ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা শনাক্তে এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর পরামর্শ

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা শনাক্তে এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে করোনা শনাক্ত করার জন্য এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি। পাশাপাশি দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে বুকিং দেয়া, ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় কোল্ডচেনের ব্যবস্থা করা, একাধিক কোম্পানি বা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। বৃহস্পতিবার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ১৯তম অনলাইন সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয় বলে শুক্রবার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সভায় কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে অলোচনা করা হয়। দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের প্রস্তুতিতে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য পরামর্শক কমিটি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৃথিবীর সব দেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় রয়েছে। কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন কেনার জন্য অগ্রীম টাকাও জমা দিয়েছে। এছাড়া গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই বাংলাদেশেরও অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে ভ্যাকসিন বুকিং করা প্রয়োজন। কোন কোন টিকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার কোল্ডচেন ব্যবস্থা আমাদের নেই। ভ্যাকসিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা যেতে পারে, অথবা উল্লিখিত তাপমাত্রার কোল্ডচেন ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। একই সঙ্গে কোন একটি ভ্যাকসিনের জন্য কাজ না করে একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করছে, সেই দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন বলেও মতামত দেয়া হয়েছে। কমিটি মনে করে, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পর সেটা দেয়ার কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে হবে এবং এখনই ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। ভ্যাকসিন প্রদানের পরবর্তী সময়ে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলোআপ করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। ভ্যাকসিন বিষয়ক বিশেষ কমিটিতে নাইট্যাগ ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রতিনিধি রাখার পরামর্শও দেয়া হয় সভায়। কমিটি জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে যেসব প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত ও দক্ষ তাদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আইসিডিডিআর-বি’র সঙ্গে সরকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। বর্তমানে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, যার পরিমাণ তুলনামূলক কম মন্তব্য করে কমিটি জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারলে আরও বেশি রোগী শনাক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কমিটি এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি টেস্টের ব্যাপারে নীতিমালা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনের কিটের এখনও অনুমোদন দেয়নি জানিয়ে কমিটি মনে করে। তিন পদ্ধতিতে (পিসিআর, এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি টেস্ট) পরীক্ষা কার্যক্রম পাশাপাশি থাকলে তা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর এখন সেরোসার্ভিল্যান্স নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে, যার জন্য এ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করাও প্রয়োজন। একই সঙ্গে যেসব কারণে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কমে গেছে, সেগুলো দূর করে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার, যা করা গেলে বিশ্ব মহামারী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সংক্রমণ পরিস্থিতির একটি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও পরামর্শ দেয় কমিটি। কমিটি জানায়, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার পরিজনও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে। এ সভা মনে করে, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের পর কোয়ারেন্টাইনের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। একই সঙ্গে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন তাদের অনুদান প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা প্রয়োজন। কমিটি জানায়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে; তাই এ সম্পর্কে আরও সচেতন করতে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাস্ক বিষয়ক ক্যাম্পেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
×