ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাদিক ইসলাম

অবচেতন মনের নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

অবচেতন মনের নিয়ন্ত্রণ

ধরুন, আপনি খুব সচেতনভাবেই চাইছেন কোন একটি কাজ করতে। আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যরাও আপনাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে কাজটি করার জন্য। কিন্তু বাস্তবে কাজটি করতে গিয়ে বার বার থেমে যাচ্ছেন আপনি। কিছুতেই এগোতে পারছেন না। এর কারণ কী? কারণ হলো, আপনার অবচেতন মন আপনাকে কাজটি করতে দিচ্ছে না। অবচেতন মন কেন কাজটি করতে দিচ্ছে না। এর কারণ হলো আপনি আপনার মনে যে কোনভাবেই হোক তা পরিবেশ থেকে, হোক শিক্ষা থেকে, কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন শিক্ষা পেয়েছেন যে এ ধরনের কাজ করা ঠিক নয় বা এ ধরনের কাজে আপনি অভ্যস্ত নন। তাই আপনার সচেতন মন আপনাকে কাজটি করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলেও, অবচেতন মনের অবস্থান এর বিরুদ্ধে এবং শেষ পর্যন্ত সচেতন মন ও অবচেতন মনের লড়াইয়ে জয় হচ্ছে অবচেতন মনেরই। এই অবস্থায় কিভাবে আপনি অবচেতন মনকে জাগিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে সচেতন মনকে বুঝিয়ে কাজটি করতে পারেন? সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা করে নেই। এই লেখাটি পুরোটা পড়লে আপনার মনের অনেক নতুন ধারণা আসবে এবং আপনি কিভাবে নতুনভাবে একটি কাজ শুরু করতে পারবেন অবচেতন মনকে জাগিয়ে তুলে ও নিয়ন্ত্রণ করে সেই সম্বন্ধে জানতে পারবেন। এভাবে অবচেতন মন আমাদের যুক্তি-বুদ্ধি, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, মেজাজ সবকিছুতেই কলকাঠি নাড়তে পারে। ফলে তার কাছে প্রায়শই হার মানতে বাধ্য হয় আমাদের সচেতন মন। অবচেতন মন সচেতন মনের একটি অধীন অংশ কিন্তু এটি সচেতন মনকে অদৃশ্যভাবে কলকাঠি নেড়ে চালিত করে। অবচেতন মন আমাদের ছোটবেলায় গঠিত হয়ে যায়। সেই ভাবে আমাদের মন মানসিকতা তৈরি হয় এবং আমাদের সচেতন মনকে অবচেতন মন চালিত করে। আমাদের জীবনে সুযোগ আসতে পারে; আমাদের জীবনে বিপদ আসতে পারে অবচেতন মন কিন্তু এটি চেতন মনের আগেই বুঝে যায় এবং সচেতন মনকে এই ব্যাপারে সজাগ করে। এমনিভাবে যে কোন বিষয়ের ব্যাপারে অবচেতন মন বুঝে ফেলে সচেতন মনকে সিগন্যাল পাঠায় এবং সচেতন মন সেভাবেই কাজ করে। আমাদের জীবনের সকল তথ্য, সব স্মৃতি অবচেতন মনে সঞ্চিত থাকে। আপনার বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, অতীত স্মৃতিও অবচেতন মনেই থেকে যায়। আপনি যা দেখেছেন, শুনেছেন ও করেছেন সব অবচেতন মনে সঞ্চিত হয়ে থেকে গেছে। চলুন তাহলে আমরা জেনে নেই কি কিভাবে অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করে সচেতন মন কে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারি এবং পরিকল্পনামাফিক সুন্দর জীবন সাজিয়ে তোলার প্রয়াস পেতে পারি। ১. অবচেতন মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে: অবচেতন মন আবেগকেন্দ্রিক এবং এটি সবকিছু ধারণ করতে পারে। ছোটবেলায় আমরা যা দেখি শুনি যা বুঝি তা অবচেতন মনেই থেকে যায়। যেহেতু এটির আবেগ বেশি তাই এটিকে বশে আনতে হবে। যেমন ধরুন একটি শিশুকে যদি ছোটকাল থেকেই বার বার বলা হয় তুমি অনেক শান্ত, তুমি অনেক ভদ্র, তুমি কাউকে মার না, তুমি কার সঙ্গে ঝগড়া করো না, তুমি নিয়মিত খাও, তুমি নিয়মিত পড়ালেখা করো এই কথাগুলো বার বার তার কানে গেলে প্রথমে অবচেতন মন তা গ্রহণ করবে এবং পরবর্তীতে পুনরাবৃত্তি প্রক্রিয়ায় সচেতন মনে সেগুলো পাঠিয়ে দিবে এবং ছেলেটিও বা ছোট বাচ্চা মেয়েটি সেভাবেই আচরণ করবে। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে একটি ছোট বাচ্চাকে যদি আমরা নেতিবাচক কথা দিয়ে চালিত করতে থাকি সে নেতিবাচক ধারণাগুলো মনের মধ্যে ধারণ করবে এবং তার অভিজ্ঞতা থেকে সে এক সময় সেই নেতিবাচক আচরণগুলো করতে থাকবে। অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন নয় কিন্তু অনেক জরুরী একটি বিষয়। শুধু ছোটদের নয় বড়দের ও অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণ করে তাকে যে কোন সময় মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়ে তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনা যাবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে অবচেতন মন জোরালো আবেগপূর্ণ কথাগুলো বেশি প্রাধান্য দেয়। তাই অবচেতন মনকে বোঝাতে গেলে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে এবং বার বার তাকে বুঝাতে হবে এবং আবেগের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে হবে। এবং আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের করতে হবে তা হলো আমাদের অবচেতন মন নেতিবাচক ধারণাগুলো বেশি গ্রহণ করতে চায়। এই নেতিবাচক ধারণা যাতে বনের মধ্যে কম প্রবেশ করে এবং ইতিবাচক ধারণা কে জোরালোভাবে বনের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য যেটি প্রথমে বলেছি আপনার প্রচেষ্টা অনেক বেশি হতে হবে। ২. আত্মোপলব্ধি জাগিয়ে তুলুন: একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের বুদ্ধির চেয়ে আমাদের আবেগ আমাদের বেশি নিয়ন্ত্রিত করে তাই আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আমাদের নিজের মনে চিন্তা করে কোন আবেগগুলো আমাদের বেশি সমস্যায় ফেলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ঊছ (বসড়ঃরড়হধষ রহঃবষষরমবহপব য়ঁড়ঃরবহঃ) বা আবেগ ওছ বা (রহঃবষষরমবহপব য়ঁড়ঃরবহঃ) এরচেয়ে আমাদের মনে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। উপযুক্তভাবে কাজ করতে, চাকরি করতে এবং স্বাস্থ্য পেতে আপনাকে অবশ্যই আবেগের দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আধুনিক গবেষণা বলছে শুধু নিজের আবেগটা জানা নয় অন্যের আবেগ আপনাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেই ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে। আবেগের ব্যাপারে জানতে পারলে আপনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কীরকম হবে সেই ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ৩. নেতিবাচক চিন্তা কে প্রশ্রয় দিবেন না : আমাদের নেতিবাচক চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। এবং বেশি বেশি মনকে ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে চালিত করতে হবে। আপনি অসুখী, ভয় পান, বিষন্ন, দুর্বল এই সমস্ত শব্দ দূরে ফেলে দিতে হবে। এর বদলে ভাবতে হবে আমি অনেক সুখি, সাহসী, শক্তিশালী এবং আমার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করে আছে। তাহলে