ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ডাবল সেঞ্চুরিতে রুটের অনন্য অর্জন

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২০ জানুয়ারি ২০২১

ডাবল সেঞ্চুরিতে রুটের অনন্য অর্জন

টেস্টে ১২টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবার ওপরে প্রয়াত স্যার ডন ব্র্যাডম্যান। ক্যারিয়ারে ১১ ডাবল সেঞ্চুরি সাবেক লঙ্কান তারকা কুমার সাঙ্গাকারার। ৯টি ডাবল আরেক গ্রেট ব্রায়ান লারার। জো রুটের ৪টি ডাবল সেঞ্চুরির ওপর আছেন আরও ১৩ জন। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে রুট তাহলে অনন্য হন কিভাবে? প্রথমত, এই চার ডাবল সেঞ্চুরির দুটিই রুট করেছেন ‘অধিনায়ক’ হিসেবে, ইংল্যান্ডের প্রায় দেড় শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এমন কীর্তি আর কারও নেই। গলে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটের দাপুটে জয়ে ২২৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন রুট, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোন ইংলিশ ব্যাটসম্যানের যা ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। একেবারে যে রান পাচ্ছিলেন না, তা নয়। তবে ৪০-৫০ রানের ইনিংসগুলো বড় করতে পারছিলেন না ইংল্যান্ড অধিনায়ক। অনেকে বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ ও কেন উইলিয়ামসনের ফ্যাব ফোরের তালিকা থেকে তাকে বাদ দিতে চাচ্ছিলেন। তখনই দারুণ এই ডাবল সেঞ্চুরিতে জবাব দিলেন রুট। গল টেস্টে ২৯১ বলে ডাবল সেঞ্চুরি ছেঁাঁয়া রুট শেষ পর্যন্ত ৩২১ বলে ১৮ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন ২২৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। ইংল্যান্ডের হয়ে তার চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি আছে আর কেবল এ্যালেস্টার কুক (৫টি) ও ওয়ালি হ্যামন্ডের (৭টি)। ইংল্যান্ডের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে এশিয়ার মাটিতে ডাবল-সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন রুট। এর আগে এ্যালিস্টার কুক, মাইক গ্যাটিং, টেড ডেক্সটার ও গ্রায়েম ফ্লাওয়ার এশিয়ার মাটিতে ডাবল-সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর দেশের বাইরে ইংল্যান্ডের ‘অধিনায়ক’ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডাবল-সেঞ্চুরির রেকর্ডও রুটের ঝুলিতেই। বিদেশের মাটিতে দুটি ডাবল-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। একটি করে ডাবল-সেঞ্চুরি আছে কুক, ডেক্সটার ও লিওনার্ড হটনের। খেলা ছেড়ে দেয়ার পরও গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কথা মনে রাখবেন জো রুট। শুধু ডাবল সেঞ্চুরি নয়, পাশাপাশি একাধিক মাইলফলক এবং রেকর্ড গড়েন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক এবং সফরকারী খেলোয়াড় হিসেবে গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এখন তার দখলে। ইংল্যান্ডের অষ্টম ব্যাটসম্যান ও দ্বিতীয় দ্রুততম (১৭৮ ইনিংসে) আট হাজার রানের মাইলফলকে পা রেখেছেন রুট। তার ওপরে আছেন কেবল কেভিন পিটারসন (১৭৬ ইনিংস)। সাদা পোশাকে দেশটির ৭ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রুট (৮০৫১ রান)। এক থেকে ছয় পর্যন্ত বাকিরা হলেন এ্যালিস্টার কুক, গ্রাহাম গুচ, এ্যালেক্স স্টিয়ার্ট, ডেভিড গাওয়ার, কেভিন পিটারসন এবং জিওফ বয়কট। আট হাজার রান করা ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় রুটের। তার ব্যাটিং গড় ৪৯ দশমিক ০৯। দ্বিতীয়স্থানে আছেন জেওফ্রে বয়কট। ১০৮ ম্যাচে ৪৭ দশমিক ৭২ গড়ে ৮১১৪ রান করেছেন বয়কট। এর আগে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুত ৬ হাজার ও ৭ হাজার টেস্ট রানের পথেও রুটের লড়াইটা ছিল দুই গ্রেট কুক ও পিটারসেনের সঙ্গে। ভারতের নাগপুরে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর টেস্টে অভিষেক। ২০১৮ সালের সেই ভারতের বিপক্ষেই বিপক্ষেই স্পর্শ করেন ৬ হাজার রানের মাইলফলক। মাত্র ৫ বছর ২১২ দিনেই রুট পূর্ণ করেন ৬ হাজার রান। রুট দ্রুতসময়ে ৬ হাজার রান করতে ছাড়িয়েছিলেন কুককে। ইংলিশ এই ওপেনারের ৬ হাজার করতে লেগেছিল ৫ বছর ৩৩৯ দিন। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানেও আছেন ইংলিশ আর এক ক্রিকেটার-কেভিন পিটারসেন। টেস্টে ৬ হাজার করতে পিটারসেনের লেগেছিল ৬ বছর। এরপর আছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার (৬ বছর ৮৪ দিন) ও পাঁচ নম্বর অবস্থানটাও ইংলিশ আরেক ক্রিকেটার এ্যান্ড্রু স্ট্রউসের। ইংল্যান্ডের ৭ম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮ হাজারি রানের ক্লাবে প্রবেশ করেছেন রুট। যেটা সারা বিশ্বের হিসেবে ৩১তম। এছাড়া ইংল্যান্ডের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দুটি দ্বিশতকের দেখা পেয়েছেন এই ডানহাতি। গল টেস্টে জয়ের জন্য শেষ দিন দরকার ছিল আর ৩৬টি রান। তৃতীয় দিন দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে যে অঘটনের আভাস দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, তা পাত্তা পায়নি নতুন সকালে। চতুর্থ দিন সকালে আর মাত্র ৯.২ ওভারে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ৭৪ রান তুলে নেয় রুটের দল। শ্রীলঙ্কায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ৭ উইকেটে জিতে শুরু করেছে ইংল্যান্ড। এ নিয়ে দেশটিতে তারা ইংলিশরা জিতল টানা পাঁচ টেস্ট। ২০১২ সালের এপ্রিলে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে কলম্বোয় ৮ উইকেটের জয়ে শুরু। দুই টেস্টের সিরিজে সমতা ফেরানো জয়ের পর পরের সফরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে লঙ্কানদের ৩-০ তে হারায় ইংলিশরা। এশিয়ায় গলের এটি ছিল ইংল্যান্ডের ২৮তম টেস্ট জয়। এশিয়ার বাইরের কোন দলের যৌথ সর্বাধিক জয়। অস্ট্রেলিয়াও ২৮টি টেস্ট জিতেছে এশিয়াতে। লঙ্কানদের হারিয়ে এ্যালিস্টার কুক ও এ্যান্ড্রু স্ট্রসকে ছুঁয়েছেন ২৪ টেস্ট জেতা অধিনায়ক জো রুট। ইংল্যান্ডের সর্বাধিক টেস্ট জয়ী অধিনায়ক হিসেবে তারা দ্বিতীয় স্থানে। আর দুটি ম্যাচ জিতলে শীর্ষে থাকা মাইকেল ভনকে স্পর্শ করবেন রুট। ৩ উইকেটে ৩৮ রানে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। ১১ রানে অপরাজিত খেলতে নেমে জনি বেয়ারস্টো। ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন ড্যান লরেন্স। ১৪ রানের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো ইংল্যান্ডকে তারা জয় এনে দেন ৬২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে। বেয়ারস্টো ৩৫ আর লরেন্স ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন প্রথম ইনিংসে ২২৮ রান করা রুট। ইংলিশ অধিনায়ক নিজের নামটি খোদাই করে নিয়েছেন একাধিক অর্জনে। শুক্রবার এই গলেই শুরু হবে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
×