ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত

সাগর ও নদীতে ভাসছে ২০ লাখ টন পণ্য ॥ উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২২ অক্টোবর ২০২০

সাগর ও নদীতে ভাসছে ২০ লাখ টন পণ্য ॥ উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে লাইটারিং এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহনের ওপর। শিল্পের কাঁচামাল আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কারখানাগুলো। কর্মসূচী অব্যাহত থাকায় আমদানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের উৎকণ্ঠা ক্রমেই চরমে উঠছে। মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষই অনড় থাকায় সমাধানও পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে। চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো নিয়ে ভাসছে ৪০টিরও বেশি মাদার ভেসেল। এছাড়া ঘাটে ঘাটে অপেক্ষমাণ প্রায় হাজার খানেক লাইটার জাহাজ। সব মিলে অন্তত ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ভাসছে সাগরে ও নদীতে। বুধবার সকাল থেকে সেই একই চিত্র। সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচী চলমান রয়েছে। খোরাকি ভাতা, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে এ কর্মসূচী আহ্বান করেছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের রয়েছে ১৫ দফা দাবি। নেতাদের বক্তব্য- এ দাবিগুলো নিয়ে কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোন সুরাহা হয়নি। ফলে তারা লাগাতার কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, জেটিতে কন্টেনার উঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও নৌযান শ্রমিকরা কাজে না থাকায় বহির্নোঙ্গরে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে বড় জাহাজগুলো পণ্য নিয়ে অলস ভাসছে। তবে বুধবার বন্দর থেকে কন্টেনার ডেলিভারি অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। কেননা, কন্টেনার শিপের ক্ষেত্রে নৌযান শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, বহির্নোঙ্গরে এখন ৪০টিরও বেশি মাদার ভেসেল রয়েছে। এ সব জাহাজে রয়েছে গম, চিনি, চাল, ভুট্টা, সিমেন্ট ক্লিংকার, সিরামিক, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল ও পাথরসহ নানা ধরনের পণ্য। শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে থাকায় পণ্য লাইটারিং এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে এগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে না। লাইটার জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ জানান, কর্মসূচী অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং বহির্নোঙ্গরে জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। বুধবারও কোন লাইটার জাহাজ বুকিং হয়নি। উভয় পক্ষ অনড় অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে সরকারী পর্যায়ে কোন বৈঠকের উদ্যোগ এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, বন্দর বহির্নোঙ্গরে ৪০টির বেশি জাহাজে এখন প্রায় ৯ লাখ টন পণ্য রয়েছে। নদীর ঘাটে ঘাটে অপেক্ষমাণ আছে ৯শর মতো লাইটার জাহাজ। এগুলোতে রয়েছে আরও প্রায় ১২ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। ধর্মঘটী শ্রমিকরা বিভিন্ন পয়েন্টে গ্রুপে গ্রুপে অবস্থান নিয়ে আছে। কোন ধরনের কাজ হচ্ছে না পণ্য লাইটারিং এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে। সবমিলে ২০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পণ্য এখন ভাসমান অবস্থায় আছে মাদার ভেসেল ও লাইটার জাহাজগুলোতে। বুধবার বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, সঙ্কট সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ এখনও নেই। মালিক এবং শ্রমিক দুপক্ষই যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে। করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক মন্দার এ মুহূর্তে দাবি মেনে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে মালিক পক্ষের সংগঠন। তাছাড়া পূর্বে ঘোষিত নিম্নতম মজুরির সরকারী গেজেটে ৫ বছরের মধ্যে নতুন কোন দাবি তোলা যাবে না মর্মে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তারা। পাশাপাশি নৌযান শ্রমিক সেক্টরে এ ধরনের কর্মবিরতি করা যাবে না বলে আদালতেরও নির্দেশনা আছে বলে জানিয়েছে জাহাজ মালিকদের সংগঠন। এদিকে, পণ্য লাইটারিং ও পরিবহন বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার এবং শিল্পখাত। জাহাজ থেকে ভোগ্যপণ্য আনলোড না হওয়ায় বাজারে সরবরাহ পড়ে গেছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। কাঁচামালের সঙ্কট দেখা দেবে, এ আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন শিল্প মালিকরা। তাদের সকলেরই চাওয়া আলোচনার মাধ্যমে এ সঙ্কট নিরসন করা হোক। নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশের ন্যায় লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছে নারায়ণগঞ্জের নৌযান শ্রমিকরা। বুধবার সকালে কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জের ৫নং ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কর্মবিরতির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। বরিশালে বিক্ষোভ ॥ নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ, বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিকরা।
×