ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের মামলায় হাজিরা

কক্সবাজার থেকে প্রদীপ চট্টগ্রাম কারাগারে

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

কক্সবাজার থেকে প্রদীপ চট্টগ্রাম কারাগারে

চট্টগ্রাম অফিস, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার আগে টেকনাফ এলাকায় যেসব ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে এবং এতে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের স্বজনরা বর্তমানে সক্রিয়। একে একে স্বজনদের পক্ষ থকে আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে আবেদন করা হচ্ছে। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে তা সংশ্লিষ্ট থানাকে এ সংক্রান্তে পূর্বে কোন মামলা হয়েছে কিনা তা জানাতে নির্দেশনা প্রদান করছে। এ সংক্রান্তে আদালত সূত্রে জানানো হয়েছে, টেকনাফে সংঘটিত ক্রসফায়ারগুলোর সত্য মিথ্যা প্রমাণ দেবে এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি। এক্ষেত্রে প্রদীপের নেতৃত্বে যেসব এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে এর অধিকাংশেরই এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামে দুদকের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে শনিবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছে। কাল সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হবে প্রদীপকে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানানো হয়েছে, বিশেষ ব্যবস্থায় কক্সবাজার কারাগার থেকে বেলা পৌনে একটার দিকে প্রদীপকে আনা হয়েছে চট্টগ্রামে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে গত ২৩ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে। এ মামলায় প্রদীপকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ আশফাকুর রহমানের আদালতে আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। শুনানিতে হাজির করা হবে সাবেক ওসি প্রদীপকে। প্রসঙ্গত, সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক এ মামলাটি দায়ের করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে এ দম্পতির অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা ছিল দুদক থেকে। ১২ মে দুদক জেলা কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী জমা দেন প্রদীপ। এতে তার দাখিল করা বিবরণীর সঙ্গে তদন্তে বের হয়ে আসা সম্পদের বড় ধরনের ব্যবধান পাওয়া যায়। কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময়ে প্রদীপ ঘুরে ফিরে চট্টগ্রাম মহানগর এবং কক্সবাজার এলাকাতেই ছিলেন। বিচারবহির্ভূত বহু হত্যাকান্ড এবং অনৈতিক পন্থায় বিপুল অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই সময়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নেয়ার সাহস পাননি। এখন তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তরা একে একে বিচার প্রার্থী হচ্ছেন। আনসারসহ এক পরিবারের তিনজনকে হত্যা ॥ টেকনাফের সর্বত্র আলোচনা সমালোচনায় মুখর বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের নীরব চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্য বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। এর মধ্যে অন্যতম আলোচনায় রয়েছে ৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় আনসার সদস্যসহ এক পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনাটি। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ট্রিপল হত্যার ঘটনার পর প্রচার করা হয়েছিল নিহতরা রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাতের সদস্য। গত ৬ মে রাতে হ্নীলা রঙ্গিখালী গাজিপাড়ায় ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে পুলিশ দল আনসার সদস্য নুরুল আলমের বাড়িতে যায়। এ সময় পুলিশ নুরুল আলম, ভাই সৈয়দ আলম ও ভাগিনা ছৈয়দ হোসেনকে ঘুম থেকে তুলে বাড়ির পাশে পাহাড়ের নিচে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর নুরুল আলমের পকেটে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর আইডি কার্ড পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয় নিহতরা রোহিঙ্গা ডাকাত। একসঙ্গে তিন স্বজন হারানো এ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, হত্যার অনেক আগে থেকে ওসি প্রদীপ হোয়াইক্যং ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর তার চিহ্নিত দালালের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছিল। সে দাবি পূরণ না করায় প্রদীপের হাতে এই তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। এদিকে টেকনাফ হোয়াইক্যং এর নয়াবাজার সাতঘরিয়া পাড়ায় জমি দখলে দিতে এক প্রভাবশালীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয় ইসমাইল নামে ১৫ বছরের এক শিশুকে। এই শিশুকে ধরতে গিয়ে তার বাড়ি থেকে সুন্দরী ভাবিকে ওইদিন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে হাতে পায়ে ধরে প্রাণ নিয়ে মুক্ত হলেও অনেকটা শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়েছে বলে জানালেন এ ভুক্তভোগী নারী। বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও এসআই মশিউরের একের পর এক অপরাধ এখানেই যেন শেষ নয়। একই এলাকার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ায় আনু মিয়ার ২ পুত্র মোহাম্মদ হোছেন ও আবুল কাশেমকে ধরে নিয়ে যায়। তাতে পুলিশের দাবিকৃত ৭ লাখ টাকা দিতে না পারায় হত্যা করে কথিত ক্রসফায়ারের ঘটনা বলে প্রচার করে দেয়া হয়।
×