ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুল্কম্ক্তু সুবিধা পাওয়াই লক্ষ্য

১১ দেশের সঙ্গে এফটিএর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

১১ দেশের সঙ্গে এফটিএর প্রস্তুতি

এম শাহজাহান ॥ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রফতানির সুযোগ নিতে বিশ্বের ১১ দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কোন্নয়ন ও শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় করার পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাবে বলে মনে করছে সরকার। এ কারণে সার্কভুক্ত ভুটান ও নেপালের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি-পিটিএ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আগামী সোমবারের সভায় চূড়ান্তভাবে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিটি অনুমোদন দেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। চুক্তিটির ভেটিং (যাচাই-বাছাই) সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে করে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করতে আর কোন বাধা থাকল না। জানা গেছে, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার বড় সুবিধা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রফতানি। এর পাশাপাশি এ ধরনের চুক্তির ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সাপটা ও আপটা চুক্তির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এফটিএ ও পিটিএ থেকে বেশি সুবিধা আদায় করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসায় ২০২৪ সালের পর এ ধরনের চুক্তির বাইরে বাজার সুবিধা নেয়ার সুযোগ আর থাকছে না। গত বিশ বছর ধরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও একাধিক বৈঠকের পর অবশেষে ভুটানের সঙ্গে এ ধরনের একটি চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি- এফটিএ এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি-পিটিএ অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, মুক্তবাণিজ্য ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১১ দেশের সঙ্গে এফটিএ সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে সরকার। সবগুলো দেশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ভুটানের পাশাপাশি নেপালের সঙ্গেও পিটিএ চুক্তির বিষয়টির বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এফটিএ চুক্তির বিষয়টিও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এরপরই অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, ভুটানের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে চুক্তিটির যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চুক্তিটি করার বিষয়ে অনাপত্তি দিয়েছে। এনবিআর দেখেছে এই চুক্তির ফলে ভুটানে রফতানি বাড়বে এবং বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সোমবারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় ভুটানের সঙ্গে পিটিএ চুক্তিটির অনুমোদন দেয়া হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনের জন্য চুক্তিটির খসড়া পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে ভুটানের সঙ্গে চুক্তি করতে আর কোন বাধা থাকল না। জানা গেছে, এই পিটিএর ফলে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য এদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। তবে পর্যায়ক্রমে আলোচনার মাধ্যমে পণ্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে দুই দেশ। বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে চীন, ভারত ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১৫ দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে মতামত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ মতামত জানিয়ে দিয়েছে। এতে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় ও বহুজাতিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মতামতে জানানো হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা সঙ্কট ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ এখন অর্থনীতির সামনে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি একটি বড় বিষয়। আর এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করা হবে। এ পর্যন্ত ১১ দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। শীঘ্রই এসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এর বাইরে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শীঘ্রই এ ধরনের বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ভুটানের সঙ্গে পিটিএ হলে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাতীয় পণ্য, চামড়া পণ্য ও জুতা, ফ্যান, ড্রাই সেল ব্যাটারি, ঘড়ি, আলু, কনডেন্সড মিল্ক, সিমেন্ট, টুথব্রাশসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি বাড়বে। অন্যদিকে ভুটানের কমলা, আপেল, আদা, ফলের জুস, পাথর, কাঠ, চুনাপাথরসহ অন্য পণ্য আমদানি হবে বাংলাদেশে। ভুটানের পাথর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রফতানি সম্প্রসারণে এফটিএ ও পিটিএ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে এখন এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ যে শূন্য শুল্ক সুবিধা পায় বিভিন্ন দেশের কাছে, সেই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৭১ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বিশাল এ ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষরের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের।
×