মুক্তি চাই
নাজির চৌধুরী রনজু
মুজিব তুমি বন্দী
বৃত্তের বলয়ে দলীয় শৃঙ্খলে
নিষ্পেষিত তুমি সঙ্কীর্ণতার বেড়াজালে
ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বন্দ্বে দলীয় হাওয়ার পালে।
মুজিব কেন ঝুলবে গাছের ডালে ডালে
ফার্মগেটের পাবলিক শৌচাগারের দেয়ালে
স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদের নাম ফলকে পকেটে
মিটিং এ মিছিলে অবহেলায় বৃষ্টি বাদলে
আমি দেখেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
অগণিত মানুষের হাতে তোমার ছবির লিফলেট
সবুজ ঘাসে তা বিছিয়ে প্রাণান্তকর আড্ডার উৎসব
মিটিং শেষে অবজ্ঞায় ছুড়ে ফেলা লিফলেট
মাড়িয়ে মানুষের বাইরে যাবার উচ্ছ্বাস
আমি বিস্ময়ে আরও দেখেছি
কাগজ কুড়ানো টোকাইদের হৈ হুল্লোড় মহোৎসব
কি অবলীলায় তোমাকে কাঁধে ঝোলানো
নোংরা ব্যাগে ঢুকিয়ে প্রতিযোগী
অবুঝ মুখে তৃপ্তির হাসি
আরও দেখেছি মিছিল মিটিং শেষে
তোমার ছবির ফেস্টুন কি নিদারুণ
অবহেলায় শোভা পাচ্ছে বস্তির আচ্ছাদনে
ঝড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বিবর্ণ একাকার
আমি বিষণœ হৃদয়ে আরও দেখেছি
উন্মত্ত প্রতিপক্ষের হামলায় কোন
আঞ্চলিক অফিসে ভাঙা চেয়ার টেবিল
কাচের নিচে বঙ্গবন্ধু তাকিয়ে আছে
অসহায় দৃষ্টিতে ঠিক যেমনি করে
তাকিয়ে ছিল পনেরই আগস্টের
কালরাত্রিতে
ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরের সিঁড়িতে
প্রশ্ন আজি
এই কি জাতির পিতার মূল্যায়ন!
এই কি তার প্রাপ্য সম্মান!
তাই বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই
কোন দলীয় শৃঙ্খলে নয়
নয় কোন মিটিং মিছিলের ফেস্টুন পোস্টারে
বঙ্গবন্ধু হবে সর্বজনীন
থাকবে ষোলো কোটি মানুষের হৃদয়ে
জাতির পিতার সশ্রদ্ধ সম্মানে!!
** নির্বাসিত ক্রোধ
কাজী জহিরুল ইসলাম
পারতপক্ষে বৃক্ষের ডাল কাটি না, পিঁপড়েদের গা এড়িয়ে
পা ফেলি রাস্তায়, বাড়ির পেছনে।
মৃত পাখি বিদ্যুতের তারে ঝুলে আছে
যদি দেখি কখনো, বিষাদে নীল হয়ে
লিখে ফেলি কষ্টের কবিতা।
নিষ্ঠুর অপরাধীর জন্য শাস্তি কামনা করিনি কোনোদিন
বরং নিজে গালি খেয়েও সবাইকে একথাই বলতে চেয়েছি
হয়ত সে ভুল করেছে অথবা
ওর দরকার প্রেম, ওকে দাও থেরাপি, সহানুভূতি;
শাস্তি কোনো সমাধান নয়।
মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে আমার অনড় অবস্থান
ঘোষণা করেছি বহুকাল আগেই।
আমি তো আমার ক্রোধকে
কবেই হত্যা করেছি ভালোবাসার ছুরি দিয়ে,
ঘৃণার পাহাড় গলে গেছে সেই কবে,
ঈর্ষা এক দূরের অচেনা দ্বীপ।
কিন্তু আজ এ-কী হলো?
আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছি না মোটেই,
পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি ঋজু দেহ বেপথু এ-কোন ক্রোধে?
বেগমগঞ্জের ধর্ষিতা-নারী আমার মুখে থুতু
ছিটাতে ছিটাতে চিৎকার করছে, তোমার নীরবতা দায়ী;
হ্যাঁ, তোমার নীরবতাই আমাকে বিবস্ত্র করেছে, ধর্ষণ করেছে,
আর কত নারী সম্ভ্রম হারালে তুমি জেগে উঠবে সন্নাসব্রত ভেঙে?
যখন আমার বোনকে উলঙ্গ করা হয়,
যখন আমার বোনকে গণধর্ষণ করা হয়
যখন স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ধর্ষিতার চিৎকারে
ভেঙে খান খান হয়ে যায়
লাল-সবুজের উড্ডীন পতাকা হয়ে পড়ে অর্থহীন
তখন আমার নির্বাসিত ক্রোধ ফিরে আসে
পৃথিবী কাঁপিয়ে আমিও বলতে চাই-
ফাঁসি চাই,
এইসব নরপশুদের আমিও ফাঁসি চাই।
** হৃৎপি- গলে যায়
হাশিম কিয়াম
হৃৎপি- গলে গেলো পাঁজার গনগনে আগুনে
গাঢ় ধূমজাল হয়ে চিলের মতোন উড়ে গেলো
নীল আকাশের টানে, নিথর ধড়টি শুয়ে আছে
বিলাসী নম্র বিছানায়; একটি ছাইরঙা পায়রা
চারপাশে ঘুরঘুর করছে বিরহিণী ময়ূরীর
মতো; ধীরে ধীরে পচে যায় ধড়ের চোখ, রঙিন
মাছ হয়ে হঠাৎই এ্যাকোয়ারিয়ামের জলে
মাতাল সাঁতার কাটে; মাঝে মাঝেই অবাক চোখে
চেয়ে দ্যাখে প্রিয় যতো অচেনা মুখ; একসময়
শুকিয়ে যায় সমস্ত জল; জালি কানকো সোনালি
আলোয় অনাদিকাল খাবি খায়; ফসিল কুড়িয়ে
খায় শকুনের ঝাঁক, অদূরে দাঁড়িয়ে আছে এক
দাঁড়কাক; মঙ্গলের লেকে নির্ভয়ে সাঁতার কাটে
গোলাপি হাঁসের ঝাঁক-গুলির আওয়াজে উড়ে যায়।
শীর্ষ সংবাদ: