ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভিশন ২০৩৩’- সামনে রেখে মানিকের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘ভিশন ২০৩৩’- সামনে রেখে মানিকের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল আলোচিত নির্বাচনে ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিক। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাফুফের জন্য আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের এই স্বনামধন্য কোচ। ইশতেহার ঘোষণার সময় মানিকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির। এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। অপরদিকে রয়েছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাবস এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গড়া ‘সমন্বয় পরিষদ’। সম্মিলিত পরিষদ পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে নির্বাচনী ময়দানে থাকলেও সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে কেউ লড়ছেন না। তবে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি প্রার্থী না থাকলেও একেবারে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বাফুফের গেল তিনবারের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ভোটের ময়দানে আছেন শফিকুল ইসলাম মানিক। যদিও মানিককে বলা হচ্ছে সালাউদ্দিনের ডামি প্রার্থী, এমন গুঞ্জন বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। নির্বাচনী ব্যালেট পেপারে মানিকের নাম থাকলেও ভোটে নেই স্বতন্ত্র আরেক সভাপতি প্রার্থী বাদল রায়। নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাকে ভোট না দেয়ার জন্য কাউন্সিলরদের কাছে আবেদনও রেখেছেন। তবে বাদল সরে গেলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা মানিকের। ফুটবলে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন সাবেক এ তারকা। একইসঙ্গে নিজের নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছেন। ‘ভিশন ২০৩৩’- টাইটালে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার মানিকের। যাতে তৃণমূলের ফুটবল-ফুটবলারদের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় দলসহ আরও অনেক প্রসঙ্গই ইশতেহারে তুলে ধরেছেন। আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলরদের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচিত হলে ইশতেহারের প্রতিটি দফা বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিয়ে রাখলেন। চার বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই মানিকের। দুই নৌকায় পা রেখেও চলতে চান না তিনি। বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হলে পূর্বের পেশা থেকে চিরতরে ছুটি নেবেন। তবে এই ৪ বছরে মনে রাখার মতো কাজ করে যেতে চান। ভিশন ২০৩৩ যে লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে এসেছেন তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে চান। ২০৩৩ সালে একটি শক্তিশালী অলিম্পিক দল (অনুর্ধ-২৩) গঠন করতে চান তিনি। যারা আগামীতে বৈশ্বিক আসরগুলোতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। বাফুফে নির্বাচন মানে টাকার খেলা। কোটি কোটি টাকার লেনদেন, কাউন্সিলরদের পকেট গরমের মৌসুম। টাকার এই নোংরা খেলায় টিকতে পারবেন তো মানিক? টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া কাউন্সিলররা ভোট দেবেন তো মানিককেÑ ্এমন প্রশ্নের উত্তরে মানিক বলেন, ‘কাউন্সিলরদের প্রতি আমার আস্থা আছে। তারা টাকার কাছে বিক্রি হবেন না। আমার সঙ্গে প্রায় ১০০ জন কাউন্সিলরের কথা হয়েছে। সেখানে ২০ জনও বর্তমান সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনের পক্ষে নেই। আমি আশাবাদী নির্বাচনে কাউন্সিলররা আমাকে ভোট দেবেন।’ এক নজরে দেখে নেয়া যাক ২০২০ বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিকের ২১ দফা ইশতেহারের উল্লেখযোগ্য ১০টি : ১. ফুটবল ফেডারেশনের ২১ সদস্যকেই একই মন নিয়ে অর্থাৎ ফুটবল উন্নয়নে আমরা একই কথা ও কাজ করার মধ্যে কোন দ্বিমত থাকবে না। ‘ওয়ান টিম’ নীতিতে কাজ করার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ২. জেলা ফুটবল ও পাইওনিয়ার থেকে প্রথম বিভাগ পর্যন্ত লীগ/টুর্নামেন্টকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব কর্মকা- করা হবে এবং মনিটরিং করার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে, ৩. বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলকে আরও জনপ্রিয় (পাবলিক ও প্রাইভেট) করার লক্ষ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হবে। কর্পোরেট টিম, সার্ভিসেস টিম, সাংবাদিকদের সংস্থাগুলোকে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা হবে, ৪. আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ ফুটবল যথাযথভাবে হচ্ছে কি না তা বাফুফের নজরদারিতে থাকবে এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ফুটবল আয়োজন করার জন্য শিক্ষা বোর্ডসমূহকে উৎসাহিত করা হবে, ৫. প্রতিটি ক্লাবের অনুশীলন মাঠ সিনিয়র থেকে পাইওনিয়ার পর্যন্ত সিটি জেলার মেয়র, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসক সবার সঙ্গে আলোচনার সুবিধার্থে একটি কমিটি থাকবে, ৬. জাতীয় পর্যায়ে অনুর্ধ-১৭ বঙ্গবন্ধু কাপ প্রতি বছর আয়োজন করা হবে। অনুর্ধ-২১ জাতীয় ফুটবল যার নামকরণ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল অনুর্ধ-২১ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা এবং যথারীতি অনুর্ধ-১৯ সোহরাওয়ার্দী কাপ জাতীয় ফুটবল ও আন্তঃজেলা শেরে বাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, ৭. বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি দ্ইু বছর পরপর আয়োজন করা হবে। প্রতিবছর আয়োজন করা হবে শেখ জামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ। বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে দুটি টুর্নামেন্টই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, ৮. প্রতি বছর একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য ক্যালেন্ডার থাকবে যা আগেই প্রকাশিত হবে। যথাসময়ে প্রতিবছর ফেডারেশনের সাধারণ সভা বসবে, ৯. সাধারণ সভায় জেলা ও বিভাগীয় ফুটবলকে উৎসাহিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। একটি বিভাগ ও চারটি জেলাকে এই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে, ১০. বাফুফের আর্থিক অনিয়ম এবং পাতানো ম্যাচের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরি ও এক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যার ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করা হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে (১৯৭৯-১৯৯৬) সুনামের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন শফিকুল ইসলাম মানিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় খেলেছেন মোহামেডানে ১০ বছর। আর ব্রাদার্স ইউনিয়নে ৭ বছর। মোহামেডানে বেশি সময় ধরে খেলার কারণে ‘মোহামেডানের মানিক’ বলেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। খেলা ছাড়ার পর বেছে নেন কোচিং ক্যারিয়ার। এখানেও সফলতা প্রদর্শন করেন। ফলে ডাক পেয়েছিলেন বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও। কোচ হিসেবে কাজ করেছেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে।
×