ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নামমাত্র আর্থিক জরিমানা

এয়ারলাইন্সগুলো করোনা আক্রান্ত যাত্রী আনলেও ব্যবস্থা নেই

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

এয়ারলাইন্সগুলো করোনা আক্রান্ত যাত্রী আনলেও ব্যবস্থা নেই

আজাদ সুলায়মান ॥ বিদেশ থেকে একের পর এক কোভিড যাত্রী আনার ঘটনায় এয়ারলাইন্সগুলোকে নামমাত্র আর্থিক জরিমানা করা হলেও সঠিক তদন্ত করা হচ্ছে না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গত এক সপ্তাহে অন্তত ৭ জন কোভিড আক্রান্ত যাত্রী দেশে এসেছেন। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর পর যাত্রী ও এয়ারলাইন্সগুলোকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা ও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন প্রেক্ষাপটে বার বার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোভিড নেগেটিভ সনদ ছাড়া এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী বহন করেছে সেটার তদন্ত করা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনায় বেবিচককে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো। জানতে চাইলে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ড. মাইনুল হাসান জানান, এটা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব নয়। বেবিচকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে সব এয়ারলাইন্স কোভিড সনদবিহীন যাত্রী ও করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা মাত্রই-তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। যেখানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাস্বরূপ এয়ারলাইন্স ও যাত্রীকে আর্থিক জরিমানার পাাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এয়ারলাইন্সগুলো কেন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী আনছে সেটার তদন্ত বা দেখভাল করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের- সিভিল সার্জনের নয়। এদিকে জরিমানা ও কোয়ারেন্টাইনের শাস্তি দেয়া হলেও লাগাম টানা যাচ্ছে না এয়ারলাইন্সগুলোর। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৬টি ফ্লাইটে কমপক্ষে চার হাজার যাত্রী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে তিনটি ফ্লাইটের চারজনকে উত্তরার দিয়াবাড়ির প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। দুবাই থেকে আগত এফজেড ৫৮৩ ফ্লাইটের দুইজন, দোহা থেকে আগত কিউআর৬৩৮ ফ্লাইটের একজন এবং সিঙ্গাপুর থেকে আগত বিজি০৮৫ ফ্লাইটের একজনকে করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে অন্তত ৭ জন করোনা রোগী দেশে এসেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে। বিমান, সাউদিয়া, এয়ার এশিয়া ও ইতিহাদের মতো বড় এয়ারলাইন্সগুলো অনেকটা বেবিচককে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেই করোনা যাত্রী বহন করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতেও ইতিহাদ এয়ারের ফ্লাইটে একজন করোনা যাত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এজন্য ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য করোনা আক্রান্ত যাত্রীকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল এ জরিমানা করেন। এ সম্পর্কে জানা যায়, আবুধাবি থেকে ২৫৪ জন যাত্রী নিয়ে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ইওয়াই ২৪০ ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। নিয়মানুযায়ী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফরম ও শারীরিক পরীক্ষার সময় একজন কোভিড পজিটিভ যাত্রী পাওয়া যায়। তার সঙ্গে আনা আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সনদে স্পষ্টভাবে তাকে কোভিড পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। তিনি আবুধাবি এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রা করেন। আবুধাবি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যাওয়ায়, অর্থাৎ তাদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগে যাত্রী ফ্লাইটে উঠে ঢাকা পর্যন্ত চলে আসেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল জানান, ইতিহাদ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তবে আইন অনুযায়ী তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। করোনা পজিটিভ যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন ওই যাত্রী ১৩ বছর প্রবাসে ছিলেন। পেশায় তিনি প্লাম্বার। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তবে খুবই চালাক তিনি। আবুধাবি থেকে ফেরার আগে তিনি নিজেরসহ ১৩ জনের কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা করেছেন। নিজের পজিটিভ রিপোর্ট আসার পরও তথ্য গোপন করে আবুধাবি এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়েন। সেখানকার চেক ইন কর্মীদের গাফিলতিতে ফ্লাইটেও উঠতে পেরেছেন। তার এ দায়িত্বহীন আচরণের জন্য তিন হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায়ের পর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি। প্রথমে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোকে নোটিস দিয়েছি সতর্ক করেছি। যারা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোভিড সনদ ব্যতীত যাত্রী এনেছে, করোনা আক্রান্ত রোগী এনেছে তাদের বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্র্রেট কোর্টে পাঠানোর পর আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে এয়ারলাইন্স ও যাত্রী উভয়কেই। যাত্রীদের পাঠানো হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে। তারপরও যাত্রী আনার অভিযোগ পাচ্ছি যা আমাদের বাধ্য করবে আরও কঠোর হতে। প্রয়োজনে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট স্থগিত ও লাইসেন্স বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
×