ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ কাজে অগ্রাধিকার চসিক প্রশাসকের

বাস্তবায়নে অন্তরায় অর্থ

প্রকাশিত: ২০:০০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাস্তবায়নে অন্তরায় অর্থ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনা দুর্যোগের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। যথাসময়ে নির্বাচন হতে না পারায় আইনী বাধ্যবাধকতায় ১৮০ দিন অর্থাৎ ছয় মাসের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খোরশেদ আলম সুজন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় একমাস। নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক হলেও বাকি পাঁচ মাসে তিনি কতটা করতে সক্ষম হবেন তা নিয়ে রয়েছে আলোচনা। এই স্বল্প মেয়াদের মধ্যে শেষ করতে পাঁচটি কাজকে অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছেন চসিক প্রশাসক। কিন্তু বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় অর্থ সঙ্কট। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমার সময় খুবই কম। এ সময়টুকুকে আমি সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে চাই। কাজ অনেক। কিন্তু গুরুত্ব ও সময় বিবেচনায় আমি পাঁচটি কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কাজগুলো হচ্ছে ভাঙ্গা সড়ক সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সড়ক বাতি স্থাপন, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম দূর করা। এছাড়া চলমান প্রকল্পগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি থাকছে। বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টির চেষ্টাও করছি, যাতে করে উন্নয়ন কাজগুলো সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হয়। সেবা সংস্থাগুলোর এ সমন্বয় যদি করা যায় তাহলে তা ভবিষ্যতেও ভাল ফল দেবে। চসিক প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম সুজনের মেয়াদ মাত্র ছয়মাস। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দৈব দুর্বিপাক ছাড়া প্রশাসকের দায়িত্বের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল দীর্ঘায়িত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসক হিসেবে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন গত ৬ আগস্ট। সে হিসেবে একমাস অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রশাসক প্রতিদিনই ছুটছেন বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির সরেজমিন তদারকিতে। চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনাও তার রয়েছে। অগ্রাধিকার পাওয়া পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে চসিক প্রশাসক সুজন বলেন, সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থ সঙ্কট। কর্পোরেশনের বিগত বাজেট এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা দেনার কথা আমরা জেনেছি। কিন্তু বাস্তবে সে দেনা প্রায় হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যে সকল ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট রয়েছে তাদের অনেক বিল অপরিশোধিত আছে। কাজ শেষ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে ৩৩৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। ঠিকাদারদের বকেয়া পরিশোধ, মশক নিধন ও ভাঙ্গা সড়ক সংস্কারের জন্য জরুরী ভিত্তিতে এ বরাদ্দ প্রয়োজন। চসিক প্রশাসক জনকণ্ঠকে জানান, তিনি তার মেয়াদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজগুলো শেষ করতে চান। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সেনাবাহিনী এ কাজ করছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের নগরবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে। কিন্তু চসিকের যে সেবামূলক কাজগুলো রয়েছে তা চসিককেই করতে হবে। তিনি বলেন, যে কাজগুলোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি সেগুলো শেষ করে কয়েকটি নতুন প্রকল্প হাতে নিতে চাই, যার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। সরকার আমার ওপর আস্থা রেখে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, সময় কম হলেও সেই আস্থার মূল্য দিতে চাই। প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সবকিছু গুছিয়ে এনেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা দুর্যোগ। চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়নি। ফলে নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করাও সম্ভব হবে না। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী প্রশাসকের ছয়মাস মেয়াদের মধ্যে ভোট গ্রহণ করে নতুন পরিষদ নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু করোনা মহামারী আর কতটা দীর্ঘায়িত হয় তার ওপর নির্ভর করছে চসিকের বহু আকাক্সিক্ষত ভোট।
×