ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বৃহৎ অনলাইন খাবার সরবরাহকারী ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের এক সাঁড়াশি অভিযানে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ার পর এ মামলা দায়ের করা হয়। জানা গেছে, নাভানা প্রিস্টিন প্যাভিলিয়নে অবস্থিত ফুডপান্ডায় ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ফুডপান্ডায় অভিযান চালানো হয়। এতে তারা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। ফুডপান্ডার বিআইএন ০০২১৫৬০৬৬-০১০১। এটি প্রায় ৫০০০টি ফুডস্টোর থেকে ফুড সংগ্রহ করে ভোক্তার নিকট বাইকারদের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফুডপান্ডার চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ফুডপান্ডা কমিশন পায়। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও সহকারী পরিচালক মোঃ মহিউদ্দীন অভিযানটা পরিচালনা করেন। তারা জানান, ভ্যাট গোয়েন্দার পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভ্যাট সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটার তল্লাশি করা হয়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির উর্ধতন কর্মকর্তার ল্যাপটপে মাসিক বিক্রয়ের কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা উক্ত তথ্যসহ আরও কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে। প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা অর্থাৎ সেবার কোড এস-০৯৯.১০ এর আওতায় নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। উক্ত কোডে নিবন্ধন গ্রহণ করে বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রযোজ্যমূসক পরিহার করে আসছে। এই কোডটি কোনক্রমেই তাদের ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও বাড়তি ভাড়ার ওপর অবৈধভাবে শূন্য হারে ভ্যাট সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে আসছে। ফুডপান্ডা প্রতিষ্ঠানটি মূলত ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক (অনলাইন প্লাটফর্ম) ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয় করে থাকে, যার প্রকৃত সেবার কোড এস-০৯৯.৬০। এই কোডের আওতায় ভ্যাট ৫% এবং বাড়ি ভাড়ার ওপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুযায়ী জুলাই-১৯ থেকে জানুয়ারি-২০ ও এপ্রিল-২০ মাসে মোট ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। এই একই সময়ে প্রতিষ্ঠান স্থানীয় গুলশান ভ্যাট সার্কেলে দাখিলপত্রে ১৫,৬৫,১৯,৯৭২ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি গত ৮ মাসে মোট ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বিক্রয়তথ্য গোপন করেছে, যার ওপর পরিহারকৃত মূসক ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইনানুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ ৯, লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানটি সেবার কোড এস-০৯৯.১০ এর আওতায় অসঙ্গতিপূর্ণ নিবন্ধন নেয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ার ওপর কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দকৃত সি.এ. রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪-১৮ পর্যন্ত সময়ে বাড়ি ভাড়া বাবদ ২,৫০,৩৫,৪৯৯ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে, যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৯,০৬,০২৬ টাকা। এছাড়া জানুয়ারি-২০১৯ হতে আগস্ট-২০২০ পর্যন্ত সময়ের জব্দকৃত ভাড়ার চুক্তি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া বাবদ ১ কোটি, ৮৪ লাখ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে, যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৭, লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া বাবদ মোট ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ভ্যাট পরিহার করা হয়েছে। এই বাড়ি ভাড়ার ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ বর্তায় ২৩ লাখ ৬১, হাজার টাকা প্রযোজ্য। এছাড়া দাখিলপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি লিমিটেড কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পণ্য ক্রয়ের ওপর কোন উৎসে মূসক পরিশোধ করেনি।
×