ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর দায় স্বীকার, ঘটনার নতুন মোড়

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর দায় স্বীকার, ঘটনার নতুন মোড়

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ সরকারী বাসভবনে প্রবেশ করে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় রবিউল ইসলাম (৪৩) নামে এক সরকারী কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। সরকারী বাসভবনে প্রবেশ করে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করা সাময়িক বরখাস্ত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রবিউল ইসলামকে ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে ২ জন হত্যার দায় স্বীকার করল। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রবিউল ইসলাম দায় স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে, আর যুবলীগ সদস্য আসাদুল ইসলাম র্যা বের কাছে দায় স্বীকার করে। এছাড়াও ইউএনওর বাসভবনের নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এর আগে শুক্রবার তাকে আটক করা হয়। আটক রবিউল জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে। প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিউল ইসলাম নামে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সরকারী কর্মচারীকে আমরা আটক করেছি। আটক রবিউল প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে নিজের দায় স্বীকার করেছে। তার তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। এছাড়া তার বক্তব্য ও জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। আমরা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করব। প্রেস ব্রিফিং শেষে রবিউল ও এই মামলার প্রধান আসামি আসাদুলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এই মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম ৭ দিন ধরে রিমান্ডে ছিল। শনিবার পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়াও ইউএনওর বাসভবনের নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ইউএনও আগের চেয়ে সুস্থ ॥ এদিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের মাথায় অস্ত্রোপচারের বেশিরভাগ অংশের সেলাই কাটা হয়েছে। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তার মাথার সেলাই কাটা হয়। বর্তমানে তিনি আগের চেয়ে সুস্থ, তার শরীরের অবশ থাকা ডান পাশেরও উন্নতি হয়েছে। তিনি ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তুলতে ও নাড়তে পারছেন, তবে তিনি ডান পা নাড়াতে পারেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের নিউরোট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন জানান, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় যে অপারেশন করা হয়েছিল, সেখানকার অধিকাংশ সেলাই শনিবার কাটা হয়েছে। অপারেশনের জায়গাগুলো এখন ভাল আছে। ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, ওয়াহিদার অবশ ডান হাতের কনুই পর্যন্ত অংশের উন্নতি হয়েছে। তিনি ডান হাতের কনুই পর্যন্ত তুলতে ও নাড়তে পারছেন, তবে ডান পা এখনও নাড়াতে পারেননি। তার স্বাস্থ্যগত আর কোন জটিলতা নেই। ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বদরুল আলম বলেন, আরও উন্নতির জন্য এখানে দিনে তিন-চারবার তার ফিজিওথেরাপি চলছে। ফিজিওথেরাপি করে আস্তে আস্তে হাতের অবশ অংশ স্বাভাবিক করা হয়েছে। পায়েরও ফিজিওথেরাপি চলছে। আশা করি তিনি দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন। প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারী বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×