ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএসটিআইর অভিযান শুরু

অনলাইনে বিক্রীত পণ্যের বেশিরভাগ অননুমোদিত

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

অনলাইনে বিক্রীত পণ্যের বেশিরভাগ অননুমোদিত

শাহীন রহমান ॥ অনলাইনে পণ্য বিক্রি সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ বা অনলাইনে যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগই বিএসটিআই অনুমোদিত নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেকে এভাবে পণ্য বিক্রি করছে। ফলে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে ঠকছেন। আবার অনুমোদিত না হওয়ায় এসব পণ্যের গুণগত মানও ঠিক নেই। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব পণ্য অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে বিশেষ করে খাদ্য ও কসমেটিকসহ সব ধরনের পণ্য উৎপানের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলত। দেখা গেছে, যে পণ্য অলনাইানে বেশি বিক্রয় করা হচ্ছে তার কোন লাইসেন্স বিএসটিআইয়ের কাছে নেই। তারা বলছেন, খাদ্য পণ্যের মধ্যে সরিষার তেল, ঘি ও মধুসহ অনেক খাদ্যদ্রব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি বিক্রি চলছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এসব পণ্য উৎপাদনের কোন লাইসেন্স তাদের নেই। আবার কসমেটিক পণ্যের ক্ষেত্রে একই অবস্থা দেখা গেছে। অথচ এসব পণ্য উৎপাদনে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। তারা বলছেন, করোনাকালে মানুষ এখন অনলাইন কেনাকাটার ওপর বেশি নির্ভর করছে। এই সুযোগে অননুমোদিত বহু প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্রি করছে। ফলে এসব পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা বোঝা যায় না। এর গায়ে উৎপাদন এবং মেয়াদ লেখা থাকে না। ফলে এসব অননুমোদিত ভোগ্য পণ্যের কারণে স্বাস্থ্যের যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। আবার মেয়াদ না থাকায় কতদিন তা ব্যবহার করা যায় একজন ক্রেতা তা জানতে পারছেন না। এ কারণে অনেকেই পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। অবশ্য তারা বলছেন, যদি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে এমন পণ্য কেউ অনলাইনে বিক্রি করে তবে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গেছে যেসব পণ্য অনলাইনে বেশি চলে এগুলো উৎপাদনের জন্য বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে কোন ধরনের লাইসেন্স নেয়া হয়নি। আবার অনেকে চোরাই পথে বিদেশ থেকে পণ্য এনেও অনলাইনে বিক্রি করছে। কিন্তু বিএসটিআইয়ের আইন অনুযায়ী বিদেশ থেকে পণ্য কিনে বাজারে বিক্রি করতে হলে তারও অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বিএসটিআই এসব পণ্য বাজারজাতের অনুমতি দিয়ে থাকে। সেখানে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে দামও নির্ধারিত করে দেয়া হয়। কিন্তু বিদেশী পণ্যেরও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই অনলাইনে রমরমা ব্যবসা চলছে। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদেশ থেকে এসব পণ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিমানবন্দরে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে আসে। সেখান থেকে সরাসরি রাজধানীর বড় বড় শপিংমলে চলে যায়। সম্প্রতি এসব পণ্যের অনলাইনে বিক্রির পমিমাণ বাড়ছে। বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, অনলাইনে অনুমোদনহীন পণ্যের রমরমা ব্যবসা চলছে। তিনি জানান, অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে হলে অবশ্যই সেসব পণ্যের লাইসেন্স থাকতে হবে। এ কারণে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি জানান, যারা পণ্য উৎপাদন করবে তাদের অবশ্যই বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য। কিন্তু অনলাইনে বিক্রি হওয়া পণ্যের লাইসেন্স নেই। ফলে এসব পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স ছাড়া পণ্য বিক্রি বাজারজাত করা আইনে নিষিদ্ধ। তবে তিনি বলেন কোন প্রতিষ্ঠান যদি লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন মিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে বাধ্যতামূলক খাদ্য ও কসমেটিক পণ্য বিক্রি করায় সম্প্রতি বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। মিরপুরের নিউ শপ বিডি ডট কম এবং কনজ্যুমার সুপার শপকে এই অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। বিএসটিআই’র গুণগত মান যাচাই ও মান চিহ্ন ব্যতীত বিভিন্ন ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধে এ জরিমানা করা হয়। বিএসটিআইর গুণগত মান যাচাই ও মানচিহ্ন ব্যতীত বিভিন্ন ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কসমেটিক পণ্য-ডেক্স ম্যাজিক ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু বিভিন্ন গুঁড়া দুধ (ব্রান্ড-নেসলে, নিডো), চকলেট (ব্রান্ড-আমূল, ট্রিট), শ্যাম্পু (ব্রান্ড-লরিয়াল, ভাটিকা, গার্নিয়ার, জনসন, ডাব, ট্রেসমি), লিপিস্টিক (ব্রান্ড-জডানা, পারল) আফটার সেভ লোশন (ব্রান্ড- ডেনিম, পণ্যসমূহ অনলাইন বিক্রি করা হচ্ছে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই। বিদেশী এসব পণ্য বাজারজাত করতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন থাকতে হবে। কিন্তু অনুমোদন ছাড়াই অনলাইনে এসব পণ্যের ব্যবসা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, এসব বিদেশী পণ্যের পাশাপাশি দেশী উৎপাদিত পণ্য যেমন দই, ঘি, মাখন, মধু, সরিষার তেলও বিক্রি চলছে অনলাইনে। যেগুলো উৎপাদনে বিএসটিআইয়ের কোন লাইসেন্স নেই। অথচ এসব পণ্যই অনলাইনে বেশি চলছে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছে, এসব অনুমোদনহীন পণ্যের বিরুদ্ধে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তারা জানান, কোন অনুমোদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি করলে সমস্যা নেই। কেউ অনলাইনে অনুমোদিত পণ্য বিক্রি করতে চাইলে উৎপাদিত প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্সের ফটোকপি ব্যবহার করে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বা প্রচার চালাতে পারবেন। কিন্তু অবৈধ পণ্য বিক্রি করা যাবে না।
×