ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের নানা সংস্কার কর্মসূচী, লোভনীয় উদ্যোগ সচেতনতা বেড়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে করোনা মহামারীর মধ্যেও মুনাফা বৃদ্ধি শেয়ারবাজারেও এই খাতটির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে

আস্থা বাড়ছে বীমায় ॥ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

প্রকাশিত: ২১:২৫, ৩০ নভেম্বর ২০২০

আস্থা বাড়ছে বীমায় ॥ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

অপূর্ব কুমার ॥ ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের বাইরেও দেশের অর্থনীতিতে আকর্ষণীয় হচ্ছে বীমা। মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও সরকারের নানা উদ্যোগে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বীমা। নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে খাতটি। করোনার দুর্যোগের মধ্যেও বীমা কোম্পানিগুলো আগের চেয়ে ভাল মুনাফা করেছে। একইভাবে শেয়ার বাজারে খাতটির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝেও বীমা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ব্যাংকাস্যুরেন্স চালুর প্রক্রিয়া শুরু, ভবন বীমা, কোম্পানিগুলোর এজেন্টের কমিশনের হার নির্ধারণ করে দেয়া এবং শস্য বীমা চালুর মতো লোভনীয় সব উদ্যোগের কারণেই ইন্স্যুরেন্সের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। করোনায় থমকে যাওয়া অর্থনীতিতেও বীমা খাতের অভাবনীয় উত্থানে আশা জাগাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, বীমা খাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এজেন্ট কমিশন কমিয়ে আনা এবং থার্ড পার্টি বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত আসছে। এছাড়া ভবন ইন্স্যুরেন্স চালুর মতো প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে করা হয়েছে। একইসঙ্গে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। বাকি সদস্য নিয়োগের পর আরও কিছু সংস্কারমূলক কাজ হাতে নেয়া হবে। তাই যা কিছু হবে সেটি ভালই হবে। এটির প্রতিফলনও বাজারে দেখা যাচ্ছে। গত মাস মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হলে দীর্ঘ ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এই ছুটির কারণে ব্যাংক, আর্থিক খাত বন্ধের কারণে অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল বীমা খাতটি। এই খাতটিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব ছুঁতেই পারেনি। দেশে কার্যরত মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানির সবগুলোই কমবেশি মুনাফা করেছে। বর্তমান সরকারের বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের বীমা খাতটির সংস্কারে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছিল। সম্প্রতি খাতটির সংস্কারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘বাংলাদেশের বীমা খাত উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বৃদ্ধি করা হবে। ব্যাংকাস্যুরেন্স চালুর উদ্যোগ ॥ এখন থেকে ব্যাংকের শাখাগুলোই বিক্রি করে দেবে বীমা পলিসি। এ জন্য গ্রাহকদের বীমা কোম্পানিতে যেতে হবে না, ব্যাংকের শাখায় গেলেই চলবে। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংক পণ্য তো বিক্রি করবেই, বীমা পণ্যও বিক্রি করবে। বীমা নিয়ে মানুষের নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে। সে জন্য ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ নামের নতুন ধারণা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে বীমা খাতের ব্যাপক প্রসার হবে। কিন্তু নীতিমালার অভাবে নতুন এই আর্থিক পণ্যের সম্ভাবনা কাজে লাগছে না। অথচ ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বীমা খাতের উন্নতির অনেক উদাহরণ রয়েছে উন্নত বিশ্বে। এমনকি নিকট প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাও এতে সফল হয়েছে। বীমা খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম সংগ্রহের খরচ কমবে। বাড়তি খরচ ছাড়াই বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারবে ব্যাংক। যেহেতু বীমার তুলনায় ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা বেশি, সেহেতু ব্যাংকাস্যুরেন্সের আওতায় বীমা পলিসি কেনার প্রতিও তাদের আগ্রহ বাড়বে। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স সময়ের দাবি। এতে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি শুধু লাভবান হবে না, গ্রাহকেরাও উপকৃত হবেন। পরীক্ষামূলকভাবে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কাজটি শুরু করেছে। আশার কথা হলো, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ব্যাংকাস্যুরেন্সের প্রবৃদ্ধি ভাল। খসড়া নীতিমালা যেহেতু তৈরি হয়ে গেছে, আশা করছি শীঘ্রই এটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। চালু হচ্ছে ভবন ইন্স্যুরেন্স॥ বহুতল ভবন বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া নিচ্ছে আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে সরকারের প্রতিটি ভবন বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সরকারী ভবনগুলো বীমার আওতায় আনা গেলে পরবর্তীকালে বেসরকারী প্রতিটি ভবন বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, বহুতল ভবন বীমার আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে বীমা সংশ্লিষ্টরা দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে ২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আগুন লাগলে এ দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে এবং মার্চে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগলে এ দাবি আরও জোরদার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি বহুতল ভবন বীমার আওতায় আনতে কার্যক্রম শুরু করে সরকার। সরকারের ইতিবাচক সঙ্কেত পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে আইডিআরএ। তবে প্রথমে শুধু সরকারী বিভিন্ন অফিস ও ভবন বীমার আওতায় আনা হবে। সরকারী প্রতিটি ভবন বীমার আওতায় চলে এলে পরে বেসরকারী ভবনে বীমা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকারী ভবনের তথ্য চেয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে আইডিআরএ। এ প্রসঙ্গে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোঃ ইমাম শাহীন বলেন, সরকারী ভবনের বীমা বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলো সরাসরি পাবে না। এই বীমা হবে সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত বীমার আন্ডাররাইট (অবলিখন) করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলো এই বীমার ৫০ শতাংশ ভাগ পাবে। সুতরাং সরকারী ভবন বীমার আওতায় এলে বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলোরও প্রিমিয়াম বাড়বে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বাড়বে। কারণ প্রতিটি বীমার জন্য সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। চালু হবে শস্য বীমা ॥ দেশের সব চাকরিজীবীসহ প্রায় সাত কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বাস্থ্য বীমা চালুর ঘোষণা দেন গত বছর। সরকারী ও বেসরকারী চাকরিজীবীদের জন্য এই স্বাস্থ্য বীমা চালু করার দায়িত্ব পড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। অর্থ মন্ত্রণালয় একটি মডেল দাঁড় করানোর দায়িত্ব দেয় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ওপর। এখনও সেটির কাজ শেষ হয়নি। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়া ফসলের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে শস্য বীমা চালুর ঘোষণা দেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাত জেলায় শস্য বীমা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ এসব জেলায় প্রতিবছর ১৯ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি ফসল উৎপাদন হয়। এর ৯০ শতাংশই বোরো ধান। পাশাপাশি এসব জেলায় ৩৭৩টি হাওড় রয়েছে। বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হতে পারে; কিন্তু শস্য বীমা চালুর কোন উদ্যোগ নেই। এর সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে আইডিআরএ। প্রতিষ্ঠানটি এখানেও ব্যর্থ। অথচ বলা হয়েছিল, চলতি বছরই পাইলট প্রকল্প চালু করা হবে। কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা না দিতে পারার ব্যর্থতার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না প্রতিষ্ঠানটি। করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল জীবন বীমা কোম্পানি ॥ মহামারীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সময়ে বড় অঙ্কের আয় করেছে ১৩টি জীবন বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে চারটি কোম্পানির আয় বেড়েছে ১০০ শতাংশের ওপরে। এগুলোর মধ্যে তিনটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আয় বাড়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে পাঁচটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বাকি আটটি কোম্পানি অতালিকাভুক্ত। অপরদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানিসহ মোট ১৯টি জীবন বীমা কোম্পানির আয় কমেছে। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণত আর্থিক প্রতিবেদন দেরিতে প্রকাশ করে থাকে। যার কারণে জুন মাস পর্যন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সব থেকে বেশি আয় বেড়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ১০২ কোটি ১৮ লাখ টাকা অর্থাৎ ১৭৮ শতাংশ। এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে কোম্পানিটি ১৫৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত) কোম্পানিটি প্রিমিয়াম আয় করেছিল ৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রথম স্থানের মতো পরের দুটি স্থানেও রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এর মধ্যে ৩৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ১২৮ শতাংশ প্রিমিয়াম আয় বাড়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মেঘনা লাইফ। কোম্পানিটি চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে) প্রিমিয়াম আয় হয় ২৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের আয় বেড়েছে ১০ কোটি টাকা অর্থাৎ ১২০ শতাংশ। