ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করলেন সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ৭ অক্টোবর ২০২০

আবারও নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করলেন সালাউদ্দিন

সালাউদ্দিনের দিন শেষ! সালাউদ্দিন অধ্যায় চিরতরে খতম। এবারের নির্বাচনে সালাউদ্দিন ১০ ভোটের বেশি পাবে না। সালাউদ্দিনের বিদায়ে দেশের ফুটবল বাঁচবে, ফুটবলের সুদিন ফিরবে ... এমন আরও বহু কথা শোনা গিয়েছিল সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনের আগে। ফেসবুকে প্রচ- সমালোচনা এবং রাজপথে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সভা ... এগুলো তো ছিলই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। আগাম ভবিষ্যদ্বাণী, শঙ্কা, সমালোচনা ... সবকিছু উড়িয়ে দিয়েছেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। গত শনিবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে বিপুল ভোটে জিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এলেন তারকা এই সাবেক ফুটবলার। দেশের ফুটবলের ভার আবারও সালাউদ্দিনের কাঁধে। সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সালাউদ্দিন ভোট পান ৯৪টি। তার দুই স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাদল রায় এবং শফিকুল ইসলাম মানিক পান যথাক্রমে ৪০ ও ১ ভোট। মানিকের মাত্র ১ ভোট পাওয়া সবার মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। নির্বাচনের আগে নিজের জয়ের ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করা মানিক না জিতলেও মোটামুটি ভালই ভোট পাবেন- এমনটাই ধারণা ছিল ক্রীড়ামোদিদের। কিন্তু তাদের ধারণা যে এভাবে ধুলায় মিশিয়ে মানিক সর্বসাকল্যে ১ ভোট পেয়ে এভাবে ইজ্জত খোয়াবেন- কেউই এটা আশা করেননি। সিনিয়র-সভাপতি পদেও কোন অঘটন ঘটেনি। আগেরজনই, সম্মিলিত পরিষদের আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি পান ৯১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সমন্বয় পরিষদের শেখ মোঃ আসলাম পান ৪৪ ভোট। এর ফলে সালাউদ্দিনের মতো মুর্শেদীও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে টানা চার বার নির্বাচিত হন। সহ-সভাপতি পদ চারটি হলেও এতে নির্বাচিত হন তিনজন। সবাই সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী। এরা হলেন ইমরুল হাসান (৮৯ ভোট), কাজী নাবিল আহমেদ (৮১) এবং আতাউর রহমান মানিক (৭৫)। সালাউদ্দিনের বিরোধী পক্ষ খ্যাত সমন্বয় পরিষদের মহিউদ্দিন আহমেদ মহি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দু’জনেই পান সমান ৬৫ ভোট করে। এতে ফল ‘টাই’ হয়। ফলে নিয়ম অনুযায়ী এই পদের ফল নিষ্পত্তির জন্য আবারও ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩১ অক্টোবর। ভেন্যু মতিঝিলের বাফুফে ভবন। সহ-সভাপতি পদে নতুন মুখ বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল এবং তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান মানিক। শীর্ষ ৬টি পদের ৫টিতেই জেতে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। এক্ষেত্রে সমন্বয় পরিষদের ভরাডুবিই ঘটে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এই নির্বাচনে সভাপতি পদে ফেভারিট ছিলেন সালাউদ্দিনই। তিনি ছিলেন একটি প্যানেলের ব্যানারে। কিন্তু তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল এবং মানিক কেউই অন্য কোন প্যানেলে ছিলেন না। ফলে শুরু থেকেই টেকনিক্যালি সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে এগিয়ে ছিলেন সালাউদ্দিন। নির্বাচনের দিন ১৩৯ ভোটারের মধ্যে ভোট কাস্ট হয় ১৩৫টি। সভাপতি পদের লড়াইয়ে না থেকেও ছিলেন বাদল রায়। গত ১২ সেপ্টেম্বর বাফুফের তৎকালীন সহ-সভাপতি পরিবারের আপত্তি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যাকে কারণ দেখিয়ে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। সালাউদ্দিনের এই জয় প্রমাণ করেছে তার বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক ও সমালোচনা হোক, ভোটাররা সভাপতি পদে তাকেই দেখতে চান। নিরঙ্কুশ বিজয় না পেলেও সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদই অর্ধেকের বেশি পদ জেতে। মোট ২১টি পদের মধ্যে ২০টির ফল ঘোষিত হয়। তাতে ১৪টিতেই জেতে সম্মিলিত পরিষদ। পক্ষান্তরে সমন্বয় পরিষদ জেতে ৬টি পদে। বলাবাহুল্য, তাদের এই ৬টি পদের সবগুলোই হচ্ছে সদস্যপদ। তাদের প্রার্থীরা হলেন : আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু (৮৬ ভোট), আরিফ হোসেন মুন (৮৫), টিপু সুলতান (৮১), আমের খান (৬৯), সাইফুল ইসলাম (৬৯) এবং মহিদুর রহমান মিরাজ (৬৮)।