান। সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব ডি-সেরগি পন্তাইজে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এর পর তিনি প্যারিসের ইউনিভার্সিটি অব প্যানথিয়ন আসাসে প্রশাসন শাখায় খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগদান করেন। সেখান থেকে আটক হন। অধ্যয়ন ও চাকরিকালীন তার ওপর নজরদারি করছিল ফ্রান্স পুলিশ। একপর্যায়ে তাকে বাসা থেকে আটক করা হয়। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফ্রান্স পুলিশ জানিয়েছে, সাইফ প্যারিসে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্স পুলিশ তার ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস পরীক্ষা করে একাধিক জিহাদী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ পায়।
×