ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন

পরমাণু ও তেজস্ক্রিয়তা দুর্যোগ মোকাবেলায় গাইডলাইন

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৭ নভেম্বর ২০২০

পরমাণু ও তেজস্ক্রিয়তা দুর্যোগ মোকাবেলায় গাইডলাইন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি গাইডলাইন করেছে সরকার। এ জন্য ‘জাতীয় পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনা’ -এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচীর সুবিধাভোগীসহ সরকারের অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ২০২৫ সালের মধ্যে এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে আনতে পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কৌশলের খসড়া অনুমোদন করেছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল’-এর বাংলা ও ইংরেজী সংস্করণের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকায় মাস্ক পরা নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই সব তথ্য জানান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় এনে তাদের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মূল বিষয় হচ্ছে ডিজিটাইজেশন এবং ইনোভেশনের মাধ্যমে একটি টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য এই কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। কৌশলপত্রে ৭টি উদ্দেশ্য ও ১২টি কৌশলগত অভিষ্ট এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ৬৫টি লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই কৌশলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা অর্থায়ন প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতের উত্তরণে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশলের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিগুলো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী এজেন্সি- এগুলোকে গ্রাহকবান্ধব করে সেবা নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল পূরণে মন্ত্রিসভা কিছু নির্দেশনা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে ২০১৭-১৮ এর ডাটা ধরা হয়েছিল। ২০২০-এর ডাটা ব্যবহার করার জন্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কারণ ২০২০-এ সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করল সেখানে ব্যাপক সংখ্যক লোক কিন্তু এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে চলে এসেছে। সব রকম টাকা পরিশোধ কিন্তু এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হয়েছে, মোবাইল এ্যাকাউন্ট বা ফিন্যান্সিয়াল ফরমাল এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গার্মেন্টস বা অন্যান্য খাতের প্রণোদনাগুলোও এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এতে করে ৪০ লাখের মতো নতুন এ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। আড়াই হাজার টাকা করে যে অনুদান দেয়া হলো, যাকেই যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। আমাদের এখন যে অবস্থা তাতে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পারছি। ২০২০ সালের প্রোগ্রামগুলো যদি আমরা হিসেব করি তাহলে ৭২ থেকে ৭৩ শতাংশে চলে যাব। ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ এই এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে আনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি আমার খামারের’ জন্য আলাদা জাতীয় সঞ্চয় স্কিম রয়েছে সেগুলোও এখানে অন্তর্ভুক্ত করে দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে গ্রামাঞ্চলে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে যারা আয় করছেন তাদেরও এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে আনা যায় এবং তাদের যেন সঞ্চয়ের একটা সিস্টেম করে দেয়া যায়। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের ৫০ শতাংশ অর্থ একবারে দেয়া হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে দেয়া হয়েছে, যাতে একবারে খরচ করতে না পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতে ৭৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৭৩ শতাংশ এ্যাকাউন্টিং সিস্টেম রয়েছে। আমরা এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে ৫৩ শতাংশ হলেও গত সাত-আট মাসে যে পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো কাউন্ট করলে আমাদের এ্যাকান্টিং সিস্টেম আরও বেশি হবে। আপনি যখন এ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে আসবেন তখন আপনার সবকিছু পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে। পারমাণবিক-তেজস্ক্রিয়তা দুর্যোগ মোকাবেলায় গাইডলাইন অনুমোদন ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি গাইডলাইন করেছে সরকার। এ জন্য ‘জাতীয় পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ক জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি ও সাড়াদান পরিকল্পনা’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের সেফটি মেজারের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) প্রস্তাব রয়েছে যে, এই ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট করার আগে নিরাপত্তার বিষয় ও সাড়াদান পরিকল্পনা (রেসপন্স প্ল্যান) থাকতে হবে। না হলে তারা চালু করার সুযোগ দেবে না। সে জন্য আইএইএর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। মাস্ক পরা নিশ্চিতে ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ ॥ ঢাকায় মাস্ক পরা নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনাসহ শক্ত অবস্থানে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা জানান। আলোচ্যসূচীর বাইরে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুর্যোগ নিয়ে একটু আলোচনা হয়েছে। কোভিড নিয়ে বলা হয়েছে, আরেকটু শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। (করোনা) একটু বেড়েও যাচ্ছে মনে হচ্ছে। সেজন্য আরেকটু সতর্কতা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঢাকাতে করোনার বিষয়ে কোন নিরাপত্তার গুরুত্ব তেমন দেখা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রবিবার বলে দিয়েছি- যাতে ঢাকাতেও বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে আরও একটু শক্ত অবস্থানে যায়। কবে থেকে এটা দেখা যাবে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আশা করি আগামী ২/৩ তিন দিনের মধ্যে দেখা যাবে।
×