ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৭ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে উভয় দেশের শীর্ষ নেতারা রবিবার অভিনন্দনবার্তা বিনিময় করেন। বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দুই দেশের কৌশলকে আরও সুসংহত করতে এবং যৌথভাবে বেল্ট এ্যান্ড রোড প্রকল্পের নির্মাণ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। অপরদিকে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বের স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নের জন্য দুই দেশ ও তাদের জনগণের উন্নতির জন্য উৎসাহী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা থেকেই গড়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের ধারাবাহিক সমর্থনের কথা, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। মিয়ানমারের গৃহহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করায় চীনের প্রশংসাও করেন তিনি। এসবই উভয় দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার পরিধি ও পরিচয় তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক নতুন নয়, বহু পুরনো। সত্তর দশকের প্রথমাধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন সেটা আরও বিকশিত করেছেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার। গত বছর ঢাকা-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর ছিল তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম সহযোগী চীন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৃষি, বিনিয়োগ এবং শিল্প-বাণিজ্যে মহাচীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিস্তার চায় সরকার। আগামী এক থেকে দেড় দশকে চীন বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুত ও যোগাযোগ খাতে ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা যায়। চীন মনে করে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন চীন বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক যে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে বাংলাদেশের বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে চীন। এছাড়াও সামরিক ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ক পৌঁছেছে অন্য মাত্রায়। বর্তমান সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য হলো একইসঙ্গে প্রতিবেশী দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা, যা অনেকটাই কঠিন। স্মরণযোগ্য, দ্য স্টেটসম্যানের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের নেত্রীর বিচক্ষণতার প্রশংসা করে বলা হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক। ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অঙ্গীকার আছে তার। তিনি হয়তো এমন কোন কার্ড নিজের কাছে রাখবেন যা দিয়ে অবশ্যই তিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করবেন।’ বাংলাদেশ-চীনের নতুন মাত্রার এই সম্পর্ক শুধু বাংলাদেশের জন্যই গড়ে ওঠেনি, বরং নানা কারণে চীনেরও স্বার্থ রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। বাংলাদেশ সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে চীন এবং এটিই বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের আগ্রহের মূল কারণ। বাংলাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণে চীনের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মৈত্রী বন্ধনকে অটুট রাখার জন্য উভয় দেশের ইতিবাচক ভূমিকা বরাবরের মতো সমুন্নত থাকবে, এটিই প্রত্যাশা।
×