ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিষ্ণুপদ মজুমদার

দুর্নীতির বিপরীতে সুনীতি

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৫ অক্টোবর ২০২০

দুর্নীতির বিপরীতে সুনীতি

দুর্নীতি দূর হবে! তবে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। দুর্নীতি দূর করে সুনীতি আনতে হবে। সুনীতি আসলেই দুর্নীতি দূর হবে! যেমন আলো আসলেই অন্ধকার দূরীভূত হয় তেমন সুনীতি আসলেই দুর্নীতি দূর হবে। সে জন্য ‘সুনীতি সম্প্রসারণ কমিশন’ গঠন করতে হবে। কারণ ‘দুর্নীতি শব্দটি সবার কাছে সুপরিচিত হলেও সুনীতি শব্দটি বহুল পরিচিত নয়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী দুর্নীতির ওপর বেশ কয়েক পাতা রচনা লিখে পুরস্কার পেলেও সুনীতি সম্পর্কে ৫টি বাক্যও লিখতে পারবে না। কারণ দুর্নীতি নিয়ে যদিও ব্যাপকভাবে সভা-সমাবেশ, তর্ক-বিতর্ক, বক্তৃতা, মিছিল, আলোচনা অহরহ চলছে কিন্তু সুনীতি নিয়ে কোথাও টুঁ শব্দটিও নেই। এমনকি দুর্নীতির মূল উৎপাটনের জন্য যে সভা-সমাবেশ হচ্ছে সেখানেও দুর্নীতির বিপরীত সুনীতি যে একটি শব্দ রয়েছে সে সম্পর্কে কেউ কোন দিন ভুলেও উচ্চারণ করেনি। সে জন্য সুনীতি লজ্জায় ম্রিয়মান। এ লজ্জিত সুনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘সুনীতি সম্প্রসারণ কমিশন’ গঠন করা একান্ত প্রয়োজন। সুনীতি বলতে বোঝায় সুন্দর নীতি, শুভ নীতি, মধুর নীতি, উৎকৃষ্ট নীতি, উত্তম নীতি। সুনীতি নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। নৈতিক শিক্ষা হচ্ছে ১। স্রষ্টায় বিশ্বাস রাখা ২। পিতা-মাতার সেবা করা ৩। শিক্ষককে মান্য করা ৪। গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা ৫। প্রতিবেশীর সেবা করা ৬। দেশকে ভালবাসা ৭। সত্য বলা ৮। লোভ দমন করা ৯। পর দ্রব্যে নির্লোভ হওয়া ১০। দুস্থের সেবা করা ১১। সৎ পথ অন্বেষণ করা ১২। সৎ পরামর্শ গ্রহণ করা ১৩। নারী জাতিকে মাতৃজ্ঞানে সম্মান করা ১৪। বলিষ্ঠ হতে চেষ্টা করা ১৫। সকলের সহিত সম্প্রীতি রাখা ইত্যাদি। উপরে বর্ণিত নৈতিক শিক্ষাগুলো অর্জনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা। আর সে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পাঠ্যবই এবং উপযুক্ত শিক্ষক। নৈতিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সৎ, যোগ্য, আদর্শবান ও ভাল মানুষ। প্রাথমিক স্তর থেকেই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং নিয়মিত অনুশীলন করে এটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। সৎ মানুষই শ্রেষ্ঠ মানুষ। সততা একটি উৎকৃষ্ট মানবিক গুণ। সৎ ব্যক্তি সব সময় সত্যক ধরে রাখেন। সত্য ও সৎ ব্যক্তিকে রক্ষা করেন। সত্য সৎ ব্যক্তির চতুর্দিকে এমন এক আবেষ্টনী তৈরি করেন যা ভেদ করে সৎ ব্যক্তির পক্ষে অসৎ পথে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব হয় না। কথাটি কি একটু অতিকথা হয়ে গেল না? নিশ্চয়ই না। কারণ সৎ ব্যক্তিরাই এটা উপলব্ধি করতে পারবেন, অন্যেরা নয়। এটা উপলব্ধির বিষয়, পরীক্ষার বিষয় নহে। সত্য যেমনি বিমূর্ত এ উপলব্ধিটাও তেমনি বিমূর্ত। একমাত্র নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এবং সে শিক্ষা বাস্তবে রূপায়িত করতে পারলেই দুর্নীতি দূর হবে নতুবা নহে। কারণ একজন সৎ লোক গভীর নিশিথে অথবা সবার অলক্ষ্যে দুর্নীতি করার অবারিত কোন সুযোগ পেলেও তিনি তা করেন না। কারণ নৈতিক চেতনা তাকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে এবং ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচায়। নৈতিক শিক্ষার অভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। কাজেই নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় করোনাভাইরাসের মতো পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতি দমন নয় এর মূল উৎপাটন করতে হবে এবং প্রবল ইচ্ছা থাকলে এখনই এবং এ মুহূর্তেই সম্ভব। মানুষ ইচ্ছা করলে সব কিছুই করতে পারে। দুর্নীতি তো মানুষই করে। কাজেই এ মুহূর্ত থেকেই যদি আমরা সবাই আর দুর্নীতি করব না- এ প্রতিজ্ঞা করি এবং তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি তবে এখনই এবং এ মুহূর্ত থেকেই দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে। পরশ পাথর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে
×