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় ছিল আট কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা এপ্রিল-জুনে এসে বেড়ে হয়েছে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে আয় বাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে - প্রাইম ইসলামী লাইফের ৮৮ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ৩৯ শতাংশ, আলফা ইসলামী লাইফের ৩০ শতাংশ, ডেল্টা লাইফের ২৯ শতাংশ, ডায়মন্ড লাইফের ২৪ শতাংশ, জেনিথ ইসলামী লাইফের ১৯ শতাংশ, বেস্ট লাইফের ১৯ শতাংশ, সানফ্লাওয়ার লাইফের ১৫ শতাংশ এবং স্বদেশ লাইফের ১০ শতাংশ আয় বেড়েছে। এর মধ্যে প্রাইম ইসলামী লাইফ এবং ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। অপরদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত-পদ্মা ইসলামী লাইফ, সন্ধানী লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, রূপালী লাইফ, প্রগতি লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ এবং পপুলার লাইফের আয় কমেছে। আয় কমা অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জীবন বীমা করপোরেশন, মেটলাইফ, এলআইসি, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, সোনালী লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ এবং বায়রা লাইফ। সাধারণ বীমা কোম্পানির আয় বেড়েছে ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের মোট ৩২টি কোম্পানি চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো সাধারণত আর্থিক প্রতিবেদন নিয়মিতই করে থাকে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২২টি কোম্পানির মুনাফা আগের তুলনায় বেড়েছে। একটির মুনাফা অপরিবর্তিত রয়েছে। মুনাফা বাড়া কোম্পানিগুলো হলো : এশিয়া, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, গ্রীন ডেল্টা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট, পাইওনিয়ার, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, বিজিআইসি, পূরবী জেনারেল, পিপলস ও ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সের। ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় আগের মতো ৬৩ পয়সা রয়েছে। রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি। মুনাফা কমেছে ॥ অগ্রণী, এশিয়া প্যাসিফিক, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড, ফেডারেল, নিটল, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের। কেন বাড়ছে মুনাফা ॥ কোম্পানিগুলোর এজেন্ট কমিশনের হার বেঁধে দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এর ফলে দেশের সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফায় উল্লম্ফন দেখা গেছে। এখন এই মুনাফার ন্যূনতম অংশ যাতে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, সেই জন্য সাধারণ বীমা কোম্পানির লভ্যাংশের ন্যূনতম সীমা বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ধরেই বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই এজেন্ট কমিশন বাবদ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। আয়ের বড় অংশ এজেন্ট কমিশন বাবদ ব্যয় হওয়ার কারণে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা কম হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণেও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে আইডিআরএ এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও নির্দেশিত সীমায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর ফলে চলতি বছর করোনার মধ্যেও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এই মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণে এবার পদক্ষেপ নিল আইডিআরএ। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্বও বাড়বে বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইডিআরএর একজন কর্মকর্তা জানান, এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ফলে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে; যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে। আমরা বীমা কোম্পানির আয় থেকে সরকারের রাজস্বও বাড়াতে চাই। একই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডাররাও যাতে ন্যায্য লভ্যাংশ পান। এসব নিশ্চিত করতেই ২০২০ সালের জন্য সাধারণ বীমা কোম্পানির ন্যূনতম লভ্যাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছি আমরা।
×