ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমতলীতে তদন্ত শুরু

খাদ্যগুদামে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি

প্রকাশিত: ২১:০৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

খাদ্যগুদামে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, ৫ সেপ্টেম্বর ॥ বরগুনার আমতলী খাদ্যগুদামের বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস চাল চুরি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদ খাদ্যগুদাম পরিদর্শন শেষে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটি শনিবার তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। জানা গেছে, আমতলী খাদ্যগুদামে দুই হাজার তিন শ’ এক টন ৬শ’ ৮৪ কেজি চাল মজুদ রয়েছে। ওই চালের বস্তা থেকে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সহায়তায় পাইপ দিয়ে চাল চুরি করে আসছিল। এভাবে প্রতি বস্তা থেকে তিন-চার কেজি চাল সরিয়ে ফেলা হতো এমন অভিযোগ গুদাম শ্রমিকদের। পাইপ দিয়ে চাল চুরির একটি ভিডিও ফুটেজ বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদের নজরে আসে। শুক্রবার রাতে তিনি খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে আমতলী আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নুর হোসেন স্বজল, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। গুদাম পরিদর্শন শেষে মহাপরিচালক পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শনিবার তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পটুয়াখালী সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিএম সফিকুল ইসলাম ও বরগুনা সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক দ্রুব ম-ল। তদন্ত কমিটি আমতলীর চারটি খাদ্যগুদাম সিলগালা করে দিয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইপ দিয়ে চাল চুরির ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার লোকজন দিয়ে চুরি করা চালের বস্তায় চাল ভর্তি করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্যগুদামের কয়েক শ্রমিক বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা তার ঘনিষ্ঠ লোকজন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল সরিয়ে আসছিল। কেউ তার এমন কাজের প্রতিবাদ করলেই তিনি তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিভৃত করার চেষ্টা করেন। তাতে সম্ভব না হলে তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন তিনি। খাদ্যগুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্তকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রায়ই তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি করতেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ভয়ভীতি দেখান তিনি। গত মাসে আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ম্যানেজ করার জন্য পকেটে টাকা ভরে দেন। আমতলী ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্তকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ তার গুদামের না দাবি করে বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য একটি গ্রুপ এ কাজটি করেছে। মহাপরিচালক ওই ফুটেজ মিলিয়ে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, ওই ফুটেজ যদি আমার গুদামের হয়ে থাকে তাহলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হয় সেই শাস্তি মাথা পেতে নেব। তদন্ত কমিটির প্রধান পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্তের স্বার্থে আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, খাদ্য গুদামের ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমি যতদিন আছি ততদিন খাদ্য গুদামে কোন অনিয়ম হতে দেয়া হবে না। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমতলী খাদ্যগুদামে অনিয়মের খবর পেয়ে পরিদর্শনে এসেছি। অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে চাল চুরির ঘটনা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ খাদ্য বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হবে। খাদ্য বিভাগে কোন অনিয়ম চলবে না। যে কোন মূল্যে তার প্রতিহত করা হবে।
×