ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদুল্লাহ একাদশকে হারাল নাজমুলরা

প্রকাশিত: ০০:০৯, ১২ অক্টোবর ২০২০

মাহমুদুল্লাহ একাদশকে হারাল নাজমুলরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে ২০৮ দিনের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গেছে বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। ১৬ মার্চের পর প্রথম কোন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন ক্রিকেটাররা রবিবার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত ৩ দলের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নাজমুল একাদশ। আগুন বোলিং করেছেন দু’দলের পেসাররা। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও নাজেহাল হয়েছেন। দিবারাত্রির ম্যাচে আগে ব্যাট করে পেসারদের দাপটে মাহমুদুল্লাহ একাদশ ৪৭.৩ ওভারে ১৯৬ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে এবাদত হোসেনের পেস তোপে মাত্র ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে নাজমুল একাদশ। কিন্তু দুই তরুণ তৌহিদ হৃদয় ও ইরফান শুক্কুরের জোড়া অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ৪১.১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৭ রান তুলে জয় পায় তারা। সেই সাফল্য তারা উদ্যাপন করেছেন, তবে দর্শকহীনতায় বাইরের কারও কানে পৌঁছায়নি উল্লাস ধ্বনি। বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে দর্শক শূন্য মাঠেই হবে এই আসর। গ্যালারিতে তাই সুনসান নিস্তব্ধতা। তবে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৭ মাসের ক্রিকেটীয় নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গেছে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতেই বিসিবি কার্যালয়ের ভবন। সেই ভবনের মাথা থেকে ঝুলন্ত সুবিশাল ব্যানারে ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট’ লেখাটা দৃষ্টি কাড়ে। কারণ, বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়েই মূলত মূল ধারার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ফিরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যদিও জাতীয় দলের স্কিল ক্যাম্পে ডাক পাওয়াদের নিয়ে দুটি দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন ২৬ ক্রিকেটার, তাতেই ম্যাচ খেলার স্বাদটা পেয়ে গেছেন অনেকে। রবিবার একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতায় নামলেন ক্রিকেটাররা। বিসিবি সে জন্যই ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার প্রাইজমানি রেখেছে। প্রতি ম্যাচেই আছে পুরস্কারের ছড়াছড়ি। সুদৃশ্য ট্রফির সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ১৫ লাখ টাকা জেতার যুদ্ধটা শুরু হয়েছে নাজমুল একাদশ ও মাহমুদুল্লাহ একাদশের মধ্যে। নির্দিষ্ট সময়ে টসের পর খেলা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিপত্তি ঘটায় বৃষ্টি। তবে মাত্র ২৫ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে মাহমুদুল্লাহ একাদশ। বৃষ্টির পরই তাদের আঘাত হানে নাইম শেখের (৯) রানআউট। পরের ওভারেই লিটন দাসকে (১১) বোল্ড করে দেন গতির আগ্রাসন দেখানো তাসকিন আহমেদ। পরবর্তী ওভারে সুপার সাব হিসেবে খেলতে নামা আরেক পেসার আল-আমিন হোসেন বোল্ড করে দেন মুমিনুল হক সৌরভকে (০)। দলীয় ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর দুই অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস ও মাহমুদুল্লাহ চতুর্থ উইকেটে ৭৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। দারুণ খেলতে থাকা ইমরুল ৫০ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৪০ রান করার পর অফস্পিনার নাঈম হাসানের শিকারে পরিণত হলে জুটি ভেঙ্গে যায়। নুরুল হাসান সোহানও (১৪) রানআউট হয়ে গেলে একাই লড়াই চালিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। তিনি অর্ধশতক হাঁকান এবং ৮২ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৫১ রান করে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর শিকার হন। তরুণ এ পেসার পরবর্তীতে দারুণ খেলতে থাকা সাব্বির রহমানকেও (২৫ বলে ২২) দুর্দান্ত কট এ্যান্ড বোল্ডে সাজঘরে পাঠান। শেষ পর্যন্ত ৪৭.৩ ওভারে ১৯৬ রানেই থমকে যায় মাহমুদুল্লাহ একাদশ। তিন পেসার তাসকিন, আল-আমিন ও মুগ্ধ ২টি করে, অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকার ও অফস্পিনার নাঈম ১টি করে উইকেট নেন। মামুলি সংগ্রহের জবাব দিতে নামার পর নাজমুল একাদশ ভালই শুরু করেছিল। সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান জুটি ২৭ রান যোগ করার পর এবাদত হোসেনের পেস তোপের মুখে বিপর্যয় নামে। সাইফ (১৭) ও সৌম্য (২১) দু’জনকেই সাজঘরে পাঠান তিনি। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও (০) বোল্ড হয়ে যান অফস্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব (৫) ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও দ্রুত সাজঘরে ফিরলে বিপদে পড়ে নাজমুল একাদশ। ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা দলটিকে পথ দেখান যুব বিশ^কাপজয়ী দলের ১৯ বছর বয়সী তৌহিদ হৃদয় ও প্রতিশ্রুতিশীল শুক্কুর ১০৫ রানের জুটি গড়ে। দলকে জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে রেখে হৃদয় সাজঘরে ফিরলে এই বিশাল জুটির যবনিকা ঘটে। তিনি ৬৭ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৫২ রান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন শুক্কুর, তিনি ৭৮ বলে ৬ চারে ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৪২তম ওভারের প্রথম বলে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় এনে দেন নাঈম হাসান। ৫৩ বল আগেই জয় পায় নাজমুল একাদশ। এবাদত ৩টি উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হৃদয়, সেরা বোলার তাসকিন, সেরা ব্যাটসম্যান শুক্কুর ও সেরা ফিল্ডার হয়েছেন রিশাদ হোসেন। স্কোরকার্ড ॥ মাহমুদুল্লাহ একাদশ ইনিংস- ৪৭.৩ ওভারে ১৯৬/১০ (মাহমুদুল্লাহ ৫১, ইমরুল ৪০, সাব্বির ২২; তাসকিন ২/৩৭, আল-আমিন ২/৪০, মুকিদুল ২/৪৪)। নাজমুল একাদশ ইনিংস- ১৯৭/৬; ৪১.১ ওভার (শুক্কুর ৫৬*, হৃদয় ৫২, নাজমুল ২৮, সৌম্য ২১; এবাদত ৩/৪৬)। ফল ॥ নাজমুল একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তৌহিদ হৃদয় (নাজমুল একাদশ)।
×