ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদের বুকে বিপুল পানি

প্রকাশিত: ২১:২০, ১৩ নভেম্বর ২০২০

চাঁদের বুকে বিপুল পানি

মানুষ যদি কখনও চাঁদে ঘাঁটি তৈরি করতে চায় সে ঘাঁটিগুলোর জন্য পানি লাগবে। সেই ঘাঁটিতে বসবাসকারী মানুষদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই শুধু যে এ পানির প্রয়োজন হবে তা নয়, চাঁদের সেই ঘাঁটি থেকে অন্য কোথাও পাড়ি জমাতে হলে, যেমন ধরুন মঙ্গলগ্রহে যেতে হলেও পানি লাগবে। এই পানি রকেট জ্বালানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পৃথিবীর বুক থেকে প্রচণ্ড গতিতে রকেট ছুটিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে গেলে যে পরিমাণ জ্বালানি পোড়াতে হয় তাতে প্রচুর খরচ পড়ে। সেদিক থেকে দেখলে চাঁদে ঘাঁটি গাড়লেও সেখানে পানি মিললে ভবিষ্যতের মহাকাশ যাত্রীদের জন্য এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর হয় না। কারণ সেই পানি থেকেই মিলবে রকেটের জ্বালানি। এতে খরচ পড়বে অনেক কম। আনন্দের সংবাদটা হলো চাঁদে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটু-আধটু নয়, এ পানি আছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। ‘নেচার এসট্রোনমি’ সাময়িকীর সাম্প্রতিক সংখ্যায় চাঁদে পানির অস্তিত্বের ওপর এক জোড়া গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। একটি গবেষণা চালাতো যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো-বিশ্ববিদ্যালয়ের পল হাইন। তিনি দেখিয়েছেন আগে যা ধারণা করা হয়েছিল চাঁদের বুকে তার চেয়েও বেশি জায়গাজুড়ে চিরস্থায়ী ছায়া রয়েছে। ‘চিরস্থায়ী ছায়া’ কথাটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এটি বরফের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। চাঁদের শীতল ছায়াময় অঞ্চলে বরফ থাকলে সেখান থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে পানি মিলবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের বেশিরভাগ জায়গাই সূর্যের আলোর আয়োনিত বিকীরণে কঠিনভাবে স্নাত। সুতরাং সেই জায়গায় পানির কোন মলিকুল বা ক্ষুদ্র কণার অস্তিত্ব থাকলে তা বিকীরণের ঝাপটায় দ্রæত ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে কিংবা মহাকাশে মিলিয়ে যাবে। কিন্তু ড. হাইন গবেষণায় দেখিয়েছেন যে চাঁদের বুকে বরফ ধরে রাখা এ ধরনের প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটারের ‘কোল্ড ট্র্যাপ’ রয়েছে। আরেকটি গবেষণা নিবন্ধ হলো মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার বিজ্ঞানী কেসি হনিবলের। তিনি চাঁদের বুকে পানির মলিকুলের অস্তিত্বের সত্যতা প্রমাণ করেছেন। আগের তথ্য-প্রমাণে পানির মলিকুলের কথা বলা হলেও সেই মলিকুলগুলোকে হাইড্রোক্সিল র‌্যাডিকেলগুলো থেকে পার্থক্য করে দেখানো যায়নি। হাইড্রোক্সিল র‌্যাডিকেলস হলো পানির সাব-ইউনিট। যেগুলো সাধারণত অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ থাকে। তবে বিচিত্র ব্যাপার হলো ড. হনিবলের বর্ণিত পানির মলিকুলগুলো রয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠের সূর্যালোকিত অংশগুলোতে, যা কিনা কোল্ড ট্র্যাপগুলো থেকে দূরে। চাঁদ পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। একে নিয়ে গবেষণাও হয়েছে সর্বাধিক। তার পরও চাঁদের বুকে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে অতি সাম্প্রতিককালে এবং সেটা বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণকে ক্রমান্বয়ে সমষ্টিবদ্ধ করে। ১৯৯৯ সালে নাসার নভোযান ক্যাসিনি শনিগ্রহে যাওয়ার পথে চাঁদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে পানির অস্তিত্বের আভাস পায়। সেই আভাস জোড়ালো হয়ে ওঠে এক দশক পর যখন ভারতীয় নভোযান চন্দ্রায়ন-১ চাঁদে গিয়েছিল। চন্দ্রায়নে ছিল মুন মিনারেলোজি ম্যাপার (এম৩) নামে আমেরিকার তৈরি একটি যন্ত্র। এটি স্পেকট্রোমিটার দিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ঠিকরে ফিরে যাওয়া সূর্যালোক পরীক্ষা করে দেখে। তা থেকে দেখা যায় যে একটি সুনির্দিষ্ট ওয়েভ লেনয়ের-তিন মাইক্রোনের ইনফ্রারেড