দেখবেন আপনার মন এবং শরীর দুটোই খুব পজিটিভলি কাজ করছে এবং আপনাকে খুব গভীরভাবে ইতিবাচক চিন্তাগুলো সব সময় করে যেতে হবে এবং কোন নেতিবাচক চিন্তা কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আমরা যেই নেতিবাচক চিন্তা গুলো বেশি ভাবি এবং ভয় করি এগুলো ঘটবে এর কারণ হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তাগুলো আমরা বেশি আবেগ দিয়ে ভাবি। এর জায়গায় আপনি যে কাজটি করবেন তা হলো ইতিবাচক চিন্তাগুলোতে বেশি আবেগ, বিশ্বাস প্রয়োগ করবেন তাহলে দেখবেন আপনার জীবনে ইতিবাচক ঘটনাগুলো বেশি ঘটবে এবং আপনার জীবন অমঙ্গল থেকে মঙ্গলের পথে চালিত হবেন। আপনি যদি মনে মনে বলেন আমার জবটা খুব বোরিং তাহলে আপনার মনে লেখা হয়ে যাবে এই কথা; আবার আপনি যদি বলেন আমার জীবনটা সবার চেয়ে মূল্যহীন তাহলে এটাও লেখা হয়ে যাবে আপনার মনে বা আপনার অবচেতন মনে তাই এই ংবষভ-ঃধষশ থেকে বেরিয়ে আসুন এবং ভালো ভালো চিন্তা করুন যেগুলো আপনার মনে গেঁথে যাবে। ৪. নেতিবাচক চিন্তা ডিলিট করে ফেলুন : আপনার মনে যদি কোন নেতিবাচক চিন্তা এসে প্রবেশ করে সেটি একটি কাগজে লিখুন তারপর কাগজটি দুমড়েমুচড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিন। এই ছিঁড়ে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে আপনার নেতিবাচক চিন্তাও মন থেকে দূর হয়ে যাবে। কিংবা আরেকটি মজার কাজ করতে পারেন নেতিবাচক চিন্তার একটি ছবি মনে মনে কল্পনা করে তাকে হাত দিয়ে ঘুষি মেরে মেরে একেবারে দূর করে দিন বা ধ্বংস করে ফেলুন। এভাবে আমরা নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারি। ৫. ক্ষুদ্র বিজয় পদ্ধতি : ধরুন আপনি আপনার ওজন কমাতে চান ১০ কেজি। একদিনে তা পারবেন না। তাই যেদিন থেকে কমাতে যাবেন সেদিন থেকে একটি খাতায় আপনার বর্তমান ওজন লিখে রাখুন। তারপর প্রতিদিন কমানোর প্রক্রিয়ায় লিখে রাখুন কতটুকু কমাতে পারলেন। আপনি যদি আজকে ১০০ গ্রাম কমান সেটি আপনার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী হবে। পরপর তিন চারদিন এভাবে কমাতে কমাতে আপনি আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। প্রতিদিন যে আপনি একটু একটু করে কমালেন এটি আপনি যেহেতু লিখে রেখেছিলেন আপনার জন্য সেটি নিজের থেকেই মনের ভিতর একটা অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছিল। এই ভাবে যেকোন বই যদি পড়তে যান আজকে যদি দুটো পাঠা পড়েন আপনি ভাববেন আজকে আপনি কিছুটা হলেও কাজ করেছেন। তার পরের দিন আবার দুটো পাকা পড়ুন কিভাবে ৭ দিনে ১৪ টি পাতা পড়লে আপনি এগিয়ে যাবেন এবং আপনার মনে একটি সন্তুষ্টি জমা হবে। তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে সেটিকেই কিছু পাওয়া ভেবে আপনি ধীরে ধীরে আপনার যে কোন কাজে এগিয়ে যান। ৬. অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করুন: আপনার অনুপ্রেরণা আপনাকেই তৈরি করতে হবে। এটি হতে পারে কোন ব্যক্তি, কোন খেলার বিজয়, একটি ভালো গান বা একটি ভালো ঘটনা। যেকোনো একটিকে আপনার উৎসাহ হিসেবে বেছে নিন। যেখান থেকে আপনি উৎসাহ পান সেটিকেই মূল ধরে আপনি কাজ করে যান। কে কী করলো তা না ভেবে আপনার মনকে যেকোনো একটি ভালো লাগার বিষয় দিয়ে অনুপ্রেরণায় ভরে ফেলুন দেখবেন আপনি নিজের থেকেই ভালো একটি কাজ করার মত শুরুটা করে ফেলেছেন। ভালো শুরু একটি