ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

পেট্রোস্টেট বনাম ইলেকট্রোস্টেট

প্রকাশিত: ২১:০২, ১১ অক্টোবর ২০২০

পেট্রোস্টেট বনাম ইলেকট্রোস্টেট

করোনা মহামারী এমন এক বিশ্বের জন্ম দিয়েছে যেখানে তেলের দাম না বেড়ে উল্টো কমে গেছে। গত মার্চে বিশ্ব লকডাউনে চলে গেলে তেলের তৃষ্ণা সহসা হ্রাস পায়। তেল রাজস্বের ওপর নির্ভরশীল পেট্রোস্টেটগুলো বাজেট ঘাটতির মুখে পড়ে। তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মাখামাখি সম্পর্কের অবসান হয়। এই টালমাটাল অবস্থায় চীনের তেল আমদানির চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। চীন ইতোমধ্যে হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বৃহত্তর তেল আমদানিকারক দেশ। চীনের কারণেই তেলের বাজারে খানিকটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। সে দেশের তেল শোধনাগারগুলো এতই বিশাল আকার ধারণ করেছে যে, তারাই তেলের দর নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে। এক বিশেষজ্ঞের মতে, এরা মূলত অশোধিত তেলের বাজারের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বৃহৎ তেল প্রতিষ্ঠান সিনোপেক ও চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এশিয়াগামী অশোধিত তেলের দর প্রভাবিত করে থাকে। তেলের দর এখন কম থাকায় চীন তার স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ গড়ে তোলারও সুযোগ পেয়েছে। ব্রাজিল ও গায়ানার উপকূলের অদূরে তেলের বিশাল আধার আবিষ্কৃৃত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে শেল তেলের উৎপাদনে জোয়ার বইছে। এতে চীনের সুযোগ আরও বেড়েছে। তেলের বাজারে সর্ববৃহৎ ক্রেতা হওয়ার আলাদা সুবিধাও আছে। বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। চীন বৃহত্তম ক্রেতা হওয়ায় তার চাহিদা পূরণে উৎপাদকদের মনোযোগ থাকবে বেশি। যেমন, চলতি বসন্তে তেলের দর গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার সময় সৌদি আরব চীনগামী তেলের চালানের দাম বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছিল। চীনের বৃহত্তম রিফাইনারিগুলো তেলের দর নিয়ে ওপেকের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে একটি কনসোর্টিয়াম গঠনের পরিকল্পনাও করছে। তেল রাষ্ট্রগুলো ঋণের বোঝায় ধুঁকছে বিধায় চীন এখন তার আর্থিক শক্তি প্রদর্শন করতে চাইবে। ইতোমধ্যে চীন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এঙ্গোলা ও ব্রাজিলের মতো অশোধিত তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোকে ঋণ দিয়ে আসছে। বিনিময়ে সে তাদের তেল থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। ক্রেতা হিসেবে চীনের ভূমিকা এখন এমন শক্তিশালী যে, তেল রফতানিকারকদের নিষ্পেষিত করার মার্কিন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। চীন দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও ভেনিজুয়েলার অশোধিত তেল আমদানি করে চলেছে। তেলের ব্যাপারে রাশিয়ার সঙ্গে যে মৈত্রীজোট আছে, সেটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বেশ আগেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের তাৎপর্য অনুধাবন করেছিলেন। চীন যে রাশিয়ার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ ২০০৭-০৯ এর আর্থিক সঙ্কটের পর তা আরও প্রকটরূপে ফুটে ওঠে। ২০০৯ সালে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দুটি কোম্পানি তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রসনেমন্ট এবং পাইপলাইন নির্মাতা ও অপারেটর ট্রান্সনেফটকে নতুন তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন ও পাইপলাইন তৈরির জন্য ২৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। দিয়েছিল এই শর্তে যে, সেই পাইপলাইন দিয়ে দিনে তিন লাখ ব্যারেল তেল চীনে সরবরাহ করা হবে। ২০১৪ সালেও ক্রিমিয়া সঙ্কট নিয়ে পাশ্চাত্য দেশগুলো রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সে সময় রাশিয়ার সুবৃহৎ তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম সাইবেরিয়া থেকে পাইপলাইন তৈরি করে সেখানকার তেল-গ্যাস চীনে নেয়ার উদ্যোগ নেয়। চীনের সঙ্গে গাঁটছড়ায় আবদ্ধ থাকার ফলে রাশিয়া এমন এক বিশাল বাজার পেয়ে গিয়েছিল যে, পাশ্চাত্যের অবরোধ তার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। ওদিকে ইউরোপের চাহিদাও হ্রাস পাচ্ছিল। কিন্তু সাইবেরিয়া-চীন পাইপলাইন তৈরি হওয়ার পর শক্তির ভারসাম্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে ক্রেতার হাতে চলে আসে। প্রথম পাইপলাইন নির্মিত হওয়ার পর চীন আগে যে দামে তেল নিতে রাজি হয়েছিল, সেই দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু বাজারে শক্তির এই দম্ভ যতই থাক না কেন, ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমদানির ওপর নির্ভরতার নেতিবাচক বা মন্দ দিকটা কখনও ঢেকে রাখা যায় না। বৃহৎ আমদানিকারকের শক্তি বা ক্ষমতা ক্ষুদে আমদানিকারকের চাইতে হয়ত বেশি থাকে, কিন্তু তার পরও বৃহৎ আমদানিকারক ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যায়। চীনের তেলের সিংহভাগ আছে হরমুজ ও মালাক্কা প্রণালী দিয়ে। তৃতীয় পক্ষের সংঘাতের কারণে এবং চরম অবস্থায় মার্কিন নৌবাহিনী এই প্রণালী দুটো বন্ধ করে দিতে পারেÑএ ব্যাপারে চীন অতিমাত্রায় সচেতন। চীন-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি ঘটায় চীন ইদানীং তার জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। চীনের নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তাই আরও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেই ব্যবস্থার একটি হচ্ছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত শক্তির ব্যাপক বিকাশ। এ যাবত পর্যন্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত রয়েছে চীনে। চীনের কোম্পানিগুলো সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক যান এবং এ জাতীয় জিনিসের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কঙ্গো থেকে শুরু করে চিলি ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন খনিতে বিনিয়োগ করেছে। চীন পেট্রোস্টেট না হতে পারে, তবে দেশটি যা হতে চলেছে সেটিকে ইলেক্ট্রোস্টেট বল যেতে পারে। সেটা যে বৈশ্বিক জলবায়ু সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটা বিজয় তা বলার উপায় নেই। চীনের রয়েছে এক হাজার গিগাওয়াটেরও বেশি কয়লাচালিত বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা। বিশ্বের কয়লাচালিত বিদ্যুত শক্তির ৪৯ শতাংশ উৎপাদন করে চীন। সেদিক থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বৃহত্তম নির্গমনকারী দেশ হলো চীন। চীনে কয়লার ব্যবহার আরও বহু বছর ধরে প্রসারিত হবে বলে ধরা যেতে পারে। চীনের বায়ুবিদ্যুত ও সৌরবিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৪৪৫ গিগাওয়াট। বেশিরভাগ মানদ-ে এই ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। তবে তার পরও সেটা কয়লার মোট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকেরও কম। আর এই নবায়নযোগ্য উৎসগুলোর ক্ষমতার অতি সামান্য অংশই ব্যবহৃত হয়। তবে চীনের ৩৫৬ গিগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাও আছে, যা পরবর্তী ৪টি দেশের সমষ্টিগত জলবিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে বেশি। চীন অন্য যে কোন দেশের তুলনায় দ্রুতগতিতে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। চীনের রয়েছে মোট ৪৮টি পারমাণবিক চুল্লী, যেগুলোর গড় বয়স এক দশকেরও কম। চীনের আরও পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি করার অভিপ্রায় আছে। দেশটির মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশের কম আসে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে। ২০৫০ সালের মধ্যে চীন ১৫ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুত পরমাণু কেন্দ্র থেকে পেতে বদ্ধপরিকর। চীনের পরমাণু, বায়ু, সৌর ও ব্যাটারি খাতের বিবর্তনের মূল ফর্মুলাটি হলো বিদেশীদের কাছ থেকে শেখে এবং তারপর সেই শিক্ষা ব্যাপক পরিসরে কাজে লাগানোর জন্য বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করা। এর ওপর সরকারের দেয়া ভর্তুকি তো রয়েছেই। ২০০০-এর দশকে ইউরোপে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বেশি ব্যবহারের ফলে সৌর প্যানেলের বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হয়, যা কেবল চীনা কোম্পানিগুলোর পক্ষেই মেটানো সম্ভব। রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির বদৌলতে চীনে বিশাল বিশাল ব্যাটারি কারখানা সাফল্যের সঙ্গে উৎপাদন ও ব্যবসা করে চলেছে। জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত এই প্রযুক্তিগুলোরও কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। বায়ুশক্তি ও সৌরবিদ্যুত শক্তির জন্য প্রয়োজন হয় তামা। ব্যাটারির জন্য প্রয়োজন হয় এমন সামগ্রীর, যা জ্বালানি ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে দরকার পড়ে না। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বিশ্বে এ ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। সমস্যা হচ্ছে বিশ্বকে দ্রুত কার্বনমুক্ত করার জন্য এই পণ্যসামগ্রীকে বাজারে নিয়ে আসা। এখানেই রয়েছে সক্ষমতার প্রশ্ন। যত দ্রুত এগুলো বাজারে আনা দরকার, সক্ষমতার ঘাটতির কারণে তত দ্রুত আনা সম্ভব হচ্ছে না। এক গবেষকের ভাষায় এগুলোর কোন ভূতাত্ত্বিক ঘাটতি নেই, ঘাটতি হচ্ছে অর্থায়ন তথা বিনিয়োগের। খনিগুলো প্রায়শই বাজেটকে ছাড়িয়ে যায় এবং প্রায়শই এগুলোর আহরণ বিলম্বিত হয়। এসব খনি যেসব দেশে রয়েছে, প্রায়শই সেখানে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে, যা পাশ্চাত্যের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর কাছে অতটা প্রলুব্ধকর নয়। এই শূন্যতা পূরণের জন্য এগিয়ে এসেছে চীনা কোম্পানিগুলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের দ্বারা সেটা করা হয়েছে। বিশ্বের ‘বিরল মৃত্তিকার’ প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে চীন। এই মৃত্তিকার এমন কিছু ‘গুণ বা ধর্ম রয়েছে যেগুলোর জন্য এটি অন্য অনেক কিছুর মধ্যে ইলেকট্রিক মটরের জন্য উপযোগী। ভূতাত্ত্বিক অর্থে এই মৃত্তিকা সাধারণভাবে বিরল নয়, তবে এর সরবরাহ কম। অন্যান্য ধাতব পদার্থের জন্য চীনকে দেশের বাইরে আরও দূরবর্তী এলাকার দিকে নজর দিতে হয়। বৈদ্যুতিক মোটরগাড়ির ব্যাটারি নির্ভর করে লিথিয়ামের ওপর। চিলিতে লিথিয়ামের বৃহত্তম খনি শিল্প এসকিডএম এ চীনের প্রাইভেট কোম্পানি তিয়ানকির কিছু ভাগ আছে। সিংসান নামে আরেক কোম্পানি ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাটারি গ্রেডের নিকেল প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। কঙ্গোর তামা ও কোবাল্ট শিল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আছে। কঙ্গোয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ নতুন তামার খনি গড়ে উঠছে। চীনের দুটি খনি কোম্পানি সেখানেও অর্থ বিনিয়োগ করেছে। পাশ্চাত্যের বিনিয়োগকারীদের তুলনায় চীনের বিনিয়োগকারীরা এমন এক ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দেয়, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হবে অনেক কম। এই দিক থেকে চীনারা অন্যদের তুলনায় সম্ভবত দশ বছর এগিয়ে। শুধু জ্বালানির জন্য নয়, প্রতিরক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এসব খনিজ সম্পদ চীনারা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাতে উদ্বিগ্ন বোধ করছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিকরা। চীন এখন বিশ্বের ৭০ শতাংশেরও বেশি সোলার