আলো চন্দ্রপৃষ্ঠ শুষে নিচ্ছে। পানি যেখানে শুষে নেয়া হয় এটাও ঠিক সেই প্যাটার্নের। অবশ্য শুধু পানি নয়, হাইড্রোক্সিলও একই ধারায় শুষে নেয়া হয়। (Gg3) নামক যন্ত্রটির দ্বারা পরিচালিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কয়েক মাস পর নাসা ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে এটলাস-ভি রকেটের পরিত্যক্ত অংশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে কেবিয়াস নামক একটি জ্বালামুখের ভেতরে আছড়ে নামায়। কেবিয়াসকে এ জন্য বেছে নেয়ার কারণ জায়গাটি চিরস্থায়ী ছায়ায় ঢাকা জায়গা হিসাবে পরিচিত। আছড়ে নামানোর কয়েক মিনিট পর লুনার ক্রেটার অবজারবেশন এ্যান্ড সেন্সিং স্যাটেলাইট বা সংক্ষেপে ‘এলক্রস’ নামে নাসার একটি নভোযান এটলাস ভি রকেটের পতন জনিত ধ্বংসাবশেষের মেঘমালার ছবি ও পরিমাপ ক্যামরোর সাহায্যে গ্রহণ করে। এর আগে ১৯৯০ এর দশকে নাসার ক্লিমেন্টাইন ও লুনার প্রসপেক্টর নামক মিশনগুলো দ্বারা চাঁদের দক্ষিণ মেরু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, ওই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন রয়েছে। যদিও সেই হাইড্রোজেন কি রূপ ধারণ করে আছে তা পরিষ্কার ছিল না। সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল ‘এলক্রস’। এটলাস রকেটের পরিত্যক্ত অংশ পতনের ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠের ৩৫০ টন পাথুরে পদার্থ ও ধুলাবালি বেরিয়ে আসে কেবিয়াস জ্বালামুখ থেকে। কেবিয়াসের ভেতরেই সৃষ্টি হয় ২০ মিটার চওড়া গর্ত। ধূম্ররাশি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার উর্ধে ওঠে। বেরিয়ে আসা পদার্থরাজির মধ্যে এলক্রস তিন-মাইক্রন স্পেকট্রোস্কোপিক সিগন্যাল নির্ণয় করে। কিন্তু সেই সঙ্কেতের কারণ পানি না হাইড্রোক্সিন তখনও সেই পার্থক্য টানা সম্ভব হয়নি। নাসার টেলিস্কোপ সংযোজিত বিমান স্ট্যাটোস্ফোরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড এস্ট্রোনমি বা সোফিয়ার সহায়তায় বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠদেশে পানির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। সোফিয়া চাঁদকে দেখার এক নতুন উপায়ের সন্ধান দিয়েছে। এটি বোয়িং ৭৪৭ এসপি জেটলাইনারের একটি পরিমার্জিত রূপ। ১০৬ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ লাগানো এই জেট বোয়িংটি ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৯৯ শতাংশ জলীয় বাষ্পের উর্ধে পৌঁছে, যাতে করে ইনফ্রারেড জগতকে আরও স্বচ্ছভাবে দেখতে পাওয়া যায়। আর এভাবেই সোফিয়া তার টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদে পানির মলিকুলের সুনির্দিষ্ট ও অন্যান্য ওয়েভলেনথ ধরে ফেলতে পেরেছে এবং সেটা হচ্ছে ৬.১ মাইক্রোন। ড. হনিবল বলেন, ঘন বায়ুমণ্ডল না থাকায় চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠদেশের পানি মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার কথা। তথাপি আমরা কোন না কোনভাবে সেই পানি দেখতে পাচ্ছি। কোন একটা কিছু থেকে পানি তৈরি হচ্ছে। কোন একটা কিছু নিশ্চয়ই সেখানে আটকা পড়ে আছে। সোফিয়ার প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান অন্যতম সর্ববৃহৎ জ্বালামুখ কেবিয়াসে প্রতি মিলিয়নের ৪১২ ভাগের ১০০ ভাগ অনুপাতে পানির সমাবেশ প্রকাশ পেয়েছে। মোটামুটিভাবে বলা যায়, যে চন্দ্রপৃষ্ঠে ছড়ানো এক ঘনমিটার মৃত্তিকায় ১২ আউন্সের এক বোতল পানি আটকা পড়ে আছে। সে তুলনায় সাহারা মরুভ‚মিতে এক শ’ গুণ বেশি পানি মৃত্তিকায় মিশে আছে। অতি সামান্য পরিমাণে হলেও চাঁদের বুকে যে পানির অস্তিত্ব সোফিয়ার টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে তা থেকে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেমন, কিভাবে সেই পানি সৃষ্টি হলো এবং কিভাবেই বা সেটা চন্দ্রপৃষ্ঠের বায়ুহীন কঠিন অবস্থায় থেকে যেতে পারছে? এই পানি সৃষ্টি হওয়া বা পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু শক্তি কাজ করে থাকতে পারে। চাঁদের বুকে ছোট ছোট বা উল্কাবৃষ্টি থেকে এই পানির আগমন ঘটতে পারে। উল্কার বয়ে আনা সামান্য পরিমাণ পানি