ভাল কাজের ইঙ্গিত দেয়। তাই কষ্ট করে হলেও যে কোন খান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আপনাকে আপনার কাজ শুরু করতে হবে। আজ পারলেন না এক সপ্তাহ পারলেন না তবে ভেঙ্গে পড়বেন না। দেখবেন আপনার কাজ শুরু করার সময় একবার আসবেই। কিন্তু কাজ নিজের থেকে শুরু হবে না আপনার মনের মধ্যে এই বিশ্বাস থাকতে হবে আমি কাজটি শুরু করব আজ না পারলেও কাল। একজন প্রিয় সফল ব্যক্তি যখন আপনার অনুপ্রেরণা হবে তখন আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে এবং আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে। আপনি ভাববেন আপনার প্রিয় ব্যক্তিটি জীবনে যে সফল তার মতো আপনিও এগিয়ে যাচ্ছেন আপনার লক্ষ্যের দিকে। ৭. নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন : বিশ্বাস এবং ভালোবাসা এই দুটো জিনিস আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। আপনার অবচেতন মনকে বিশ্বাস দিয়ে ভরিয়ে তুলতে হবে। যে কাজই আপনি করতে যান আপনার মনে বিশ্বাস থাকতে হবে। আপনার মন ভালবাসায় পরিপূর্ণ হতে হবে। ঘৃণা, হিংসা, ঈর্ষা এইগুলো আপনার মন থেকে বের করে দিতে হবে। সবকিছুকে ভালবাসতে হবে, মনটাকে উদার করতে হবে এবং সবকিছুর মাঝে আনন্দ খুঁজে পেতে হবে। কখনোই নিজেকে ছোট আর দুর্বল ভাবা যাবে না থাকতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে আমি সব করার যোগ্য। আশা আর বিশ্বাস এর মধ্যে পার্থক্য হলো বিশ্বাস অনেক শক্তিশালী। তাহলে বিশ্বাস মনে কিভাবে আনবেন? আপনার অবচেতন মনকে বারেবারে অটোসাজেশন দিয়ে বিশ্বাস করাতে হবে আপনি সবকিছু করতে পারেন। যখন বিশ্বাস আপনার মনে সত্যিকারেই গ্রথিত হবে তখন আপনি দেখবেন আপনি আগের চেয়ে চিন্তা-চেতনায় অনেক অন্যরকম একজন মানুষ। আপনি যদি পাঁচ মাইল হাঁটতে চান তাহলে আপনাকে আপনার অবচেতন মনকে আগেই বলে দিতে হবে আমাকে অনেক দূর যেতে হবে। আমরা যখন এক কিলোমিটার রাস্তা হাঁটার জন্য বের হই কিন্তু দুই কিলোমিটার হাঁটতে হয় তখন আমাদের মনে হয় অনেক বেশি হেঁটে ফেললাম। এর কারণ আমাদের মন জানতো আমি এক কিলোমিটার হাঁটবো সেজন্য দুই কিলোমিটার হাঁটা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়। ভাবুন তো আপনি ৩০০ কিলোমিটার জানি পরে আসবেন কিন্তু বাসায় আসার ঠিক পাঁচ কিলোমিটার আগে আপনার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল এখন এই পাঁচ কিলোমিটার কি আপনার অনেক বেশি মনে হবে? মনে হবে না। কারণ আপনি অলরেডি ৩০০ কিলোমিটার চলে এসেছেন প্রায় ৫ কিলোমিটার ৩০০ কিলোমিটারের তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র। সেজন্য আমাদের মনে বিশ্বাস তৈরি করতে হবে আমি এতদূর যাব, আমি এতটা কাজ করব, আজকে আমি এতটা পরিশ্রম করব। যারা কাজ করে আনন্দ পায় তারা বেশি সফল কারণ একমাত্র কাজ সফলতা এনে দেয় কোন না কোন দিক দিয়ে। সকালবেলা উঠে আপনি যদি ভাবেন আজকে সারাদিন অনেক কাজ করব এটাই আমার প্রতিজ্ঞা এবং বিশ্বাস তাহলে আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি সকালবেলা উঠে যদি মনে করেন আমার একগাদা কাজ করে আছে তাহলে আপনি অলসতার কাছে পরাজিত হলেন। সেজন্য আমাদের যে কোন কাজ করার আগে মনের মাঝে আগে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে যে আমি কাজটি অবশ্যই করবো। তারপরে আমাদের নতুন নতুন চিন্তা এবং এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা সৃষ্টি হবে। ৮. নতুন চিন্তার দ্বার খুলে যাক : অবচেতন মনকে যখন আপনি কাজ দেবেন তখন অবচেতন মন সেই কাজটি ছেঁকে নিয়ে আসল জিনিসটি সচেতন মনের কাছে পাঠিয়ে দিবে। আপনি হয়তো অনেক কাজ দেবেন এর থেকে সচেতন মন আসল কাজটি বের করে আনবে এবং আপনাকে সুযোগ তৈরি করে দেবে সেই কাজটি করার জন্য। আপনার জীবনে এক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে যাবে। মান একটি স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। মনে নতুন আশা জাগবে এবং বিশ্বাস স্থাপিত হবে। আপনার মনে যখন অনেক আশা থাকবে তখন আপনার মন নিশ্চয়ই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তাই মনকে একটি সিদ্ধান্ত দিন এবং মন তাহলে সেই সিদ্ধান্তটি এ কাজ করতে থাকবে। অনেক অনাহুত, বাজে, যেগুলোর দরকার নেই চিন্তাগুলো হয়তো মাথায় থাকবে কিন্তু তা সক্রিয় হবে না। আপনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে; নতুন চিন্তা নিয়ে আপনার কাজে প্রবেশ করবেন এবং আপনার চিন্তা জগত আপনার কর্ম জগতকে সেই কাজে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তাই আপনার অবচেতন মনে নতুন নতুন কাজের সিদ্ধান্ত নিন সচেতন মন সেখান থেকে একটি না একটি ভালো কাজ আপনাকে উপহার দিবে। ৯. মন্ত্র টেকনিক : আমাদের মন অনেকেরই মন সবসময় একটা ধারণা নিয়ে থাকে যে আমি অসুস্থ। এটা সবার ক্ষেত্রে হয় না অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটাকে বলা হয় যুঢ়ড়পযড়হফৎরধ. এ হাইপোকন্ড্রিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেই ভেবে ভেবেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশি। এ সমস্ত ব্যক্তিদের মনে এক ধরনের ভয় সবসময় কাজ করে আমি বোধ হয় কোন একটা রোগে ভুগছি। এক্ষেত্রে যা ঘটে বার বার রোগ নিয়ে চিন্তা করতে করতে ব্যক্তিটি আসলেই রোগী হয়ে যায় বা তাকে রোগে আক্রান্ত করে। তাহলে আমরা কিভাবে এর থেকে মুক্ত হতে পারি। আমাদের মন্ত্র টেকনিক ব্যবহার করে এর থেকে পরিত্রান পেতে হবে। মন্ত্র টেকনিকটা হচ্ছে এরকম আপনাকে সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে ভয় দূর করে ফেলতে হবে মন থেকে এবং ভাবতে হবে আপনি সুখী, আমি শারীরিকভাবে সুস্থ, আমার কোনো অসুস্থতা নেই, আমার প্রতিটি দিন আনন্দের, আমি শারীরিকভাবে সবল, আমি সবার কাছে পছন্দের। কিংবা আপনাকে সব সময় একটি সুখের পরিবেশে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে হবে। বার বার চিন্তা করতে হবে আমি সুখী, আমি সুখী, আমি সুখী। যারা সুন্দর হাসিখুশি পরিবেশে থাকে তাদের মন উচ্ছল থাকার কারণে তাদের নেগেটিভ চিন্তা এসে মনে বসবাস করতে পারে না এবং মনকে অযথাই বিচলিত করে না এবং তারা মানসিক এবং শারীরিক দুভাবেই সুখী হয়। তাই আপনি হাসিখুশি, সুখী, সুন্দর, ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং সবসময় নিজেকে প্রফুল্ল রাখুন তাহলে কখনই আপনার মনে বাজে চিন্তা এবং অসুস্থ চিন্তা এসে বাসা বাঁধতে পারবে না। ১০. ভবিষ্যত নিয়ে বেশি ভাববেন না : আমরা ভবিষ্যত নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি অনেক সময় এবং বলা চলে বেশিরভাগ সময় ভবিষ্যত ভাবনা আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। আমি এই কাজটি করেছি এর ফলাফল কী হবে? আমার ভবিষ্যতে কী হবে? ভবিষ্যতে আমি কোন জায়গায় থাকবো? ভবিষ্যতে আমি একটি বিষয় কিভাবে সমাধান করব? এই কাজটি করলাম এর ভবিষ্যত ফলাফল কী হবে? এরকম নানা বিষয় আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায় আর আমাদের বিচলিত করে দেয়। আসলে ভবিষ্যতে কিছু না কিছু ঘটবে এটা নিশ্চিত। আমার দুর্ভাবনা দিয়ে আমি কখনো ভবিষ্যতকে পাল্টে ফেলতে পারব না যা ঘটার তা ঘটবেই। তাই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বেশি চিন্তা না করে ভবিষ্যতে যেটা ঘটবে সেটা মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরি রাখতে হবে। আমার দুশ্চিন্তা আমার ভবিষ্যৎ কখনো পাল্টাতে পারে না। তাই অবাঞ্ছিত চিন্তা ছেড়ে দিয়ে যা ঘটবার তা ঘটবে এই সাহসী, স্থির, অচঞ্চল সংকল্প মনের মধ্যে রাখলে মন থেকে অনেক অনিশ্চয়তা দূর হয়ে যাবে। আমরা মনে মনে সব সময় যোগ-বিয়োগ করি এটা ঘটলে এটা হবে, এটা ঘটলে এটা করব। আমাদের এই সমস্ত চিন্তাভাবনা সব ঝেড়ে ফেলতে হবে। আমি আমার চিন্তা দিয়ে কিছুই পাল্টাতে পারি না। শুধু পারি যে মুহূর্তে যে ঘটনা ঘটবে সে ঘটনা স্থির মস্তিষ্কে, ঠান্ডা মস্তিষ্কে সামাল দিতে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে সেটা নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করা ছেড়ে দিতে হবে। আজকে রাতে ঘুমোচ্ছি কালকে ঘুম থেকে উঠে যেটা ঘটবে সেটা আমি সেই মুহূর্তে সামলে নেব; এই মনোভাব থাকলে ভবিষ্যতের চিন্তা আমাদের মনের ওপর বেশি অনুপকারী প্রভাব ফেলতে পারবে না। আপনি নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন তাহলে দেখবেন আপনার অবচেতন মন আপনার সচেতন অংশেই বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে না। আপনি যখন কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন কিন্তু অবচেতন মন এসে আপনাকে বিরক্ত করার সুযোগ কম পায়। কেননা, তখন সচেতনভাবেই আপনি কাজটিতে পরিপূর্ণ একাগ্রতা দান করতে পারছেন। আমরা যখন কাজের চেয়ে চিন্তার জগতে বেশি বাস করে তখন অবচেতন মন আমাদের পেয়ে বসে। তাই সব সময় একটি না একটি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। যখন আপনি অলস সময় কাটান, তখনই আপনার অবচেতন মন বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে উপস্থিত হয়ে আপনাকে জ্বালাতন করতে শুরু করে। তাহলে অবসর সময়ে আপনার কী করা উচিত? অবশ্যই নেতিবাচক চিন্তা নয়। বরং আপনার উচিত ভবিষ্যত পরিকল্পনা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজটি কিভাবে করবেন তা ভেবে রাখতে পারেন, এবং অবশ্যই সেখানে ব্যর্থতার কথা কল্পনা করবেন না। বরং আপনি ভবিষ্যতে যে কাজগুলো ঠিকভাবে করতে সক্ষম হচ্ছেন, সেই বিষয়টিই আপনাকে কল্পনা করতে হবে। এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে আগে থেকে ভালো কিছু ভেবে রাখলে তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। এগুলো নিছকই কুসংস্কার। বরং আপনি যদি আগে থেকেই ভালো কিছু কল্পনা করতে থাকেন, তা নিঃসন্দেহে আপনার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে, এবং আপনার অবচেতন মনও তখন উপলব্ধি করতে শুরু করবে যে কাজটি আসলেই আপনার পক্ষে করা সম্ভব। আর এ কথা তো বলাই বাহুল্য, অবচেতন মন যখন সঙ্গে থাকে, সাফল্য লাভের সম্ভাবনাও যায় বেড়ে।
×