ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বেশির ভাগ দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ

ফ্রি ভিসার নামে কর্মীদের দালালচক্রের হাতে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৫ নভেম্বর ২০২০

ফ্রি ভিসার নামে কর্মীদের দালালচক্রের হাতে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ করোনার মধ্যে বেশির ভাগ দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর জনশক্তি ব্যবসায়ী ফ্রি ভিসার নামে বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে কোন চাকরি ছাড়াই কর্মীদের বিভিন্ন দেশে দালালচক্রের হাতে বিক্রি করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দালাল তাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজে লাগিয়ে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কয়েকটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা জানা যায়নি। জনশক্তি রফতানিকারকদের বাইরেও অনেক দালালচক্র ফ্রি ভিসায় বিদেশে কর্মী পাঠানোরও অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রতারণার শিকার আরিফুল ইসলামের ভাই রতন অভিযোগ করেছেন, তার ভাইসহ মোট তিন জনকে দুবাইতে চাকরি দেয়ার নাম করে ফ্রি ভিসায় নিয়ে যায় দুবাই প্রবাসী রেজা। দেশে এই দালালের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে সুজন দীপ্তি। এই সুজন আরিফুল ইসলাম, মোঃ ইকরাম ফারুক ও আরিফ হোসেনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়। পরে রেজা তাদের নামে ফ্রি ভিসা পাঠায়। ও ভিসায় ৬ মাস আগে তারা তিন জনই দুবাই যান। কিন্তু দুবাই কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। আরিফুল ইসলাম ও আরিফ হোসেনের বাড়ি চাঁদপুর আর ইকরাম ফারুকের বাড়ি চট্টগ্রামে। তারা দুবাই যাওয়ার পর থেকে দালাল রেজা তাদের হাত থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যায়। এখন তারা পাসপোর্ট ছাড়া দেশটিতে পালিয়ে জীবন যাপন করছে। দালাল রেজা তাদের চাকরি দিতে পারেনÑ তবে আরও টাকা দিতে হবে। এই দালালের বাড়িও চট্টগ্রামে। দালাল রেজার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য না। আমি তাদের চাকরি দেবো বলেই পাসপোর্ট আমার হাতে রেখেছি। তাদের ভিসার মেয়াদ আছে। চাকরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে প্রতারণার শিকার তিনজনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলেছে, চাকরির প্রয়োজন নেই-তারা দেশে ফিরে আসুক এটাই বড় কথা। পাসপোর্ট ফেরত পেলে তারা দেশে ফিরতে পারেন। সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এ সব দেশে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা চলছে। বিশেষ করে কুয়েত, কাতার, দুবাই, সৌদি আরব ও ওমানে ফ্রি ভিসায় কর্মী পাঠানো হচ্ছে। ফ্যামেলি ভিসা, ভিজিট ভিসা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং ভিসা, খাদেম (বাসা) ভিসা, কোম্পানির ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা দিয়ে আসছে। ব্যবসায়ী ও দালাল চক্র এই সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার ফ্রি ভিসা করিয়ে নিচ্ছে। এই ভিসার নাম করে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় এসব দেশে গিয়ে কোন কাজ পাচ্ছেন না কর্মীরা। কেউ কেউ ওই দেশে থাকা দালালের হাতে পড়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাদের গোপনে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ দিয়ে বেতনের অর্ধেকের বেশি টাকা দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। আর যারা এটাও করতে পারছেন তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারা দূতাবাসের মাধ্যমে ফ্রি ভিসার বিষয়টি জেনেছেন।
×