চাঁদের বুকে উল্কাপাতের পর সেখানে জমা থাকতে পারে। আরেক সম্ভাবনা হলো একটা দুই ধাপ প্রক্রিয়া সেখানে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে হয়ত সৌরবায়ু চন্দ্রপৃষ্ঠে হাইড্রোজেন বয়ে এনেছে এবং তারপর চাঁদের মাটিতে অক্সিজেনবাহী খনিজ পদার্থের সঙ্গে সেই হাইড্রোজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে হাইড্রোক্সিল। এদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উল্কাবর্ষণ থেকে যে বিকীরণ ঘটেছে তা থেকে হাইড্রোক্সিল পানিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকতে পারে। সেই পানি কিভাবে মজুদ থাকতে পারল সেটাও একটা প্রশ্ন। মাটির মধ্যকার পুঁতির মতো কাঠামোর মধ্যে এই পানি আটকা থাকতে পারে। উল্কাবর্ষণে যে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয় তা থেকে পুঁতির মতো এই কাঠামোগুলো সৃষ্টি হয়েছে। আরেক সম্ভাবনা হলো সূর্যালোক থেকে আড়াল পাওয়া চাঁদের মাটির দানাগুলোর মধ্যে এই পানি লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই যদি হয় তাহলে পুঁতির মতো কাঠামোয় আটকা পড়ে থাকা পানির চাইতে মাটির দানাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা পানি অধিকতর আহরণযোগ্য হবে। তবে পুঁতি হোক আর দানা হোক এ ধরনের পানি আহরণের কাজটা চাট্টিখানি কথা নয়। এর চেয়েও পানির সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে বরফ। চাঁদের বুকে ‘কোল্ড ট্র্যাপগুলো’তে এই বরফের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়। ড. হাইন ও তার দল নাসার লুনার রিকোনাইফেস অরবিটার থেকে পাওয়া হাই রিজোলুশন ইমেজগুলোকে কাজে লাগিয়ে চাঁদের বুকে সর্বত্র থাকা এই সম্ভাবনাময় কোল্ড ট্র্যাপগুলো শনাক্ত করেছেন। কোল্ড ট্র্যাপ যত আছে বলে আশা করা গিয়েছিল তার চেয়েও বেশি আছে। এগুলোর আকার মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার চওড়া। প্রত্যাশিতভাবেই বেশিরভাগ কোল্ড ট্র্যাপের সন্ধান পাওয়া গেছে চাঁদের দুই মেরুর কাছে। সেখানে সূর্য যখন দৃশ্যমান হয় তখন তা দিগন্তের কাছে থাকে এবং তার ফলে ছায়াগুলোও হয় দীর্ঘ। তবে সামান্য কিছু সংখ্যক কোল্ড ট্র্যাপ নিম্ন অক্ষাংশেও আছে। সেখানে জ্বালামুখের কারণে কিংবা চন্দ্রপৃষ্ঠের অন্যান্য তারতম্যের কারণে সৃষ্ট ছায়া থেকে এই কোল্ড ট্র্যাপের আবির্ভাব ঘটে থাকতে পারে। ছায়া পড়া মানেই হলো সেখানে তাপমাত্রা থাকবে যথেষ্ট কম এবং তা এতই কম যে ওতে বরফ জমা হতে পারে। অবশ্য কোল্ড ট্র্যাপের অস্তিত্ব থাকা মানে এই নয় যে, ওতে কোন কিছু থাকতেই হবে বরফই হোক না অন্য কিছু হোক। বরফ আছে কিনা তা খুঁজে দেখার এবং ড. হনিবলের গবেষণাকর্মে যে প্রশ্নগুলো নিরুত্তর রয়ে গেছে সেগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠ ও তার মৃত্তিকা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। ২০২৩ সালের নবেম্বরে নাসার ভাইপার নামে একটি মিশন যাওয়ার কথা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। সেখানে একটি রোভার নামানো হবে। ওতে অবতরণ স্থলের খনিজ পদার্থ ও বরফের অস্তিত্বের সম্ভাবনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার মতো যন্ত্রপাতি থাকবে। ড. হনিবল ও ড. হাইনের গবেষণার ফলাফল মিশন পরিকল্পনাকারীদের কিছু চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। বিশেষ করে নাসার আর্টেমিস প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো এই দশকের কোন এক সময় চাঁদে মানুষ পাঠানো। ঘাঁটি যদি তৈরি করতে হয় কোথায় করা হবে সেই সিদ্ধান্তটা নির্ভর করবে খাদ্য ও জ্বালানির জন্য পানি এবং বিদ্যুত শক্তির জন্য সূর্যালোকের প্রাপ্যতার ওপর। পানির জন্য যদি দক্ষিণ মেরুতে ঘাঁটি স্থাপন করতেই হয় নভোচারীদের তার মাশুলও দিতে হবে। তাদের বাস করতেও কাজ করতে হবে ঘন অন্ধকার পরিবেশে সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও বেশি। এর চেয়ে উজ্জ্বলতর জায়গায় এবং অপেক্ষাকৃত কম বৈরী পরিবেশে যেখানে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করতে পারার মতো উত্তম ব্যবস্থা আর কি হতে পারে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×