ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার হাতি সংরক্ষণে যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা-দিল্লী

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

এবার হাতি সংরক্ষণে যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা-দিল্লী

শাহীন রহমান ॥ এবার হাতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত সম্মিলিতভাবে। আন্তঃসীমানায় হাতি সংরক্ষণের জন্য দু’দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আন্তঃসীমান্ত হাতি সংরক্ষণ বিষয়ে এক প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত এই প্রটোকলের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত হাতির চলাচল নির্বিঘ্ন হবে এবং হাতি সংরক্ষণ কার্যক্রম সহজতর হবে। এছাড়াও হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে এই প্রটোকল স্বাক্ষর কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’দেশের মধ্যে হাতি চলাচলের রুটগুলো দিন দিন রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। এছাড়া বনাঞ্চল সংকীর্ণ হওয়া এবং কৃষি কাজের জন্য দখল হয়ে যাওয়ার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষ ও হাতির মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। সংঘাতে মারা পড়ছে অনেক হাতি। হাতি চলাচলের রুটগুলো সংরক্ষণ করা গেলে মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত অনেকটা এড়ানো সম্ভব। বনাঞ্চলে হাতির অভয়ারণ্য থাকলে হাতি কখনও ফসলের মাঠ এবং ঘরবাড়িতে হানা দিত না। তবে দু’দেশের মধ্যে হাতির সংরক্ষণের এই উদ্যোগের ফলে হাতি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক চারণভূমি ও হাতিবান্ধব বনাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব হবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, হাতি সংরক্ষণে বাংলাদেশের পক্ষে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি ও ভরতের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। প্রটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বনাঞ্চল সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় হুমকির মুখে পড়ছে বুনোহাতি। বনাঞ্চল সংকীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি হাতির চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং আবাসস্থল কৃষি কাজে বেদখল হওয়ায় মানুষ-হাতি বিরোধ হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক চারণভূমি ও হাতিবান্ধব বনাঞ্চল না থাকায় খাবারের জন্য ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়িতে প্রায়ই হানা দিচ্ছে হাতি। বাড়ছে হাতি ও মানুষের সংঘাত। ঘটছে ফসলহানি, বন বিভাগের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরের এই সংঘাতে কমপক্ষে এক শ’ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সংঘাতে মারা পড়েছে অনেক হাতিও। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী নানা কারণে বাংলাদেশে বন্যহাতি ‘মহাসঙ্কটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মানুষ-হাতি বিরোধ একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে ফসলের মৌসুমে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে হাতি বাংলাদেশের শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও সিলেটের সীমান্তবর্তী সমতলভূমিতে নেমে আসে। হাতির চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া এবং আবাসস্থল কৃষি কাজে বেদখল হওয়ায় মানুষ-হাতির বিরোধ বাড়ছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক চারণভূমি ও হাতিবান্ধব বনাঞ্চল না থাকায় খাবারের জন্য ফসলের মাঠে ও ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে হাতি। অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনে হাতি ছায়ার মতো কাজ করে। বনে যদি হাতি বেঁচে থাকে তাহলে বন টিকে থাকে। এরই মধ্যে দেশের বনাঞ্চল থেকে অনেক প্রাণী হারিয়ে গেছে। হাতির সংখ্যাও রয়েছে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য হারে হাতির অস্তিত্ব রয়েছে দেশের বনাঞ্চলে। তাই হাতি যাতে বিলুপ্তির পথে না যায় সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মতে, এক সময় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছিল হাতির অবাধ বিচরণক্ষেত্র। ওসব এলাকায় নির্দিষ্ট সময় ভারতের অসম মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে তখনও কিছু হাতি খাবারের সন্ধানে আসত। তবে চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়ী এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি হাতির দেখা মেলে। বিশেষ করে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, টেকনাফ, হিমছড়ি, জাতীয় উদ্যান ও চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এখন বুনোহাতির অবাধ বিচরণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা বা আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় যে সাতান্নটি পথ দিয়ে হাতি চলাচল করত ইতোমধ্যে তার ১১ রুট বন্ধ হয়ে গেছে। হাতির চলাচলে রাস্তা বন্ধ হলে বা খাবারের সঙ্কট দেখা দিলেই হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফসলের ক্ষতি করে। মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে হাতি মানুষ উভয়েরই প্রাণ যায়। বুনোহাতির মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে ওঠায় হাতি চলাচলের ৪০ রুট আটকা পড়েছে। এতে টেকনাফ উখিয়ায় সংরক্ষিত বনভূমির পশ্চিম দিক দিয়ে ছয়-সাত মাস ধরে হাতিগুলো আটকা পড়ে আছে।
×