মডিউল উৎপাদন করছে। দেশটিতে উইন্ড টার্বাইন উৎপাদিত হচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির সাপ্লাই চেইনের ওপর রয়েছে চীনের আধিপত্য। চীন সেল ক্যাপাসিটির ৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ম্যানুফেকচারিং উপাদানের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। গত বছর চীন বিদেশী ব্যাটারি প্রস্তুতকারকদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। গত এক দশকে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির উৎপাদন খরচ ৮৫ শতাংশের বেশি কমে এসেছে। এতে বিশ্বের বাকি অংশ লাভবান হয়েছে। চীনে সোলার মডিউলের প্রস্তুতকারক বৃহৎ প্রতিষ্ঠান লংগির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘গবেষণায় ও ব্যাপক পরিসরে উৎপাদনে আমাদের নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য গবেষণাকর্মে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিনিয়োগ করে যাব।’ চীন আরও অনেক কিছু উদ্ভাবনের ক্ষেত্র নির্ধারণের আশায় বেশ কিছু শিল্পের কারিগরি মান বাড়াতে আগ্রহী। বিশেষ করে বিশুদ্ধ জ্বালানি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশটি এগিয়ে আছে। টেসলার মতো সক্ষম ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান থাকার পরও জ্বালানি বিশ্বের এই অংশে ট্রাম্পের পরাশক্তির চেহারাটি ম্রিয়মান দেখায়। তবে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশও এক্ষেত্রে বেশ এগিয়েছে। জাপানের প্যানাসোনিক ও দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি চেম-ও ব্যাটারি প্রযুক্তির নতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। ইউরোপের ঢালাও সমর্থনের কারণে বিশ্বের শীর্ষ উইন্ড টার্বাইন প্রস্তুতকারক জার্মানির সিমেন্স ও ডেনমার্কের ভেসটাস বড় ধরনের বাজার লাভ করেছে। ইউরোপেও বিশুদ্ধ জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা ও তাগিদ বাড়ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কার্বন নির্গমন ১৯৯০ সালে যা ছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ তার ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য তার কমিশন চাপ দেবে, যাতে করে ভবিষ্যতে প্রায় শূন্য নির্গমন অবস্থায় পৌঁছানো যায়। চীনের কোম্পানিগুলো বিদেশে সৌর ও বায়ুবিদ্যুত শক্তিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। চায়না থ্রি গর্জেস নামে একটি বৃহৎ বিদ্যুত কোম্পানি গত আগস্টে জানিয়েছে যে, তারা স্পেনের সোলার কোম্পানি এক্স-এলিওর কাছ থেকে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক গিগাওয়াট কিনে নেবে। গত বছর আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান সিজিএন ব্রাজিলের বায়ু ও সৌর কোম্পানির কাছ থেকে ১ গিগাওয়াটের বেশি কিনে নিয়েছে। নিজের ইলেকট্রোস্টেট শক্তিকে যথাসাধ্য বাড়িয়ে তোলার জন্য চীনের এখন নবায়নযোগ্য শক্তির সঙ্গে পরমাণু শক্তি যুক্ত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এই জাতীয় বিদ্যুত শক্তির উৎপাদন শক্তিও বাড়াতে হবে যাতে করে এর কোম্পানিগুলো বাড়তি বিদ্যুত শক্তি বিপুলসংখ্যক দেশের কাছে সরবরাহ করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবল এনার্জি এজেন্সি বলেছে, এ ধরনের ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দীতে চীনের শক্তিমত্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে, ঠিক যেমন বিংশ শতকে সমুদ্র পথগুলো আমেরিকার শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চীন যদি এই সুযোগটি চাতুর্যের সঙ্গে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে বিশুদ্ধ জ্বালানিতে উত্তরণ দেশটিকে এমন সব সুযোগ সুবিধা এনে দিতে পারবে, যা অন্য আর কিছুর দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নয়। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×