ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকালই থাকবেন ম্যারাডোনা’

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৭ নভেম্বর ২০২০

‘হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকালই থাকবেন ম্যারাডোনা’

রুমেল খান ॥ সমগ্র ফুটবল বিশ্বে চলছে শোকের মাতম। কোটি কোটি ফুটবল অনুরাগীদের অশ্রুজলে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি ফুটবলের জাদুকর, ফুটবল ঈশ্বর, আর্জেন্টাইন ফুটবল গড। বুধবার এই কিংবদন্তি ফুটবলার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপে একাই শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। রেলিগেশনের পর্যায়ে চলে যাওয়া ইতালির অখ্যাত ক্লাব নাপোলিকে একাই জিতিয়েছেন দু’বার করে লীগ ও উয়েফা কাপের শিরোপা। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলশিল্পীর মহাপ্রয়াণে চরমভাবে শোকাহত কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘সবাই জেনে গেছেন ম্যারাডোনা মারা গেছেন। ফুটবল বিশ্বের জন্য এটা দারুণ দুঃখের খবর। সবারমতো আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার মৃত্যুতে। কারণ তিনি ছিলেন আইকন ও লিজেন্ডারি ফুটবলার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তিনি কি করেছিলেন তা সবাই জানে। সেটা যেন এক রূপকথা। ইতালির নাপোলিকে তিনি কি দিয়েছেন, সেটাও ইতিহানের অংশ হয়ে আছে। ফুটবল ক্যারিয়ারে তার যা অর্জন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশে প্রচুর ম্যারাডোনা এবং আর্জেন্টিনার ভক্ত আছে। বুঝতে পারছি তাদের মনের অবস্থা এখন কেমন। ম্যারাডোনাকে কখনই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকালই আসন গেড়ে রইবেন। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা বলেন, ‘প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচশেষে আমরা যখন টিম বাসে উঠে হোটেলে ফিরব তখনই জানতে পারি সারাবিশ্বের কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনা আর নেই। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয়। ক’দিন আগেই বাংলাদেশের আরেক কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায় মারা গেছেন। সেই শোক সামলে না উঠতেই এবার শুনতে হলো ম্যারাডোনার খবর। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে বিশ্ব ফুটবলের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি নিজেও আর্জেন্টিনার একজন সাপোর্টার। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে খুবই শোকাহত। ম্যারাডোনার জন্য আমরা প্রার্থনা করি তিনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন।’ জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তপু বর্মণ বলেন, ‘গত ৪-৫টি বিশ্বকাপ ধরে আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। ম্যারাডোনার খেলা টিভিতে কখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি বয়স কম থাকার জন্য। তবে পরবর্তীতে ইউটিউবে তার খেলা দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি। তারপর থেকেই তার কঠিন ভক্ত বনে যাই। ম্যারাডোনা নেইÑ এটা মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমি ও জাতীয় দলের সবাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। তাকে অনেক পছন্দ করতাম। দোয়া চাই তিনি যেন ওপারে ভাল থাকেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফুটবল ১১ জনের খেলা। কিন্তু ম্যারাডোনা ছিলেন একাই একটা দল। ১০ জন একদিকে আর ম্যারাডোনা ওই ১০ জনেরই সমান। এককভাবে একটি দলকে টেনে নেয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ছিল তার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে যা আমরা দেখেছিলাম। একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান। আমরা তার ঝলক দেখেছিলাম ইতালির নাপোলি ক্লাবের জার্সিতেও। অখ্যাত এক ক্লাব বিখ্যাত হয়ে ওঠে ম্যারাডোনার হাত ধরে। ভাবতে অবাক লাগে, একজন ফুটবলার একটি ক্লাব বা একটি দেশকে কিভাবে এত সুউচ্চে তুলে ধরতে পারেন।’ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরের বছরেই আমার জন্ম। আমার বয়স যখন ৭, তখনই তার সম্পর্কে জানতে পারি। ফুটবলের প্রতি আমার যে ভালবাসা-অনুরাগ তা গড়ে উঠেছে ম্যারাডোনার জন্যই। পরে ইউটিউবে দেখেছি, ছিয়াশির বিশ্বকাপে তার পারফর্মেন্স কতটা বিস্ময়কর ছিল। সন্দেহাতীতভাবেই তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলারের একজন। তার বিদায় আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক।’
×