ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৭ নভেম্বর ২০২০

সাবেক ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী আর নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার, ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) শওকত আলী আর নেই। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া) আসন থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শওকত আলী (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। সংসদ সচিবালয়ের পরিচালক (গণসংযোগ) মোঃ তারিক মাহমুদ জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ছয় বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও নবম সংসদের ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৪ অক্টোবর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত এক সপ্তাহ তিনি সিএমএইচ-এ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তিনি দুই পুত্র, এক কন্যা, স্ত্রীসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে মরদেহ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ায় নেয়া হবে। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নড়িয়া শহীদ মিনারে রাখা হবে। বাদ জোহর নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে নিজ বাড়ি ‘স্বাধীনতা ভবন’-এ চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হবে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। সোমবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম মসজিদে তার জানাজার আগে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। মুক্তিসংহতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ’৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) শওকত আলী শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং বাহের দীঘিরপাড় গ্রামে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী নেয়ার পর ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড পান। পাকিস্তান আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়েছিল, তাতে শওকত আলীকে ২৬ নম্বর আসামি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান ক্যান্টনমেন্ট থেকে আটক করার পর ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন যোদ্ধা শওকত আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর আবার সেনাবাহিনীতে ফেরেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর শওকত আলীকে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়া হন। ১৯৭৯ সালে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। দশম সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন প্রয়াত কর্নেল শওকত। কয়েকটি অসাধারণ বইয়ের রচয়িতা তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সত্য মামলা আগরতলা’, ‘কারাগারের ডায়েরি’ এবং ‘গণপরিষদ থেকে নবম সংসদ’। সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তারা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণে অবদানের জন্য শওকত আলীকে জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে দেশ ও জনগণ একজন প্রবীণ নেতা হারিয়েছে, হারিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন বিশ্বস্ত সহকর্মীকে। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এক শোকবার্তায় শওকত আলীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন। তিনি তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। শোকবার্তা পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ শামসুল হক টুকু প্রমূখ। এদিকে শরীয়তপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কর্নেল (অব.) শওকত আলীর মৃত্যুতে পুরো জেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, নাহিম রাজ্জাক এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পারভিন হক সিকদার, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, শরীয়তপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমনসহ অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
×