ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসংখ্য প্রদীপের টুকরো টুকরো আলো, মায়াবী রাত

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৫ নভেম্বর ২০২০

অসংখ্য প্রদীপের টুকরো টুকরো আলো, মায়াবী রাত

মোরসালিন মিজান ॥ একসঙ্গে অনেক প্রদীপ জ্বলছে দেখতে এমনিতেই ভাল লাগে। আর দীপাবলি হলে তো কথাই নেই। আনন্দে মন নেচে ওঠে। অনেক আগে থেকে অপেক্ষা করে থাকে উৎসবপ্রিয় বাঙালী। শনিবার ছিল সেই দিন। দিন তো নয়, আলোঝলমলে রাত। রাতটি এবারও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠেছিল। দীপাবলি মানে অসংখ্য প্রদীপ বা প্রদীপের সমষ্টি। উৎসবের রাতে একসঙ্গে বহু প্রদীপ জ্বালানোই নিয়ম। ধর্মীয় দিক থেকে দেখলে এটি সনাতনী উৎসব। কিন্তু বর্ণিল রূপ ও হাসি আনন্দের উপলক্ষ থাকায় অন্যরাও লুফে নিয়েছেন। ধর্মীয় আচার বর্তমানে সামাজিক সাস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে এবারও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। মাটির প্রদীপ যেমন দেখা গেছে, তেমনি যোগ হয় দৃষ্টিনন্দন মোমবাতি। কোন কোন বাসায় আলোকসজ্জা করা হয়। এভাবে সন্ধ্যা থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে হাসিরাশি আনন্দ। তবে দীপাবলির মূল আকর্ষণ উন্মুক্ত স্থানে প্রদীপ প্রজ্বলন। প্রতি বছর দেশের নানা প্রান্তে এ ধরনের বড়সড়ো প্রদীপ প্রজ্বলনের আয়োজন চোখে পড়ে। কিন্তু এবার কোভিড পরিস্থিতির কারণে সব কিছুই তছনছ হয়ে গেছে। একই কারণে সীমিত করা হয় দীপাবলির আয়োজন। তাই বলে উৎসব থেমে থাকেনি। ঢাকার একাধিক মন্দির ঘিরে আলোকোজ্জ্বল উৎসবের আয়োজন করা হয়। বচেয়ে বর্ণিল ছবিটি দৃশ্যমান হয় স্বামীবাগের শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির প্রাঙ্গণে। এখানে পুজারিরা প্রত্যেকে প্রদীপগুচ্ছ সামনে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসেছিলেন। প্রত্যেকের সামনে জ্বলছিল ৮ থেকে ১০টি প্রদীপ। এ সময় বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে দেয়ায় পরিবেশটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। মন্দির প্রাঙ্গণে কথা হয় শিখা নামের এক তরুণীর সঙ্গে। উৎসবে যোগ দিতে পারায় ভীষণ আনন্দিত মনে হয় তাকে। বাসাবো থেকে আসা শিখা বলেন, দীপাবলির রাতে ঘর থেকে বের হবো না, ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সব দেখে বাবা-মা এখানে আসার অনুমতি দেন। এখানে আসার পর আয়োজন দেখে মন ভাল হয়ে গেছে। দীপাবলির আলোয় করোনার দুর্দিনও ঘুচে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রায় একই সময় দীপ জ্বালানো হয় ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে। খোলা জায়গায় দুই চারশ’ নয়, হাজার প্রদীপ। প্রতিটি শলতের মুখে আগুন। আগুন যা, তারও বেশি আলো। টুকরো টুকরো আলোর সমষ্টি অন্ধকার দূর করে চারপাশটাকে উদ্ভাসিত করে তুলে। রাত আর রাত ঠেকে না। দিন মনে হয়, না, তা-ও নয়। বরং রাত আর দিনের মিশেলে দারুণ এক দীপাবলি উৎসব! এখানে উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। আয়োজকদের পক্ষে কাজল দেবনাথ বলেন, এবার করোনার কারণে আমরা প্রতীকী উৎসব করেছি। সব কিছুই ছিল সীমিত। তবে মনে আনন্দের কোন অভাব ছিল না। শুধু প্রদীপ প্রজ্বলন নয়, উৎসব থেকে মনকে আলোকিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকার বাইরে থেকেও দীপাবলি উৎসব উদ্যাপনের খবর পাওয়া যায়। প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি থাকে বরিশালে। এবারও অত বড় না হলেও, বর্ণাঢ্য দীপাবলি উৎসবে মেতে ওঠে গোটা এলাকা। সব মিলিয়ে দারুণ একটি রাত। উৎসবের এমন রাত ঘুরে ফিরে আসুক বাঙালীর ঘরে।
×