এছাড়া সম্মিলিত পরিষদের বিজয়ী সদস্যপ্রার্থীরা হলেন : জাকির হোসেন চৌধুরী (৮৭ ভোট), বিজন বড়ুয়া (৮৫), নুরুল ইসলাম নুরু (৮৪), মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম (৮৪), সত্যজিৎ দাশ রুপু (৭৬), ইলিয়াস হোসেন (৭৫), ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ (৭৪), মাহফুজা আক্তার কিরণ (৭০) এবং হারুনুর রশিদ (৭০)। হেরে মধ্যে বাদ পড়েন : সহসভাপতি পদে আমিরুল ইসলাম বাবু, শেখ মোঃ মারুফ হাসান; সদস্যপদে : শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, অমিত খান শুভ্র, ইকবাল হোসেন, আসাদুজ্জামান মিঠু, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফজলুর রহমান বাবুল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, শাকিল মাহমুদ চৌধুরী, সাব্বির হোসেন প্রমুখ। * এক নজরে বিজয়ীদের তালিকা ॥ সভাপতি : কাজী মো. সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি : আবদুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি : ইমরুল হাসান, কাজী নাবিল আহমেদ, আতাউর রহমান মানিক; সদস্য : জাকির হোসেন চৌধুরী, আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, বিজন বড়ুয়া, আরিফ হোসেন মুন, নুরুল ইসলাম নুরু, মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, টিপু সুলতান, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইলিয়াস হোসেন, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ, মাহফুজা আক্তার কিরণ, হারুনুর রশিদ, আমের খান, সাইফুল ইসলাম ও মহিদুর রহমান মিরাজ। প্রতিশ্রুতি দেয়া যতটা সহজ, তা বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। এই বিষয়টি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের চেয়ে ভাল আর কে জানে! ভক্তদের মতে- সালাউদ্দিনের আমলেই দেশের ফুটবল তলানিতে চলে যায়নি। চলে গিয়েছিল তারও বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। সালাউদ্দিন বরং দায়িত্ব নিয়ে মৃতপায় ফুটবলকে অক্সিজেন দিয়ে কোনমতে বাঁচিয়ে তুলেছেন। এর প্রমাণ প্রতি বছর বিপিএল, বিসিএল এবং অন্যান্য স্তরের লিগগুলো নিয়মিত আয়োজিত হওয়া, ফুটবলাররা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছে, বেশি ম্যাচ খেলে তারা ক্লান্ত, জাতীয় দলের জয়ের হার সালাউদ্দিনের আগের আমলের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেড়েছে, মহিলা ও পুরুষদের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলগুলোর ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে ... এমন আরও অনেক আছে। কাজেই সালাউদ্দিন ব্যর্থ নন বলেই প্রতিবারই তাকে ভোট দিয়ে পাস করিয়ে আনে ভোটাররা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় ব্যাপার, প্রতি নির্বাচনেই সভাপতি হওয়ার পথে আগেরবারের চেয়ে ভোট বেশি পেয়েছেন সাবেক তারকা জাতীয় ফুটবলার এবং এই কোচ, যেটিকে তিনি অভিহিত করেছেন ‘জনপ্রিয়তার ফলাফল’ হিসেবে। এবারের নির্বাচনের আগে ৩৬ দফা (২০১৬-এর নির্বাচনে ছিল গতবার ছিল ২৫ দফা) ইশতেহার ঘোষণা করেছিল সালাউদ্দিনের নেতৃত্বধীন সম্মিলিত পরিষদ। সালাউদ্দিনের দাবি করেছিলেন, ২০১৬ নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতির ৭৫ ভাগই পূরণ করতে পেরেছেন তিনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- নতুন মেয়াদে ৩৬ প্রতিশ্রুতির কয়টা বাস্তবায়ন করতে পারবেন তিনি? শনিবার বাফুফের নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ধারণা করা হয়েছিল বাফুফের আর্থিক বিষয়ে সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী ও তাদের সমর্থক-কাউন্সিলরদের প্রবল আপত্তি উত্থাপন করবেন। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই তারা এ নিয়ে প্রবল সমালোচনায় মুখর ছিলেন। অথচ শনিবার এজিএমে তারা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে নীরব! আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কোন ওজর-আপত্তি তোলেননি। ফলে নির্বিঘেœই সবার অনুমোদন নিয়েই গৃহীত হয় বাফুফের আর্থিক প্রতিবেদনটি। সাধারণত দেখা যায় বিরোধী দল আগাম নির্বাচনের জন্য দাবি করে, আর ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন যথাসময়ে দিতে গড়িমসি করে। কিন্তু এবারের বাফুফের নির্বাচনে ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। এই নির্বাচন পেছানোর জন্য বিরোধী পক্ষ (সমন্বয় পরিষদ) বার বার দাবি জানিয়েছিল। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের কথা। আর ক্ষমতাসীন কমিটি (সম্মিলিত পরিষদ) যথাসময়ে (গত ২০ এপ্রিল) নির্বাচন আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর ছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব হলে তা ফিফা পর্যন্ত গড়ায়। পরে তাদের নিদের্শেই বাফুফের নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হয়।
×