ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দিশাহারা ট্রাকচালক তালেবের পরিবার

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

দিশাহারা ট্রাকচালক তালেবের পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দুর্ঘটনায় ছাগলের মৃত্যুর জেরে তিন শিশু সন্তান নিয়ে এখন অকূল পাথারে পড়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত ট্রাকচালক আবু তালেবের স্ত্রী নারগিস বেগম। সন্তানদের পড়ালেখা এমনকি তাদের মুখের খাবার জোগাড় নিয়েই চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অকাল বিধবা এই নারী। নিহত আবু তালেব পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া এলাকার বাসিন্দা। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরের দেয়া সামান্য জমিতে কুঁড়েঘর তুলে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে পুঠিয়ার দিকে আসছিলেন আবু তালেব। পথে তাহেরপুর এলাকায় আসামাত্র ট্রাকের চাপায় একটি ছাগল মারা যায়। এরপর ওই এলাকার ২০/২৫ জনের একটি দল মোটরসাইকেলে ট্রাকটিকে ধাওয়া করে বাসুপাড়া এলাকায় আটক করে। পরে তারা চালক আবু তালেবকে পিটিয়ে হত্যা করে। এদিকে এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েছে ট্রাকচালক আবু তালেবের পরিবার। কিছুতেই তারা এই ঘটনা মানতে পারছে না। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছে পুরো পরিবার। এখনও এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি কেউই। নারগিস বলেন, তিনি (আবু তালেব) খুব ভাল মনের মানুষ ছিলেন। প্রতিমাসে চারবার ট্রাক নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। ছেলেমেয়ের কথা মনে পড়লেই ২/৩ দিনের মধ্যে আবার বাড়ি চলে আসতেন। বড় মেয়ে উষা খাতুন (১১) ঝলমলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে ইতি এ বছর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। আর সবার ছোট ছেলে ইসরাফিলের বয়স মাত্র ১১ মাস। নারগিস জানান, বাড়িতে ফিরলে তিনি সারাক্ষণ বাচ্চাদের বায়না মেটানো ও তাদের সঙ্গে খেলা করে সময় পার করতেন। ঘরে দু’বেলা খাবার না থাকলেও তিনি সন্তানদের কখনও অভাব বুঝতে দেননি। এখন আমি সংসার চালাব কিভাবে? ওই নারী আরও জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন আবু তালেব। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ফোনে সন্তানদের বলেছেন রাতে বাড়ি আসবেন। পরের রাতেই তিনি বাড়িতে এসেছেন ঠিকই তবে লাশ হয়ে। যখন মরদেহ বাড়িতে নেয়া হয় তখন বড় মেয়ে শেষ দেখা দেখতে পেয়েছে বাবাকে। ছোট মেয়ে ও একমাত্র ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। বাবাকে আর শেষ দেখা হয়নি তাদের। গত পাঁচদিন ধরে ছোট মেয়েটা বাবার অপেক্ষায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে এখনও বুঝতে পারছে না তার বাবা আর কখনও ফিরে আসবে না। আর ছেলের তো এখনও কোন অনুভূতিই হয়নি। এই শিশুদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব। কী করব? আমার চারদিকে শুধু অন্ধকার হয়ে আসছে।
×